ষষ্ঠ শ্রেণি, বাংলা ১ম পত্র,নীলনদ আর পিরামিডের দেশ, সৃজনশীল, প্রশ্ন উত্তর

নীলনদ আর পিরামিডের দেশ
সৈয়দ মুজতবা আলী

সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর 

প্রশ্ন- ১ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি 
আমরা কয়েকজন বন্ধু গ্রীষ্মের ছুটিতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। উদ্দেশ্য, দুচোখ ভরে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আবার সেখান থেকে কক্সবাজার গেলাম, সেখান থেকে সেন্ট মার্টিন, কী অপূর্ব দৃশ্য আর সৌন্দর্যের মাখামাখি। কোরাল পাথরের ছড়াছড়ি সেন্ট মার্টিন-এর এক বিশাল অহঙ্কার। এছাড়াও আছে নীল পানির এক রাজপুরী। সেখানে কচ্ছপেরা অবাধে ঘুরে বেড়ায়, ডিম পাড়ে; কাঁকড়ারা দল বেঁধে আলপনা আঁকে। সেন্ট মার্টিনে না গেলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি অদেখাই থেকে যেত।


ক. ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’-কার লেখা? 
খ. উটের চোখগুলো রাতের বেলা সবুজ দেখাচ্ছিল কেন? 
গ. ভ্রমণকারীদের যাত্রাপথের সাথে লেখকের মিশর ভ্রমণের কী মিল খুঁজে পাওয়া যায়? বর্ণনা কর। 
ঘ. ‘সেন্ট মার্টিন না গেলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি অদেখাই থেকে যেত’- এই বক্তব্য অনুসরণে নীলনদের সৌন্দর্যের সাদৃশ্য দেখাও। 

উত্তরঃ
ক. ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’- সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা।
খ. রাতের বেলা উটের চোখের উপর মোটরের হেডলাইট পড়াতে চোখগুলো সবুজ দেখাচ্ছিল। লেখক যখন মোটর নিয়ে রাতে মরুভূমির উপর দিয়ে চলছিলেন তখন মোটরের হেডলাইটের আলো উটের চোখগুলোর উপর পড়ে। এতে সেগুলো জ্বলজ্বল করে ওঠে। তখন সবুজ দেখায়।
গ. অপূর্ব সৌন্দর্যের লীলাভূমি দেখার ক্ষেত্রে উদ্দীপকের ভ্রমণকারীদের যাত্রাপথের সাথে লেখকের মিশর ভ্রমণের ব্যাপক মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

মিশরের নানারূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ লেখক ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ নামক ভ্রমণ কাহিনিতে তার পরিচয় তুলে ধরেছেন। নীলনদের রমণীয় সৌন্দর্যে লেখকের চোখ আটকে গেল। চাঁদের আলোয় দেখতে পেলেন মহাজনি নৌকা যেন পেট ফুলিয়ে চলছে। নীলের জল থেকে হঠাৎ চোখ পড়ল পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো কীর্তিস্তম্ভ পিরামিডের দিকে। এছাড়া মসজিদের মিনার কিংবা মসজিদের ভেতরের কারুকাজ দেখে লেখক যে অভিভূত হয়েছেন তা তাঁর বর্ণনাতে স্পষ্ট।

উদ্দীপকে উল্লিখিত হয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিনের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। সেন্ট মার্টিনে কোরাল পাথরের সমাহার আর এর চতুর্পাশ পরিবেষ্টিত নীল পানি একে পরিণত করেছে এক রাজপুরীতে। কচ্ছপের অবাধ বিচরণ আর কাঁকড়াদের দল বেঁধে চলা কার না মন কাড়ে। কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিনে কয়েকজন বন্ধুর ভ্রমণের সময় তারা তাদের যাত্রাপথে একের পর এক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছে। ঠিক একইভাবে ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’-এর ভ্রমণ কাহিনিতেও তেমনি লেখক মিশরের নানা সৌন্দর্যে মুগ্ধ ও অভিভূত হয়েছেন। নীলনদের নীল পানি আর সেন্ট মার্টিনের নীল পানি অনুরূপ হয়ে ধরা দিয়েছে।

ঘ.  ‘সেন্ট মার্টিন না গেলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি অদেখাই থেকে যেত’, উক্তিটি ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ -এর লেখকের অভিব্যক্তির অনুরূপ।

‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’-ভ্রমণ কাহিনিতে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী নীলনদের এক অপরূপ বর্ণনা দিয়েছেন। চাঁদের আলোতে লেখক দেখতে পেয়েছেন নীলনদের রমণীয় দৃশ্য। নীলের উপর দিয়ে ছুটে চলা মহাজনি নৌকা, যার তেকোণা পাল যেন পেটুক ছেলের মতো পেট ফুলিয়ে আছে। একটুখানি জোরে হাওয়া বইলেই যেন তা ডিগবাজি খেয়ে নীলের অতল জলে হারিয়ে যাবে। নীলের জল দিয়েই হয় চাষাবাদ আবার এই জলপথেই মিশরে সর্বত্র ফসলাদি পৌঁছে দেওয়া হয়।

উদ্দীপকের সেন্ট মার্টিন যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। অপূর্ব দৃশ্য আর সৌন্দর্যে চারপাশ মাখামাখি। সেন্ট মার্টিনের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কোরাল পাথর। নীল পানি বেষ্টিত দ্বীপটি এক রাজপুরি। সেন্ট মার্টিনে অবাধে ঘুরে বেড়ায় কচ্ছপেরা। কাঁকড়ারা দলবেঁধে বিচরণ করে মাটিতে আলপনা আঁকে। সমুদ্রের বিশালতার মাঝে এমন হৃদয়কাড়া স্নিগ্ধ অপরূপ সৌন্দর্যে দেহ-মন-প্রাণ প্রশান্ত হয়ে যায়।

নীলনদ আর সেন্ট মার্টিনের প্রাকৃতিক রূপ, সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের মনে বিস্ময় সৃষ্টি না করে পারে না। নীলনদ আর সেন্ট মার্টিনের সৌন্দর্য প্রকৃতি প্রদত্ত। এর নান্দনিকতার কোনো সীমা পরিসীমা নেই। নীলনদের রূপ-সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন লেখক। আর সেন্ট মার্টিন ভ্রমণকারীরা তো বলেই দিয়েছে সেন্ট মার্টিন না গেলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি অদেখাই থেকে যেত। উভয়ের সৌন্দর্য অবলোকন করার বিষয়টি তাই সাদৃশ্যপূর্ণ।

প্রশ্ন- ২ ভ্রমণ ও জ্ঞানার্জন 
কামাল তার বন্ধুদের নিয়ে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। পদ্মা ও যমুনার রুপালি স্রোত পাড়ি দিয়ে তারা এক সময় ঢাকায় পৌঁছায়। সেখানে তারা প্রথমেই যায় লালবাগের দুর্গে। এ যেন ফেলে আসা মুঘল সাম্রাজ্যের একটুকরো রাজত্ব। মুঘল সম্রাটদের স্থাপত্য ঐশ্বর্য এখানে লুকিয়ে আছে। এখানকার দরবার হল, পরীবিবির মাজার ও শাহজাদা আজমের মসজিদ দেখে তারা ছবি তুলতে লাগলো। তারা শেষ পর্যন্ত স্বীকার করলো এখানে না আসলে অতীত ইতিহাস ও সম্রাটদের হারিয়ে যেতে বসা বিশাল কীর্তি অজানাই থেকে যেত।

ক. ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’-এর লেখকের জন্মস্থান কোথায়?
খ. এই নীলের জল দিয়ে এ দেশের চাষ হয়- কেন?
গ. ‘উদ্দীপকের কামাল ও তার বন্ধুদের ভ্রমণ আর লেখকের ভ্রমণের উদ্দেশ্য একই’- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘লালবাগ দুর্গের স্থাপত্য শৈলীর সাথে পিরামিডের স্থাপত্য শৈলীর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।’ মতটি বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ
ক) ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’-এর লেখকের জন্মস্থান আসামের করিমগঞ্জে।
খ) নীলনদের তীরে মিশর অবস্থিত হওয়ায় নীলের জল দিয়েই এ অঞ্চলের চাষাবাদ হয়। নীলনদ মিশরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী। মিশরীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল নীলনদকে কেন্দ্র করে। নীলনদের পানি গোটা দেশে ছড়িয়ে দিয়ে গোটা অঞ্চলের চাষাবাদ করা হয়। মিশরের কৃষিক্ষেত্রে বিশাল অবদান এই নদের। এ কারণেই বলা হয় মিশর নীলনদের দান। কারণ নীলের পানি দিয়েই এদেশের যাবতীয় চাষ হয়।

গ) ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে উদ্দীপকের কামাল ও তার বন্ধুদের ভ্রমণ আর লেখকের ভ্রমণের উদ্দেশ্য একই। নীলনদ আর পিরামিডের দেশ রচনার লেখক পৃথিবীর রূপ-রস সৌন্দর্যকে স্বচক্ষে দেখতে পেয়েছেন। তাই তিনি বিভিন্ন দেশের পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। মরুভূমির দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েছেন। কায়রো নগরীর জনজীবন, আচার, অভ্যাস, খাবার-দাবার ইত্যাদির সাথে পরিচিত হয়েছেন। নীলনদের বুকে ভাসমান নৌকা, পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য পিরামিড, মসজিদের মিনার ও কারুকাজ সবকিছুকেই গভীর আন্তরিকতা দিয়ে প্রত্যক্ষ করেছেন। অজানাকে জানার দুর্নিবার আকাক্সক্ষা ছিল তার সহজাত বৈশিষ্ট্য।

উদ্দীপকের কামাল ও তার বন্ধুরা অজানাকে জানার আকাক্সক্ষা নিয়েই রাজধানী ঢাকার লালবাগ দুর্গে ভ্রমণ করতে আসে। মুঘল সাম্রাজ্যের স্থাপত্য ঐশ্বর্য দরবার হল, পরীবিবির মাজার, শাহজাদা আজমের মসজিদ ইত্যাদি পরিদর্শনকালে তারা প্রাচীন কীর্তিসমূহ স্বচক্ষে দেখে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভের চেষ্টা করে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উদ্দীপকের কামাল ও তার বন্ধুদের ভ্রমণ আর লেখকের ভ্রমণের উদ্দেশ্য একই।

ঘ)  উদ্দীপকের দুর্গের স্থাপত্যশৈলীর সাথে ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ রচনায় পিরামিডের স্থাপত্যশৈলীর যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ রচনায় লেখক পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি পিরামিড সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিয়েছেন। এই পিরামিডের নির্মাণশৈলী অপূর্ব। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো কীর্তিস্তম্ভ এই পিরামিড। এটি নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। গিজে অঞ্চলের পিরামিডই পৃথিবী বিখ্যাত। প্রায় পাঁচশ ফুট উঁচু এই পিরামিড। সামনা সামনি দেখেও এর উচ্চতা সম্পর্কে ধারণা করা যায় না। বহুদূরে গিয়েও দেখা যায় পিরামিড তিনটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

উদ্দীপকের কামাল ও তার বন্ধুরা পরিদর্শন করেছিল লালবাগ দুর্গ। এটি ছিল ফেলে আসা মুঘল সাম্রাজ্যের একটুকরো রাজত্ব। মুঘল সম্রাটদের স্থাপত্য ঐশ্বর্যের নিদর্শন দরবার হল, পরীবিবির মাজার ও শাহজাদা আজমের মসজিদ ইত্যাদি। এসব নিদর্শন তাদের প্রাচীন কীর্তির কথাই মনে করিয়ে দেয়। পুরো দুর্গটি ঘুরে দেখলে বোঝা যায় এটি কত দীর্ঘ সময় ধরে নির্মাণ করা হয়েছে।

নীলনদ আর পিরামিডের দেশ রচনায় বলা হয়েছে। অর্থাৎ প্রাচীন মিশরীয় ফারাও সম্প্রদায় তাদের সমৃদ্ধির নিদর্শন হিসেবে নির্মাণ করেছিলেন পিরামিড। যেটা বিশ্বের আশ্চর্য স্থাপত্য। আর উদ্দীপকেও লালবাগ দুর্গের মুঘল আমলের স্থাপত্য নিদর্শনের অপূর্ব নির্মাণশৈলী অনুধাবন করা যায়। তাই লালবাগের স্থাপত্যশৈলীর সাথে পিরামিডের স্থাপত্যশৈলীর যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়।


অতিরিক্ত সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন- ১ ভ্রমণ জ্ঞানের আধার 
রাসেল তার বন্ধু পান্নাকে নিয়ে বান্দরবান থেকে থানচি পর্যটন এলাকা দেখার জন্য রওনা হলো। আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু পাহাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে তারা সন্ধ্যার দিকে থানচি পৌঁছল। পথে তাঁরা স্বর্ণমন্দির, পাহাড়ি ঝরনা, নীলগিরি, নীলাচল ও পাহাড়ি পথের নৈসর্গিক দৃশ্য অবলোকন করল। থানচিতে স্বচ্ছ জলের নদী, ঝরনা, নদীতে ছোটবড় পাথর ও নদীর দৃশ্যাবলি দেখে তারা মুগ্ধ হয়। তারা ভাবল পাহাড়ি পথে ভ্রমণ একটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।

ক. পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম পিরামিড কোথায় অবস্থিত?
খ. কায়রোকে নিশাচর শহর বলা হয়েছে কেন?
গ. উদ্দীপকের আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি পথের সাথে ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ রচনার সাদৃশ্যপূর্ণ অংশ কোনটি- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘ভ্রমণপিপাসুদের হৃদয় জয় করার জন্য মিশর ও বান্দরবানের থানচি উভয় স্থানই সমান উপযুক্ত’ বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ
ক পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম পিরামিড মিশরের গিজে অঞ্চলে অবস্থিত।

খ অধিক রাতে রেস্তোরাঁগুলোতে জনসমাগম দেখে লেখক কায়রোকে নিশাচর শহর বলে অভিহিত করেছেন। কায়রো শহরে ঢুকে রাত ১১টায় ও লেখক দেখলেন রেস্তোরাঁ- ক্যাফেগুলো খদ্দেরে খদ্দেরে গিসগিস করছে। কায়রোর রান্নার সুগন্ধে তখনো রাস্তা ম-ম করছে। শহরটা মনে হয় রাতে ঘুমায় না, জেগে থাকে। তাই লেখক কায়রোকে নিশাচর শহর বলেছেন।

গ উদ্দীপকের আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি পথের সাথে ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ রচনায় মরুপথের রাস্তা সাদৃশ্যপূর্ণ।

‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ রচনায় লেখক দুর্গম মরুভূমির পথের একটি বর্ণনা উপস্থাপন করেছেন। লেখক একরূপ ভুতুড়ে পরিবেশে মরুভূমির পথ অতিক্রম করছিলেন। তাকে বহনকারী মোটরগাড়ি মাঝে মাঝে উঁচুতে উঠছিল আবার নিচে নামছিল। এছাড়া হেডলাইটের আলোতে উটের চোখের সবুজ রঙ দেখে লেখক ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। লেখকের তখন মনে পড়েছিল মরুভূমিতে তৃষ্ণায় বেদুইন মারা যায়। আর বেদুইনরা প্রিয় উটের গলা কেটে তার জমানো জল খেয়ে প্রাণ বাঁচায়। লেখক আশঙ্কা করছিলেন যদি মোটর ভেঙে যায় কিংবা এ পথে যদি আর কেউ না আসে ইত্যাদি।

উদ্দীপকে বলা হয়েছে রাসেল তার বন্ধু পান্নাকে নিয়ে বান্দরবান থেকে থানচি পর্যটন এলাকা দেখার জন্য রওনা হলো। তারা আঁকাবাঁকা উঁচু নিচু পাহাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে থানচি পৌঁছল। যদিও এলাকাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ছিল তথাপি রাস্তাটি বিপজ্জনক। কারণ পাহাড়ি এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থেকেই যায়।

‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’-রচনায় দুর্গম মরুপথের বর্ণনাও দিয়েছেন লেখক। জনমানবহীন মরুভূমি ভ্রমণে কার না ভয় ও আতঙ্ক জাগে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের পাহাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ পথের সাথে রচনায় মরু পথের ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। 

ঘ বান্দরবানের থানচি ও মিশরের প্রাকৃতিক ও স্থাপত্য সৌন্দর্যই প্রমাণ করে উভয় স্থানই ভ্রমণপিপাসুদের হৃদয় জয় করার উপযুক্ত স্থান।

‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’-রচনায় লেখক বর্ণনা করেছেন মিশর ও কায়রোর। প্রাচীন সভ্যতার দেশ মিশর। মরুভূমি ঘেরা ঐতিহাসিক শহর কায়রো। কায়রোর অদূরে গিজেয় অবস্থিত পিরামিড ও কারুকাজ খচিত মসজিদ দেখার জন্য সারা বিশ্বের পর্যটকরা ছুটে যায় কায়রোর অভিমুখে। রাতের বেলা আলোয় আলোয় ভরে যায় কায়রো শহর। রেস্তোরাঁগুলো থেকে ভেসে আসে নানা রকম খাবারের সুগন্ধ।

উদ্দীপকে উল্লেখ করা হয়েছে বান্দরবানের থানচি পর্যটন এলাকার নৈসর্গিক দৃশ্যাবলি। আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে রাসেল ও তার বন্ধুরা পৌঁছে যায় থানচি। স্বর্ণমন্দির পাহাড়ি ঝরনা, নীলগিরি, নীলাচল ও পাহাড়ি পথের সৌন্দর্য অবলোকন করে তারা। স্বচ্ছ জলের নদী, ঝরনা, নদীতে ছোট বড় পাথর ও নদীর দৃশ্যাবলি দেখে তারা মুগ্ধ হয়। রোমাঞ্চকর এই ভ্রমণ তাদের জন্য ছিল খুবই উপভোগ্য।

মিশরের পিরামিড, মরুভূমি ঘেরা কায়রোর আলো ঝলমলে ব্যস্ত নগরী, নীলনদ, কারুকাজখচিত মসজিদ ও মিনার প্রভৃতি নিঃসন্দেহে ভ্রমণপিপাসু মানুষের দেখার পিপাসা মেটায়। আবার থানচির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও পর্যটকদের মন কাড়ে। জ্ঞান অর্জনের প্রথম উৎস বই দ্বিতীয় উৎস হচ্ছে ভ্রমণ। তাই ভ্রমণপ্রিয় মানুষের কাছে উভয় স্থান সমান উপযুক্ত।

প্রশ্ন- ২ দেশীয় খাবার ভোজনের প্রতি দুর্বলতা 
ব্যবসায়ী মান্নান সাহেব মেয়ের বাসায় বেড়াতে ঢাকায় এলেন। দুই নাতি-নাতনি বায়না ধরল নানা ভাই, আমাদের চায়নিজ খাওয়াতে হবে। সন্ধ্যার পর তিনি তার মেয়ে নাতি-নাতনিসহ বিজয়নগরের সুং-গার্ডেনে এলেন। মান্নান সাহেব বললেন, তোমরা তোমাদের পছন্দের খাবার অর্ডার দাও আর আমি সাদা ভাত ইলিশ, ডাল, বেগুন ভাজি এসব খাব। মেয়ে তাহমিনা বললেন বাবা এখানে ওসব পাওয়া যাবে না। আমরা সবাই একই খাবার খাব। মান্নান সাহেব বুঝলেন এবং রাজি হলেন।

ক. কাদের সর্বাঙ্গ দিয়ে যেন তেল ঝরছে?
খ. ফারাওদের মৃত্যুর পর দেহকে ‘মমি’ বানিয়ে রাখত কেন?
গ. উদ্দীপক ও নীলনদ আর পিরামিডের দেশ রচনার কোন দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপক ও ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ -রচনার আলোকে ‘ভাতে-মাছে বাঙালি’ কথাটির যৌক্তিকতা নিরূপণ কর।

উত্তরঃ
ক নিগ্রোদের সর্বাঙ্গ দিয়ে যেন তেল ঝরছে।
খ পরকালে অনন্ত জীবন লাভের জন্য ফারাওরা তাদের মৃত্যুর পর মৃতদেহকে মমি বানিয়ে রাখত। প্রাচীন মিশরীয় ফারাও (সম্রাটরা) বিশ্বাস করতেন তাদের শরীর যদি মৃত্যুর পর পচে যায় কিংবা কোনো প্রকারের আঘাতে ক্ষত হয় তবে তাঁরা পরকালে অনন্ত জীবন পাবেন না। তাই মৃত্যুর পর দেহকে ‘মমি’ বানিয়ে সেটাকে একটা শক্ত পিরামিডের ভিতর সংরক্ষণ করত।
গ দেশীয় খাবারের প্রতি দুর্বলতার দিকটি উদ্দীপক ও ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ রচনায় সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ -রচনায় লেখক কায়রোর জনাকীর্ণ হোটেলগুলোর একটিতে ঢুকলেন সঙ্গীদের নিয়ে। সবাই প্রচণ্ড ক্ষুধায় কাতর। রান্নার খুশবুতে চারিদিক ম-ম করছে। লেখক দেখলেন বারকোশে মুরগি মুসল্লম, শিক কাবাব, শামি কাবাব, আর পাঁচ-ছয় অজানা জিনিস। লেখকের প্রাণ তখন কাঁদছিল চারটি আতপ চাল, উচ্ছে ভাজা, সোনামুগের ডাল, পটলভাজা আর মাছের ঝোলের জন্য। অথবা শুধু ঝোল-ভাত। কিন্তু দেশের বাইরে ওসব পাওয়া যায় না বলে নিবৃত হলেন।

উদ্দীপকে মান্নান সাহেব একজন মফস্বলের ব্যবসায়ী। নাতি-নাতনিদের আবদারে তিনি চায়নিজ রেস্তোরাঁয় গেলেন খাওয়া-দাওয়া করার জন্য। তার মন চাইছিল দেশীয় খাবার খেতে। সাদা ভাত, ইলিশ খেতে চাইলেও ওখানে এসবের আয়োজন নেই তাই বাধ্য হয়ে সম্মত হলেন সবার সাথে একই খাবার খেতে। ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ -রচনার লেখক অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিদেশ বিভুঁইয়ের খাবার গ্রহণ করেছেন। তার মন দেশীয় খাবার খেতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল। তাই দেখা যায় দেশীয় খাবারের প্রতি দুর্বলতার দিকটি উদ্দীপক ও ‘নীলনদ ও পিরামিডের দেশ’ রচনায় সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ উদ্দীপক ও ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ রচনায় ‘ভাতে মাছে বাঙালি’ কথাটি সত্য হয়ে উঠেছে। উভয় ক্ষেত্রেই আমরা এর বাস্তবতা দেখতে পাই।

‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’-রচনাটি লেখকের ব্যক্তিগত ভ্রমণ কাহিনি ‘জলে ডাঙ্গায়’ অবলম্বনে সংকলিত। রচনায় তিনি নানা বিষয়ের অবতারণা করেছেন। লেখক কায়রো পৌঁছে খাবার খেতে ঢোকেন এক রেস্তোরাঁয়। সেখানে তিনি দেখতে পান মুরগির মুসল্লম, শিক কাবাব, সামি কাবাব ইত্যাদি। কিন্তু লেখকের প্রাণ কাঁদছিল চারটি আতপ চাল, উচ্ছেভাজা, সোনামুগের ডাল, পটলভাজা মাছের ঝোলের জন্য। নিতান্ত বাধ্য হয়ে লেখককে ঐ খাবারই খেতে হয়েছিল।

উদ্দীপকের ব্যবসায়ী মান্নান সাহেব তার নাতি-নাতনিদের অনুরোধে গিয়েছিলেন চায়নিজ খেতে। তিনি সবাইকে চায়নিজ খেতে বলে নিজে ইলিশ, ডাল, বেগুন ভাজি ইত্যাদি খাবার খাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করলেন। তার মেয়ে তাহমিনা যখন বললেন এখানে অন্য খাবারে ব্যবস্থা নেই। তখন তিনি বাধ্য হয়ে সকলের সাথে একই খাবার গ্রহণ করলেন।

উদ্দীপক এবং ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ রচনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মান্নান সাহেব যে দেশি খাবারে অভ্যস্ত সেই খাবারই রেস্তোরাঁয় খেতে চাইলেন। অন্যদিকে লেখক গভীর আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেছেন দেশিয় খাবার খেতে। তাই উভয় ক্ষেত্রে বাঙালি প্রবাদ ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ কথাটি সার্থকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রশ্ন- ৩ অনিন্দ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য 
পানি পাথর আর মেঘ-পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় বিছনাকান্দিতে পর্যটকদের ভিড় -প্রথম আলো।

ক. পিরামিড কী দিয়ে তৈরি?
খ. সমঝদার আর ঘরছাড়া মানুষ কেন মিশরে ছুটে যায়?
গ. উদ্দীপকের দৃশ্যকল্পের সাথে ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’-রচনায় কোন নান্দনিক দৃশ্য সাদৃশ্যপূর্ণ -ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘উদ্দীপকের মতোই পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয় মিশর’- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

ক পিরামিড শক্ত পাথরের চাঁই দিয়ে তৈরি।
খ স্থাপত্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সমঝদার আর ঘরছাড়া মানুষ মিশরে ছুটে যায়।

প্রাচীন সভ্যতার দেশ মিশর। এদেশে গড়ে উঠেছে বিশ্ব বিখ্যাত সভ্যতার সংস্কৃতি। প্রাকৃতিক আর স্থাপত্য নিদর্শনে ভরপুর এই দেশ। মিশরের ঐতিহাসিক পিরামিড নীলনদ, ভুবন বিখ্যাত কারুকাজখচিত মসজিদ ও মিনার- এসবের টানেই সমঝদার আর ঘরছাড়া মানুষ ছুটে যায় মিশর।

গ উদ্দীপকের দৃশ্যকল্পটি ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’- রচনার নীলনদের সাথে নান্দনিকতার দিক দিয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ।

চাঁদের আলোতে লেখক দেখেছেন, নীলের উপর দিয়ে চলেছে মাঝারি ধরনের খোলা মহাজনি নৌকা- হাওয়াতে কাত হয়ে তেকোণা পাল পেটুক ছেলের মতো পেট ফুলিয়ে চলছে। লেখক আকাক্সক্ষা করছিলেন, আর সামান্য একটুখানি জোর হাওয়া বইলেই, হয় পালটা এক ঝটকায় চৌচির হয়ে যাবে, নয়তো নৌকাটা পিছনে ধাক্কা খেয়ে গোটা আড়াই ডিগবাজি খেয়ে নীলের অতলে তলিয়ে যাবে। নাইল নদীর জল দিয়ে হয় সেদেশের চাষাবাদ আবার কৃষিপণ্য নীলনদের মধ্যে দিয়েই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যায়।

উদ্দীপকে আমরা সিলেটের গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি এলাকায় নান্দনিক প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে অবগত হই। সেখানে পানি পাথর আর মেঘ-পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে জড় হয়েছে শত শত মানুষ। পর্যটকরা প্রকৃতির একান্ত কাছে এসে প্রকৃতির রূপ-সৌন্দর্য উপভোগ করছে। পানি, পাথর, মেঘ, পাহাড় কার মনে না অনুভূতি জাগায়। নান্দনিক প্রকৃতির সাথে তুলনা করা যায় নীলনদের সৌন্দর্যকে। নীলের নীল জল চিত্তকে দান করে চরম প্রশান্তি। পালতোলা নৌকাগুলো আমাদের নিয়ে যায় এক কল্পনার রাজ্যে। যা দেখে আমরা হই বিমুগ্ধ বিমোহিত। তাই এ কথা বলা যায় দৃশ্যকল্পের সাথে নীলনদের সাথে সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ প্রাকৃতিক ও স্থাপত্য নিদর্শন দেখার জন্য উদ্দীপকের মতোই পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয় মিশর।

প্রাচীন সভ্যতার দেশ মিশরের প্রাকৃতিক ও স্থাপত্য নিদর্শন পৃথিবী বিখ্যাত। মরুভূমি ঘেরা দেশটির নীলনদ, ব্যস্ত শহর, সপ্তাশ্চর্য পিরামিড, সুরম্য মসজিদ ইত্যাদি দেশটিকে এক স্বপ্নপুরীতে পরিণত করেছে। যে কারণে লেখক নিজে দেশটির অলিগলিতে ঘুরে বেড়িয়েছেন। চোখের সামনে হঠাৎ সুউচ্চ পিরামিড দেখে লেখক অভিভূত ও আনন্দিত হয়েছেন।

উদ্দীপকের দৃশ্যকল্পটি এক অভাবনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। সেখানে স্বচ্ছ পানি ও পাথর মাড়িয়ে পর্যটকরা সৌন্দর্য উপভোগ করেন। পাশে সুউচ্চ পাহাড়, আকাশের মেঘ এক অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্যের অবতারণা করে। সিলেটের গোয়াইনঘাট এলাকায় এ দৃশ্য দেখার জন্য দেশ বিদেশের মানুষ ভিড় জমায়।

কাজেই উদ্দীপক এবং ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ রচনায় আমরা দেখি উভয় স্থানে পর্যটক আকর্ষণের নানা উপাদান রয়েছে। এমন নৈসর্গিক দৃশ্য আর ইতিহাসের পুরনো স্থাপত্য শিল্পকর্ম না দেখে পারা যায় না। সঙ্গত কারণেই উভয় স্থানের রূপ-সৌন্দর্যের মাঝে পর্যটকরা সেখানে ভিড় করে। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সন্ধানে প্রতিদিন মানুষ মিশরে যায়। সেখানকার সংস্কৃতি আর সৌন্দর্যে মানুষ মুগ্ধ হয়ে যায়। ফলে সবসময় মিশর পর্যটকে মুখরিত থাকে। এ যেন পৃথিবীর পাঠশালা।

প্রশ্ন- ৪ সৌন্দর্য উপভোগ ও হৃদয়ের প্রশান্তি 
স্কুল ছুটি থাকায় নবনী তার পরিবারের সাথে ঘুরতে গেল কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে। দিনের রৌদ্রোজ্জ্বল আলো ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে শুরু করেছে। আশপাশের পাহাড় ঘুরে দেখার পর তারা রওনা দিল সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখার আশায়। সৈকতে দাঁড়িয়ে তারা অপেক্ষা করে কাক্সিক্ষত সেই মাহেন্দ্রক্ষণের। এক রঙিন থালার মতো ওঠে বিশাল জলরাশি আর সূর্য রশ্মি। শত শত মানুষ কিন্তু কোথাও কোনো সাড়া শব্দ নেই। সবার সামনে ঘটল সূর্যাস্তের দৃশ্য। সূর্যটা যখন অস্ত যাচ্ছে তখন মনে হলো তা সমুদ্রের জলে ডুব দিচ্ছে। নিস্তেজ রক্তিম সূর্যটাকে তখন বিশাল দেখাচ্ছিল অনেক বড় কোনো থালার মতো। সূর্যের আলো ক্রমে নিভে গিয়ে দেখা দেয় শান্ত সন্ধ্যা।

ক. মিশরীয় রান্না ভারতীয় রান্নার কি?
খ. নিগ্রোরা দেখতে কেমন?
গ. নৈসর্গিক দৃশ্যের ক্ষেত্রে উদ্দীপকের সমুদ্রে সূর্যাস্তের সাথে ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ রচনার মরুভূমিতে সূর্যাস্তের সাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ. ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে’ এ উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ রচনায় কীভাবে সত্য হয়ে উঠেছে বিশ্লেষণ কর।

ক মিশরীয় রান্না ভারতীয় রান্নার মামাতো বোন।

খ নিগ্রোদের মাঝে আমরা দেখতে পাই অন্যরকম শারীরিক সৌন্দর্য। ভেড়ার লোমের মতো তাদের কোঁকড়া কালো চুল, লাল লাল পুরু দুখানা ঠোঁট, বোঁচা নাক, ঝিনুকের মতো দাঁত আর কালো চামড়ার কী অসীম সৌন্দর্য। তারা তেল মাখে না কিন্তু সারা শরীর দিয়ে যেন তেল ঝরে।

গ সমুদ্রে সূর্যাস্তের সাথে মরুভূমিতে সূর্যাস্তের সাদৃশ্য রয়েছে। উভয়ক্ষেত্রে অপার নৈসর্গিক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ রচনায় লেখক প্রাচীন সভ্যতার দেশ মিশরের অপরূপ সৌন্দর্যের বর্ণনা দিয়েছেন। রচনার শুরুতে লেখক উল্লেখ করেছেন। তাকে বহনকারী জাহাজ সন্ধ্যার দিকে সুয়েজ বন্দরে পৌঁছায়। সূর্য অস্ত গেল মিশরের মরুভূমির পিছনে। সোনালি বালিতে সূর্যরশ্মি প্রতিফলিত হয়ে সেটা আকাশের বুকে হানা দেয় এবং ক্ষণেক্ষণে সেখানকার রং বদলাতে থাকে। তার একটা রং ঠিক চেনা কোনো জিনিসের রং সেটা বুঝতে-না-বুঝতে সে রং বদলে গিয়ে অন্য জিনিসের রং ধরে ফেলে। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ঘন নীলাকাশ কেমন যেন সূর্যের লাল আর নীল মিলে বেগুনি রং ধারণ করে। ভূমধ্যসাগর থেকে একশ মাইল পেরিয়ে আসে সুমধুর ঠান্ডা হাওয়া।

উদ্দীপকে উল্লেখ করা হয়েছে, দিনের রৌদ্রোজ্জ্বল আলো সন্ধ্যার দিকে কীভাবে নিস্তেজ হয়ে পড়ে, আর বিশাল জলরাশির মাঝে সূর্যাস্তের মোহনীয় রূপের বর্ণনা। শত শত মানুষ সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করে সে দৃশ্য। কিছুক্ষণের জন্য নিস্তেজ হয়ে পড়ে চারপাশের পরিবেশ, কোথাও কোনো সাড়াশব্দ থাকে না। বিশাল আকারের সূর্যটা যেন সমুদ্রের জলে ডুব দিচ্ছে। তখন রঙিন খেলায় মেতে ওঠে বিশাল জলরাশি আর সূর্যরশ্মি। রূপে মানুষ মুগ্ধ না হয়ে পারে না। ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ রচনায় ও মরুভূমিতে সূর্যাস্ত তেমনি অনিন্দ্যসুন্দর পরিবেশের সৃষ্টি করে। তাই মরুভূমিতে সূর্যাস্ত আর সমুদ্রে সূর্যাস্তের মধ্যে নান্দনিকতার দিক দিয়ে সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে’ উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ উভয় ক্ষেত্রে সত্য হয়ে উঠেছে।

প্রাচীন ও ঐতিহাসিক নিদর্শনের দেশ মিশর। সৌন্দর্যপিপাসা আর নতুনকে জানার দুর্নিবার আকাক্সক্ষা লেখককে নিয়ে গিয়েছিল মিশরে। রচনায় তিনি সার্থকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন মিশরের মরুভূমিতে সূর্যাস্ত, উটের কাফেলা, নিশাচর কায়রো শহরের প্রাণচাঞ্চল্য, বিভিন্ন জাতির পরিচয়, নীলনদের অপরূপ বর্ণনা, ভুবন বিখ্যাত পিরামিড, কারুকাজখচিত মসজিদ ও মিনার। যা দেখতে হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসে।

উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে সূর্যাস্তের দৃশ্য। সমুদ্রের বিশাল জলরাশির বুকে কীভাবে সূর্য অস্ত যায় আর সেই দুর্লভ স্থানটিকে কেন্দ্র করে যে অভাবনীয় দৃশ্যের অবতারণা হয় তার বর্ণনা রয়েছে উদ্দীপকে। এমন দৃশ্য নিঃসন্দেহে মানুষের মনকে আলোড়িত করে। প্রকৃতির এমন দৃশ্যে মানুষ মুগ্ধ হয়। যে কারণে মানুষ সুযোগ পেলেই ছুটে যায় প্রকৃতির কাছে। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য সুধা পান করে মানুষ নিজেদের চিত্তকে বিমোহিত করে তোলে।

প্রকৃতির রূপ সৌন্দর্যপিপাসু মানুষে বার বার সেই সৌন্দর্যের কাছে ফিরে যেতে চায়। উদ্দীপক এবং আলোচ্য রচনায় আমরা সেই প্রয়াসই লক্ষ করি। সৃষ্টিকর্তা এই পৃথিবীকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সাজিয়েছেন। প্রকৃতির সন্তান হিসেবে মানুষ তার স্বাদ আস্বাদন করে। মানুষ তখন এই পৃথিবীকে ভালোবেসে ফেলে। পৃথিবী ছেড়ে আর চলে যেতে চায় না। প্রকৃতির রূপ-রস-সৌন্দর্যের মাঝে সে বেঁচে থাকতে চায়। মনের অজান্তেই মানুষের কণ্ঠ থেকে তখন উচ্চারিত হয়- মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে।

অনুশীলনের জন্য সৃজনশীল প্রশ্নব্যাংক (উত্তরসংকেতসহ)
প্রশ্ন- ৫ ভ্রমণের মধ্য দিয়ে জ্ঞানার্জন 
যুগ যুগ ধরে ভ্রমণপিপাসু মন একস্থান থেকে অন্যস্থানে ভ্রমণ করছে। এ কারণ ভ্রমণ মানুষের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে। ভ্রমণ করে মানুষ যেমন আনন্দ পায়, তেমনি জ্ঞান অর্জন করে। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন নতুন মানুষ, পরিবেশ ও ইতিহাসের সাথে যে পরিচয় ঘটে, বই পড়ে বা অন্য কোনো মাধ্যমে তা হয় না। ভ্রমণ মানুষকে বাস্তবজীবনের সাথে আন্তরিক সম্বন্ধ পাতিয়ে দেয়।

ক. কোন অঞ্চলে তিনটি পিরামিড অবস্থিত?
খ. “তরল অন্ধকার সরল আলোর জন্য ক্রমেই জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে”- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটি তোমার পাঠ্যপুস্তকের কোন রচনার বিষয় ধারণ করে- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘উদ্দীপক ও তোমার পাঠ্যবইয়ের রচনা উভয় ক্ষেত্রেই ভ্রমণ ও আনন্দ প্রাধান্য পেয়েছে’- মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।

ক কায়রোর গিজ অঞ্চলে তিনটি পিরামিড অবস্থিত।
খ রাত যখন ভোর হয় তখন ধীরে ধীরে আঁধার কেটে যায়। চলে আসে আলো। আঁধার সবসময়ই গাঢ়। তাই আঁধার কেটে যাওয়াকে তরল অন্ধকার হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আর আলো সবসময় সোজা পথে চলে। সরল সহজ আলোকে তাই পথ ছেড়ে দেয়। প্রকৃতির চিরায়ত এই নিয়মকে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী এভাবেই সহজ কথায় উপস্থাপন করেছেন।

ঢপষঁংরাব লিংক : প্রয়োগ (গ) ও উচ্চতর দক্ষতার (ঘ) প্রশ্নের উত্তরের জন্য অনুরূপ যে প্রশ্নের উত্তর জানা থাকতে হবে-

গ উদ্দীপকটি আমার পঠিত ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ রচনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ এবং সাদৃশের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে।

ঘ উদ্দীপক এবং তোমার পঠিত পাঠ্যপুস্তক উভয় ক্ষেত্রে ভ্রমণ বিষয়টি সর্বাগ্রে আলোচনায় উঠে এসেছে। এ বিষয়ে তুলনামূলক আলোচনা করতে হবে।

প্রশ্ন- ৬ রোমাঞ্চকর ভ্রমণের আনন্দ 
শামীম তার পরিবার নিয়ে রাঙামাটি বেড়াতে গেল। পথে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু। বৌদ্ধমন্দির, কালি বাড়ি ইত্যাদি দেখে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। বান্দরবানের সেফটিপিনের মতো আঁকাবাঁকা রাস্তায় গাড়ি চালাতে শামীমদের ড্রাইভারের বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। তবে বান্দরবানের উঁচুনিচু সরু রাস্তা হলে কী হবে চারপাশের দৃশ্য ছিল খুবই মনোমুগ্ধকর। শামীম মনে মনে উপলব্ধি করে পাহাড়ি পথ ভ্রমণ একটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।

ক. কোন লিপির অর্থ উদ্ধারে এখনো চেষ্টা চলছে?
খ. ‘যুগ যুগ ধরে মানুষ এদের সামনে দাঁড়িয়ে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা করেছে’- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ রচনাটি কোন দিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ’?- বুঝিয়ে বল।
ঘ. ‘ভ্রমণ একটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা’- উদ্দীপক ও ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ রচনার আলোকে উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

ক পিরামিডের গায়ে খচিত লিপির অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা এখনো চলছে।

খ পিরামিড অনাদি অতীত কাল শুরু করে তখন পর্যন্ত সাধারণ মানুষের বিস্তর জল্পনা-কল্পনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রায় ৪৫০০ বছর পূর্বে মানবসভ্যতার আদি স্থাপত্য পিরামিড নির্মিত হয়। পিরামিড মমি রাখার গৃহ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও মিশরবাসীরা একে আত্মার ঘর বলে অভিহিত করে। এর শরীরে যে লিপি খোদাই করা আছে তার অর্থ এখনো উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। তাই লেখক পিরামিডের সামনে দাঁড়িয়ে অনুভব করেছেন যুগ যুগ ধরে মানুষ এ নিয়ে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা করেছে। কিন্তু কোনো কুলকিনারা করতে পারেনি।

ঢপষঁংরাব লিংক : প্রয়োগ (গ) ও উচ্চতর দক্ষতার (ঘ) প্রশ্নের উত্তরের জন্য অনুরূপ যে প্রশ্নের উত্তর জানা থাকতে হবে-

গ উদ্দীপকের সাথে নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ রচনায় প্রধান সাদশ্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ও চারপাশের সৌন্দর্য- এটি মুখ্য বিষয় হিসেবে আলোচনায় উঠে আসবে।

ঘ ‘ভ্রমণের মধ্য দিয়ে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়’- এ বিষয়ে উদ্দীপক ও ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ রচনার আলোকে আলোচনা করতে হবে।

2 Comments

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال