ভাবসম্প্রসারণ
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়,
পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।
মূলভাবঃ ক্ষুধার অনুভূতি সবসময় তীব্র এবং প্রচণ্ড। এটি না কেবল একটি পাচ্ছা, বরং একটি নিশ্চিতভাবে মানুষের জীবনের কেন্দ্রীয় অংশ। দারিদ্র্যের অভিশাপ এটির মাধ্যমে মানুষের হৃদয় ও দৃষ্টিকে রূপ-সৌন্দর্য ও প্রেমের নান্দনিক বোধ থেকে বিমুখ করে দেয়। এটাই কারণে ক্ষুধার নিবৃত্তি মানুষের জীবনে অত্যাবশ্যক।`
সম্প্রসারিত ভাবঃ মানুষ স্বাভাবিকভাবেই সৌন্দর্যপ্রিয়, রূপপিয়াসী, কল্পনাবিলাসী। প্রকৃতিজগতের অনেক কিছু— রুপালি নদী, বিল, নীল আকাশ, সাদা মেঘের ভেলা, সবুজ বৃক্ষলতা, নানা বর্ণের ফুল এবং ফল, মায়াবী জ্যোৎস্না— মনকে আকর্ষণ করে দেয়। এগুলির মধ্যে কল্পনার জগতে মন হারিয়ে যায় অপরিসীম। এ সব সৃজনশীল মহাকাব্যের প্রতি তাদের অধীনে প্রবাহিত হয়। রঙ, রূপ এবং কল্পনার খেলার বৈচিত্র্য মনকে আন্দোলিত করে, তাদের জীবনের সাধারণ মাধ্যমও হল ক্ষুধার নিবৃত্তি।
ক্ষুধার তীব্রতায় পেট ভরা থাকলে চাঁদের হাসি আনন্দের বাঁধ ভেঙে দেয়, ফুলের সুবাস মাতোয়ারা করে হৃদয়, রঙের খেলা নানা রঙে রাঙিয়ে তোলে অন্তর। পেটে খাবার না থাকলে পৃথিবীটাকে মনে হয় নিরস-গদ্যময়। ক্ষুধার তীব্রতায় যে কোনো গোলাকার জিনিসকে মনে হয় ঝলসানো রুটি। এটি ক্ষুধার অন্নের মূল লক্ষ্য কেন্দ্র করে তৈরি হয়, এটির মাধ্যমে মানুষ পূর্ণিমার চাঁদের মতো ঝলসানো রুটি অনুভব করে। চাঁদের সৌন্দর্যে ক্ষুধিত কিছুমাত্র আকর্ষণ বোধ করে না, তার জীবনের সব সুন্দর ও রম্য তত্ত্ব হারিয়ে যায় তার খুঁটির উপরের একটি তামাশা হয়। সময়ের সাথে তার জীবন কোন সাধারণ হতে শুরু করে, এটি তার পূর্ণ গান সুর তালে হারানো বিরক্তি হয়।
যেখানে সভ্যতার উৎকর্ষের এ যুগেও পৃথিবীর চল্লিশ শতাংশ মানুষ এখনও মানবেতর জীবন যাপন করে, সেখানে অভাব-অনটন, ক্ষুধা-তৃষ্ণা সমস্যার পাহাড়ে তাদের চারপাশে ঘিরে রয়েছে। এটি একটি দুর্ভিক্ষ যা ক্ষুধার্ত মানুষের মুখ থেকে সৃষ্টি হয়, তারা হাসির অস্তর বাদ দেয়ে, মনে আনন্দ-ফুর্তির অদৃশ্য দীর্ঘারতি হয় এবং ধনতান্ত্রিক সভ্যতার তৈরি করা কৃত্রিম সংকট মানুষের জীবনধারা থেকে সৃষ্টি হয়।
মন্তব্যঃ মানব জীবনের প্রথম চাহিদা হল ক্ষুধার নিবৃত্তি। এটি মানুষের বিভিন্ন প্রাকৃতিক এবং সামাজিক প্রতিক্রিয়া যেমন রুচিপ্রিয়তা, রূপপিয়াসতা এবং অনুপ্রেরণা ধ্বংস করে দেয়। দারিদ্র্যের পূর্ণ প্রভাব মানুষের হৃদয় ও দৃষ্টিকে অধিকতম মাপে ক্ষুধার অনুভূতি থেকে বিরক্ত করে। এটি মানব সভ্যতার উন্নতির জন্য অত্যাবশ্যক।