ষষ্ঠ শ্রেণি, বাংলা ১ম পত্র, মাদার তেরেসা, সৃজনশীল, প্রশ্ন উত্তর

মাদার তেরেসা

সন্জীদা খাতুন

প্রশ্ন- ১  পরহিতব্রতী 


রহিমা খাতুন নিজের বাসগৃহে প্রতিবেশী নিরক্ষর মহিলাদের অক্ষরজ্ঞান দিতে শুরু করেন। বেতন ছাড়াই তিনি এ কাজ করেন। ঈদের কেনাকাটা থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে রহিমা সবচেয়ে গরিব ও লেখাপড়ায় আগ্রহী মহিলাকে পুরস্কার দেন। এতে উৎসাহী হয়ে শিক্ষার্থী বাড়তে থাকে। নিজের ছোট গণ্ডির মধ্যে দায়িত্ববোধ ও মানবসেবার লক্ষ্যে তিনি এই মহৎ কাজ চালিয়ে যান।
 ক.    সেবা কাজের জন্য মাদার তেরেসার প্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ সম্মাননা কোনটি?
খ.    মাদার তেরেসা গাউন ছেড়ে শাড়ি পরেছিলেন কেন?
গ.    উদ্দীপকের রহিমা খাতুনের টাকা বাঁচানোর কাজটিতে মাদার তেরেসার যে ঘটনার প্রতিফলন ঘটেছে তা বর্ণনা দাও।
ঘ.    ‘উদ্দীপকের রহিমা খাতুনের চেয়ে মাদার তেরেসার সেবামূলক কাজের পরিধি ছিল ব্যাপক কিন্তু লক্ষ্য অভিন্ন।’- কথাটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর।

 ক     সেবা কাজের জন্য মাদার তেরেসার প্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ সম্মাননা হলো নোবেল পুরস্কার।
 খ     বাঙালিদের মধ্যে কাজ করার জন্য মাদার তেরেসা গাউন ছেড়ে সাধারণ বাঙালি নারীর পোশাক শাড়ি পরেছিলেন।
বাংলার মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন মাদার তেরেসা। তাদের কষ্ট মোচনে আরো কাজ করার তাগিদ অনুভব করেন। এজন্য একাত্ম হওয়া প্রয়োজন। এ বোধ থেকে বাঙালির সাথে মিশে যাওয়ার মানসে মাদার তেরেসা গাউন ছেড়ে শাড়ি পরেছিলেন।
 গ     উদ্দীপকের রহিমা খাতুনের টাকা বাঁচানোর কাজটিতে মাদার তেরেসার সেন্ট মেরি’জ স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের টিফিনের টাকা বাঁচানোর উৎসাহ দানের ঘটনার প্রতিফলন ঘটেছে।
‘সেন্ট মেরি’জ’ স্কুলে শিক্ষকতাকালে মাদার তেরেসা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সেবার আগ্রহ জাগাতে চেষ্টা করতেন। সপ্তাহে একদিনের টিফিনের পয়সা বস্তির দরিদ্র শিশুদের জন্য খরচ করতে তিনি ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ দিতেন।
মাদার তেরেসার এ ঘটনার সঙ্গে উদ্দীপকের রহিমা খাতুনের ঘটনার মিল রয়েছে। রহিমা খাতুনও ঈদের কেনাকাটা থেকে টাকা বাঁচিয়ে গরিব ও লেখাপড়ায় আগ্রহী মহিলাদের পুরস্কার দিতেন। অর্থাৎ মাদার তেরেসার স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে বস্তির শিশুদের সাহায্য করার ঘটনাটির প্রতিফলন ঘটেছে উদ্দীপকে।
 ঘ     ‘রহিমা খাতুনের চেয়ে মাদার তেরেসার সেবামূলক কাজের পরিধি ছিল ব্যাপক কিন্তু লক্ষ্য ছিল অভিন্ন’Ñ কথাটি যথার্থ।
মানবদরদি মাদার তেরেসা মানবসেবার লক্ষ্যে গাউন ছেড়ে সাধারণ বাঙালি নারীর পোশাক পরে সর্বসাধারণের সঙ্গে মিশে যান। তিনি গড়লেন মানবসেবার সংঘ ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’। মৃত্যুমুখী অসহায় মানুষের জন্য তিনি কলকাতায় ‘নির্মল হৃদয়’, নামের এক ভবন প্রতিষ্ঠা করলেন। নির্মল হৃদয়ে এনে মমতাময়ী মা, বোনের মতো তাদের সেবাযতœ করেন। এভাবে বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মাদার তেরেসা তাঁর সেবামূলক কাজ বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে দেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
উদ্দীপকের রহিমা খাতুনের যে প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায় তাও সেবামূলক। রহিমা খাতুনও চেয়েছিল গরিব অসহায় নারীদের সহযোগিতা করতে, বিপদের সময় তাদের পাশে দাঁড়াতে। উদ্দেশ্যগত দিক থেকে মাদার তেরেসা ও রহিমা খাতুনের কর্মের লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। উভয়ই মানবপ্রেমিক। তবে পার্থক্য হলো কর্মের পরিধিতে রহিমা খাতুন মানবসেবায় শুধু একটি কাজই করেছেন। তার কাজের চেয়ে মাদার তেরেসার সেবামূলক কাজ অনেক বিস্তৃত।
তাই বলা যায়, উদ্দীপকের রহিমা খাতুনের চেয়ে মাদার তেরেসার সেবামূলক কাজের পরিধি ছিল ব্যাপক কিন্তু লক্ষ্য অভিন্ন।

প্রশ্ন- ২ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ব্রত 


আবদুল মজিদ মাস্টারের অর্থসম্পদ তেমন নেই। কিন্তু অন্যের উপকার করে তিনি খুব আনন্দ পান। এলাকার গরিবদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য মজিদ মাস্টার নিজে কিছু টাকা দিয়ে এবং অন্যদের সহযোগিতায় একটি ফান্ড গঠন করেন। এতে হত-দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের বিয়ে থেকে শুরু করে পড়াশোনার খরচ ও দাফন-কাফনের কাজও চলতে থাকে।
ক. শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য মাদার তেরেসা কর্তৃক স্থাপিত প্রতিষ্ঠানটির নাম কী?
খ.    ‘ভালোবাসা দিয়ে দুনিয়া জয় করা সম্ভব’- মাদার তেরেসা প্রবন্ধের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
গ.    উদ্দীপকের আবদুল মজিদ মাস্টারের মধ্যে মাদার তেরেসার কাজের যে দিকটি ফুটে উঠেছে তার ব্যাখ্যা দাও।
ঘ.    ‘আবদুল মজিদ মাস্টার ও মাদার তেরেসার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করলে মানবজীবন শান্তিময় হয়ে উঠবে।’-এ বাক্যের তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।


 ক     শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য মাদার তেরেসা কর্তৃক স্থাপিত প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘নবজীবন আবাস’।
 খ     উদ্ধৃত উক্তিটিতে মানব কল্যাণে মাদার তেরেসা অসামান্য ভূমিকার অভিব্যক্তি প্রকাশ পেয়েছে।
মাদার তেরেসা আত্মসুখ বিসর্জন দিয়ে সারাজীবন মানুষের সেবা করেছেন এবং অন্যদের এ কাজে অনুপ্রাণিত করেছেন। তাঁর সেবাকর্ম পৃথিবী জুড়ে বিখ্যাত। তাই পৃথিবীব্যাপী সব মানুষের মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন মাদার তেরেসা। এজন্য বলা হয় ভালোবাসা দিয়ে দুনিয়া জয় করা সম্ভব।
 গ     অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যে ইচ্ছা মাদার তেরেসার ছিল সেই দিকটি উদ্দীপকের আবদুল মজিদ মাস্টারের মধ্যেও ফুটে উঠেছে।
মাদার তেরেসা ছিলেন একজন সাধারণ পরিবারের সন্তান। নিজের সম্পদ কম থাকলেও অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মেনেছে সবকিছু। মানবসেবার ব্রত নিয়ে ১৮ বছর বয়সে ঘর ছেড়েছেন তেরেসা। মাদার তেরেসার কাছে প্রচুর অর্থ না থাকলেও তিনি বিশ্বাস করতেন যে, অর্থের চেয়ে মনের শক্তিই বড়।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, আবদুল মজিদ মাস্টারেরও অসহায়, দুঃখী মানুষের সাহায্য করার ব্রত ছিল। অন্যের উপকার করতে পারলে মজিদ মাস্টার আনন্দ পেতেন। কিন্তু মাস্টার সাহেবের অর্থ সম্পদ তেমন না থাকার কারণে অন্যদের সহযোগিতায় একটি ফান্ড গঠন করেন এবং সেই ফান্ডের টাকা দিয়ে হত-দরিদ্র পরিবারের পাশে দাঁড়ান। তাই বলা যায়, মাদার তেরেসার মতো আবদুল মজিদ মাস্টারেরও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ব্রত ছিল আর এ দিকটিই উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।
 ঘ     “আবদুল মজিদ মাস্টার ও মাদার তেরেসার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করলে মানব জীবন শান্তিময় হয়ে উঠবে”Ñ উক্তিটি যথার্থ ও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
ছোটবেলা থেকেই মাদার তেরেসার ইচ্ছা ছিল মানুষের সেবা করার, তাদের কষ্ট লাঘব করার। সেই ব্রত নিয়েই ১৮ বছর বয়সে ঘর ছেড়ে সন্ন্যাসিনী জীবন বেছে নিলেন। আস্তে আস্তে নিজেকে নিয়োজিত করলেন মানবসেবায়। তার মমতাময়ী স্পর্শে অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটল। কলকাতার অতি নোংরা বস্তিতে তিনি প্রথম স্কুল খুললেন। অসুস্থদের সেবার জন্য খুললেন চিকিৎসাকেন্দ্র। বহুমুখী চিকিৎসাসেবার জন্য তিনি ‘নির্মল হৃদয়’, ‘নবজীবন আবাসন’, ‘প্রেমনিবাস’ প্রভৃতি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে, তোলেন এবং নিজের হাতে সবধরনের সেবা করেন।
উদ্দীপকে আবদুল মজিদ মাস্টার যা করেছেন তা একান্তই মানবিক কাজ। তিনি নিজের টাকা ও অন্যদের সহযোগিতায় একটি ফান্ড গঠন করেন। তা থেকে তিনি গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের বিয়ে থেকে শুরু করে সব কাজে সহযোগিতা করেন।
তাই বলা যায়, সমাজের প্রতিটি মানুষ যদি মাদার তেরেসা ও আবদুল মজিদ মাস্টারের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে তাহলে সমাজ ও মানবজীবন শান্তিময় হয়ে উঠবে কথাটি যথার্থ ও তাৎপর্যপূর্ণ।
 
Image source by google

2 Comments

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال