ষষ্ঠ শ্রেণি, বাংলা ১ম পত্র, কতদিকে কত কারিগর, সৃজনশীল, প্রশ্ন উত্তর

কতদিকে কত কারিগর

সৈয়দ শামসুল হক

অতিরিক্ত সৃজনশীল, প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্ন- ১  শিল্পের কদর ও ব্যবহারিক গুরুত্ব 


মিসেস মৌসুমি সূচিকর্মে বেশ নিপুণ। রঙিন সুতা দিয়ে তিনি কাপড়ে সুন্দর সুন্দর জিনিস আর্ট করেন। ফুলের নকশা করা কাপড় দিয়ে তিনি বালিশের কভার বানিয়েছেন। সুন্দর লেখা সমৃদ্ধ কাপড় দিয়ে টিভি ঢাকার পর্দা বানিয়েছেন। রুমালেও নকশা আঁকতে পটু তিনি। শহিদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধের ছবি আঁকা কাপড় বাঁধাই করে দেয়ালে টাঙিয়েছেন। তিনি বলেন সম্মানের জিনিসকে তো উপরেই রাখতে হয়। মিসেস মৌসুমির হাতের নিপুণ কাজের প্রশংসা সবাই করেন।

 ক.    লেখক সারাদিন কোথায় সময় কাটিয়েছেন?    ১
খ.    লেখক বেশি কৌতূহল নিয়ে মাটির পাটার কাজ দেখেছেন কেন?    ২
গ.     উদ্দীপকের সূচিকর্মের সঙ্গে মৃৎশিল্পের সাদৃশ্য তুলে ধর।    ৩
ঘ.    “কতদিকে কত কারিগর’ রচনার পালমশাইয়ের শ্রদ্ধারই প্রকাশ ঘটেছে উদ্দীপকের মৌসুমির মধ্যে”মতটির পক্ষে যুক্তি দাও।    ৪

উত্তর
 ক     লেখক নদীর ওপাড়ে কুমোরদের গ্রামে সারাদিন সময় কাটিয়েছেন।

 খ     বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি এবং তাদের শিল্পকর্মের চিত্র মাটির পাটায় কাজ করা বলে লেখক বেশি কৌতূহল নিয়ে মাটির পাটার কাজ দেখেছেন।
মাটির পাটাগুলোতে কুমোররা বিভিন্ন শিল্পকর্মের চিত্রের হুবহু নকল করে নকশা করছেন। সেখানে ফুলের নকশা, রবীন্দ্রনাথ, লালন, বেণিবন্ধনরত যুবতি, উড়ন্ত পরি, ময়ূরপঙ্খি নৌকা প্রভৃতির চিত্র আছে। নজরুলের চোখ বুজে বাঁশি বাজানোর চিত্র, জয়নুলের আঁকা গাড়ির চাকা ঠেলার চিত্র মাটির পাটার নকশায় ফুটে উঠেছে। বিখ্যাত এসব ব্যক্তির চিত্র, তাদের আঁকা চিত্রের নকশা প্রভৃতি লেখককে মুগ্ধ করেছে। তাই লেখক মাটির পাটার কাজ বেশি কৌতূহল নিয়ে দেখেছেন। 

 গ     উদ্দীপকের সূচিকর্মের সাথে মৃত শিল্পের বিষয়গত সাদৃশ্য রয়েছে।
কতদিকে কত কারিগর, রচনায় কুমোরদের তৈরি মৃৎশিল্প লোকশিল্পের অন্যতম উপাদান তুলে ধরেছেন। তাদের আঁকা মাটির পাটায় ফুলের নকশা, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের চিত্র, জয়নুলের আঁকা চিত্র, বেণিবন্ধনরত যুবতীর চিত্র, উড়ন্ত পরি, ময়ূরপঙ্খি প্রভৃতি লোকশিল্প ও লোকসংস্কৃতির অংশ। উদ্দীপকেও আমরা দেখি, লোকশিল্পের অন্যতম উৎস সূচিকর্মের কাজ। মিসেস মৌসুমি রঙিন সুতা দিয়ে কাপড়ে সুন্দর আর্টের কাজ করছেন। বালিশের কভারে তিনি ফুলের নকশা করেছেন, টিভির পর্দায় সুন্দর লেখা সমৃদ্ধ কাপড় দিয়ে আচ্ছাদিত করেছেন। মূলত এসব লোকশিল্পের অন্যতম উদাহরণ। আলোচ্য রচনায় আমরা যেমন বিভিন্ন ব্যক্তির প্রতিকৃতির চিত্র দেখি তেমনি শহিদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধের চিত্র অঙ্কন দেখি।
উদ্দীপকে মূলত লোকশিল্প ও লোকসংস্কৃতির উপাদানকেই তুলে ধরা হয়েছে। যার ফলে আমরা বলতে পারি, সূচিকর্ম ও মৃৎশিল্প উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্য বর্তমান। 

 ঘ     “কতদিকে কত কারিগর’ রচনার পালমশাইয়ের শ্রদ্ধারই প্রকাশ ঘটেছে উদ্দীপকের মৌসুমির মধ্যে” মন্তব্যটি যথার্থ।
পালমশাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিত্রকে সবার উপর স্থান দিয়েছেন। তার বক্তব্য বঙ্গবন্ধুর ছবি তো নিচে বা মধ্যে রাখা যায় না। তাকে উপরেই স্থান দিতে হবে। জাতির মুক্তির জন্য যে ব্যক্তি সারাটা জীবন ব্যয় করেছেন, দেশের স্বাধীনতা অর্জনে যার ভূমিকা অদ্বিতীয়, সেই মহান নেতাকে সম্মান জানাতে গিয়ে পালমশাইয়ের মতো একজন কুমোরও তাঁকে তার হৃদয়ে যেমন উচ্চাসন দিয়েছেন, তেমনি তাঁর ছবি সবার ছবির উপরে স্থান করে দিয়েছেন।
উদ্দীপকেও আমরা দেখি, মিসেস মৌসুমি অন্যান্য সূচিকর্মকে ঘরের বিভিন্ন কাজে লাগালেও শহিদ মিনার ও জাতীয় স্মৃতিসৌধের চিত্রকে দেয়ালে বাঁধাই করে টাঙিয়ে রেখেছেন। তিনি সম্মানের জিনিস উপরেই রাখতে চান, যেমনটি পালমশাই চেয়েছেন।
তাই আলোচনার প্রেক্ষিতে উদ্দীপকের মৌসুমি এবং আলোচ্য রচনার পালমশাই সম্মান প্রদর্শনের জায়গা থেকে একই ভূমিকায় অবতীর্ণ।

প্রশ্ন- ২  বৈচিত্রময় লোকশিল্পের বৈশাখী মেলা 


কামাল তার বাবার সঙ্গে বৈশাখী মেলা দেখতে গেল। মেলায় গিয়ে কামাল অনেক খেলনা কিনল। বাঁশের বাঁশি, নকশা করা হাতপাখা, মাটির তৈরি ব্যাংক, ঘোড়া, হাতি প্রভৃতি কেনার পর কামালের বাবা বলল, ‘গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এসব লোকশিল্পের মাঝেই, অথচ নতুন প্রজন্ম আজ গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ভুলতে বসেছে।’
 ক.    গরুর গাড়ির চাকা ঠেলা ছবিটি কার আঁকা?    ১
খ.    জয়নুল আবেদিনের আর্ট সম্পর্কে পালমশাইয়ের কোনো ধারণা নেই কেন?    ২
গ.    উদ্দীপকের ও রচনায় বর্ণিত লোকশিল্পের উপাদানগুলোর সাদৃশ্য নির্ণয় কর।    ৩
ঘ.    ‘গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এসব লোকশিল্পের মধ্যেই বিদ্যমান’ উক্তিটি রচনার আলোকে বিশ্লেষণ কর।    ৪

উত্তর

    গরুর গাড়ির চাকা ঠেলা ছবিটি জয়নুল আবেদিনের আঁকা।

 খ     পালমশাই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে লোকশিল্প তৈরি করেন বলে জয়নুল আবেদিনের আর্ট সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই।
মৃৎশিল্প তৈরি করেই পালমশাই জীবিকা নির্বাহ করেন। এটাই তার পেশা। তাই কুমোর পালমশাই মৃৎশিল্প তৈরি করেন ব্যবসার উদ্দেশ্যে, কোনটা কার চিত্র এ খবর রাখার প্রয়োজনবোধ করেন না তিনি। পালমশাইয়ের মতে, ‘কতদিকে কত কারিগর’ আছে কার খবর কে রাখে। কে কোন জিনিস আর্ট করল, কে বড় শিল্পী তা মনে রাখে কয়জন।

 গ     উদ্দীপকের মাটির তৈরি লোকশিল্পের সাথে ‘কতদিকে কত কারিগর’ রচনার মাটির তৈরি লোকশিল্পের উপাদানগুলোর সাদৃশ্য রয়েছে।
‘কতদিকে কত কারিগর’ রচনায় বর্ণিত হাঁড়ি, পাতিল, সরা, সানকি, বিখ্যাত ব্যক্তিদের চিত্র, নকশা প্রভৃতি যেমন লোকশিল্পের নিদর্শন তেমনি উদ্দীপকের হাতি, ঘোড়া, বাঁশের বাঁশি, হাতপাখা প্রভৃতিও লোকশিল্পের নিদর্শন।
উদ্দীপকেও আমরা দেখি, লোকশিল্পের অন্যতম উপাদান বাঁশের বাঁশি, নকশা করা হাতপাখা প্রভৃতি। খেলার জন্য হাতি, ঘোড়া কিংবা টাকা জমানোর জন্য মাটির ব্যাংক এসব মূলত লোকশিল্পের অন্যতম উপাদান। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের ও আলোচ্য রচনায় বর্ণিত লোকশিল্পের উপাদানগুলো সাদৃশ্যপূর্ণ। 

 ঘ     “গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এসব লোকশিল্পের মধ্যেই বিদ্যমান।” উক্তিটি রচনার আলোকে যথার্থ।
গ্রামীণ জীবনের সাধারণ চিত্র লোকশিল্পের মাধ্যমে উঠে এসেছে। লোকশিল্পের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যেই গ্রামবাংলার ঐতিহ্য বিদ্যমান।  আর এ ঐতিহ্য ধরে রাখা আমাদের কর্তব্য।
‘কতদিকে কত কারিগর’ রচনায় আমরা দেখি, কুমোরপাড়ার কুমোররা মাটি দিয়ে যা তৈরি করেন, তা মূলত গ্রামীণ জীবনের নানা উপাদানে সমৃদ্ধ। বর্তমান কালের কুমোরগণ শুধু তৈজসপত্রই তৈরি করেন না; তারা মাটি দিয়ে নানা নকশা তৈরি করেন বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রতিচ্ছবি, যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জয়নুল আবেদিন, কাজী নজরুল ইসলাম। তাদের আঁকা চিত্র মাটির পাটায় ফুটিয়ে তোলেন। এসব মূলত লোকশিল্পের অপরিহার্য অঙ্গ। উদ্দীপকেও আমরা দেখি, কামাল তার বাবার সঙ্গে বৈশাখী মেলাতে গিয়ে নানা জিনিস কিনেছে। বাঁশের বাঁশি, নকশা করা হাতপাখা, মাটির তৈরি ব্যাংক, হাতি, ঘোড়া প্রভৃতি মূলত গ্রামবাংলার ঐতিহ্য তথা লোকশিল্পের অপরিহার্য উপাদান।
তাই তো কামালের বাবা বলেছেন এসব জিনিসের মধ্যেই গ্রামবাংলার ঐতিহ্য বিদ্যমান।

প্রশ্ন- ৩  মাটির লোকশিল্প তৈরিকরণ 


নিচের চিত্রটি দেখে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

 ক.    ‘কতদিকে কত কারিগর’ রচনাটি কে লিখেছেন?    ১
খ.    বর্তমান সময়ের কুমোরদের শিল্পকর্মের বর্ণনা দাও।    ২
গ.    উদ্দীপকের চিত্রের সঙ্গে ‘কতদিকে কত কারিগর’ রচনাটির সাদৃশ্য দেখাও।    ৩
ঘ.    উদ্দীপকে ‘কতদিকে কত কারিগর’ রচনার মূল বিষয় উঠে এসেছে মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।    ৪

উত্তর

 ক     ‘কতদিকে কত কারিগর’ রচনাটি সৈয়দ শামসুল হক লিখেছেন।

 খ     বর্তমান সময়ে কুমোরগণ শুধু মাটির তৈজসপত্রই তৈরি করেন না, তারা এখন বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি, নানা রকম ছবির নকশা পাটায় অঙ্কন করেন।
বর্তমান সময়ের শিল্পীগণ মাটির তৈরি নানা রকম শিল্পকর্ম নিয়ে ব্যস্ত। তারা মাটির পাটায় ফুলের নকশা, নানা রকম ছবি, নানা জিনিসের প্রতিকৃতি অঙ্কন করেন। তাদের বহুমুখী কাজের মধ্যে চিত্রের পাশাপাশি নকশারও কাজ থাকে। বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি অঙ্কন, তাদের আঁকা চিত্রের অঙ্কন বর্তমান সময়ের কুমোরদের শিল্পকর্মের অন্যতম উপাদান। 

 গ     উদ্দীপকের চিত্রে ও ‘কতদিকে কত কারিগর’ রচনায় কুমোরদের তৈরি মাটির শিল্পকর্মের সাদৃশ্য রয়েছে।
‘কতদিকে কত কারিগর’ রচনায় কুমোররা মাটি দিয়ে হাঁড়ি, পাতিল, সরা, সানকি ইত্যাদি তৈরি করছে। এছাড়া মাটির ফলকে ফুলের নকশা, রবীন্দ্রনাথ, উড়ন্ত পরি, নজরুল, জয়নুল আবেদিন ও ময়ূরপঙ্খি নৌকাসহ বিভিন্ন ছবি আঁকছে।
উদ্দীপকের চিত্রেও এ বিষয়টির সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে। উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, এক কুমোর চাকায় মাটির তাল লাগিয়ে টিপে টিপে হাঁড়ি, পাতিল, কলসিসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করছে। কুমোরকে সহযোগিতা করছে অন্য এক যুবক। সুতরাং আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, উদ্দীপক ও ‘কতদিকে কত কারিগর’ রচনার সাদৃশ্য হচ্ছে কুমোরদের তৈরি শিল্পকর্মের পরিচয় তুলে ধরা।

 ঘ     “উদ্দীপকে ‘কতদিকে কত কারিগর’ রচনার মূল বিষয় উঠে এসেছে” মন্তব্যটি যথার্থ।
‘কতদিকে কত কারিগর’ রচনার মূল বিষয় হলো বাংলাদেশের লোকশিল্পের পরিচয় তুলে ধরা। এতে কুমোররা মাটি দিয়ে হাঁড়ি, পাতিল, সরা, সানকি প্রভৃতি তৈরি করছে। এছাড়া মাটির ফলকে মহান সব ব্যক্তির ছবিও রয়েছে। মাটির তৈরি জিনিসগুলোকে ভাঁটিতে পোড়াবার জন্য এক জায়গায় জমা করা হচ্ছে। কয়েকজন কিশোর এবং দুজন যুবক কাজ করছে। বৃদ্ধ পালমশাই তাদের কাজের তদারকি করছেন, যাতে ভুল না হয় এবং কাজে ফাঁকি না দেয়। কুমোরদের এসব কাজ লোকশিল্প পরিচায়ক।
উদ্দীপকেও কুমোরপাড়ার উপর্যুক্ত বর্ণনার যথার্থ প্রতিফলন লক্ষণীয়। দেখা যাচ্ছে, এক কুমোর চাকায় মাটির তাল নিয়ে টিপে টিপে মাটির জিনিস বানাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে, হাঁড়ি, পাতিল, কলসিসহ বিভিন্ন জিনিস। কুমোরকে কাজে সহযোগিতা করছে অন্য এক যুবক। মাটির তৈরি জিনিসগুলোকে ভাঁটিতে পোড়ানোর জন্য রোদে শুকানো হচ্ছে।
তাই বলা যায়, উদ্দীপকে কুমোরপাড়ার যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা যেন ‘কতদিকে কত কারিগর’ রচনার মূল বিষয়কে ধারণ করেছে।


Photo source by Google

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال