গর্ভবতী মায়েরা করোনার সবচেয়ে ভয়াবহ ঝুঁকিতে || Pregnant mothers are at the most serious risk of corona disease

করোনা সংকটে গর্ভবতী মায়েদের জন্য
দেশের এই সংকটকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি সংকটে আছে ডাক্তাররা, পেশাগত কারণে। কিন্তু সাধারন জনগণের মধ্যে বাচ্চা এবং বৃ্দ্ধের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি সংকটে আছেন গর্ভবতীরা। গর্ভকালীন সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এই সময় যে কোন ভাইরাস সংক্রমনের আশঙ্কা সাধারনের চেয়ে ৫.৭ গুন বেশি। জটিল কোন প্রবলেম না থাকলে এক দু’মাস চেকআপ না করালে আপনার তেমন ক্ষতি হবে না। বরং চেকআপ করতে গিয়ে চেম্বার, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার বা হাসপাতাল থেকে আপনি আপনার অজান্তেই নিয়ে যেতে পারেন ভাইরাস।


চেকআপের ডেট আছে! কি করবেন? অসুবিধা নেই। এটা আদালতের দেয়া ডেট না। না আসলে আপনাকে পুলিশ গিয়ে ধরে নিয়ে এসে জেলে পুরবে না। তাহলে কি করবেন?
১) ফোনে আপনার ডাক্তারের সাথে  যোগাযোগ রাখুন নিয়মিত। আগের প্রেসক্রিপশনের ওষুধগুলোই চালানো যাবে কিনা জেনে নিন।
২) বাসায় প্রেসার মাপা মেশিন থাকলে মাঝে মাঝে নিজেরাই প্রেসার চেক করুন ।
৩) বাচ্চার নড়াচড়া খেয়াল রাখুন।
৪) ওজন বাড়ছে কি না খেয়াল রাখুন। বাসায় ওজন মাপার মেশিন থাকলে প্রতি মাসে ওজন দেখে নিন।
৫) নতুন কোন সমস্যা দেখা দিলে বা কোন অসংগতি মনে হলে ফোনে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন।
৬) সকল সামাজিকতাকে পাশ কাটিয়ে একা একা নিজের মত থাকুন। আপনার সঙ্গে তো একজন আছেই সবসময়। আপনার ভবিষ্যত সন্তানের সাথে কথা বলুন। তার সুরক্ষার জন্য নিজেকে আড়ালে রাখুন।
৭) প্রয়োজন ছাড়া কোনভাবেই ঘরের বাইরে যাবেন না।
৮) মাঝে মাঝে হাত-মুখ সাবান-পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করুন। বারবার মুখে-চোখে হাত দিবেন না।
৯) বাইরে থেকে কেউ আসলে সে পরিচ্ছন্ন না হওয়া পর্যন্ত দুরত্ব রক্ষা করে চলুন।
১০) হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার নিজে মেনে চলুন এবং বাসার সকলকে এটি মেনে চলতে বাধ্য করুন।
১১) বাড়ীতে কারো সর্দি-কাশি হলে তাকে কিছুটা আলাদা করে রাখুন। কোনভাবেই তার কাছাকাছি যাবেন না। এমনকি আপনার বাচ্চা হলেও না। তাকে পরিবারের অন্য কোন সদস্যের কাছে দেখভালের জন্য রাখুন।
১২) আপনার সর্দি-কাশি হলে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে ফোনে আপনার ডাক্তারকে উপসর্গগুলো জানান। তাঁর পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ পথ্য খান।

কোভিড-১৯ যেহেতু একটি নতুন সংক্রমন, এই সম্পর্কে জানি আমরা অল্পকিছুই। আমরা এখনও জানিনা, আপনি এই ভাইরাস আক্রান্ত হলে আপনার গর্ভস্থ সন্তানের কোন ক্ষতি হবে কি না বা সে এই সংক্রমন বহন করবে কি না! তবে অল্প কিছু গর্ভবতীর ক্ষেত্রে সময়ের পূর্বেই ডেলিভেরি হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে এবং এর সঠিক কারন জানা যায়নি।

ডেলিভেরির সময় কি করবেন?
আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নির্দিষ্ট হাসপাতালে ডেলিভারি করান। তবে সংক্রমন এড়াতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। ডেলিভারির সময় বা পরে আত্মীয়-স্বজনের ভিজিট প্রত্যাহার করুন। বাচ্চা দেখতে চাইলে ছবি তুলে অনলাইনে পাঠিয়ে দিন কিংবা সেটি সম্ভব না হলে সন্তানের সু-স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে তাদের অপেক্ষা করতে বলুন। বাচ্চা একটু দেরি করে দেখলে মহাভারত শুদ্ধ বা অশুদ্ধ কোনটাই হবে না। বরং এই মুহূর্তে আপনার এবং বাচ্চার সুস্থ্য-শুদ্ধ থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ।


বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াবেন কি না ?
ভাইরাসটি নতুনভাবে সনাক্ত হওয়ার কারণে এ সম্পর্কে আমরা জানিনা যে এটি বুকের দুধের মাধ্যমে সন্তানের শরীরে প্রবেশ করে কি না! তবে যেহেতু বুকের দুধ বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, আপনারা বুকের দুধ নিয়ম মতোই খাওয়াবেন। তবে বাচ্চাকে স্পর্শ করার পূর্বে নিয়ম মেনে হাত পরিষ্কার করে নিবেন ।অযথা বাচ্চার চোখে-মুখে বা শরীরে হাত দিবেন না।

একটা বিষয় মনে রাখবেন, যেকোন নতুন রোগ বা সংক্রমন হলে সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণালব্ধ ফল পেতে সময় লাগে। অল্প কিছু স্যাম্পল পরীক্ষা করে এমনিয়োটিক ফ্লুইড (বাচ্চার থলিতে থাকা পানি) এবং বুকের দুধের মধ্যে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি। কিন্তু এই দুই মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায় না এটা নিশ্চিত করে বলতে আরও গবেষণা আবশ্যক, যা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কাজেই আমরা সবটাকেই আমলে নিয়ে সাবধানে থাকবো।

ভাল থাকুন সন্তানধারী সকল মা এবং তাদের সন্তানেরা।
সুত্র / কৃতজ্ঞতায়ঃ
ডা.ফাহমিদা শিরীন নীলা
এমবিবিএস; এফসিপিএস (অবস্ এন্ড গাইনী), ফিগো ফেলো (ইটালী)
গাইনী বিশেষজ্ঞ,বগুড়া।
আমাদের এ লেখাটি যাদ আপনার ভালে লাগে, তাহলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকবেন। যদি আরো কিছু জানার থাকে তাহলে আমার এই পোস্টের নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করবেন, আমি আমার সাধ্যমত আপনাদেরকে সঠিক তথ্যটি জানানোর চেষ্টা করব। আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ সবাইকে। ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
 Image Source: www.google.com 
Previous Post Next Post

نموذج الاتصال