কতকাল ধরে
আনিসুজ্জামান।প্রশ্ন- ১
শহরের ময়ে দীপা তার নানাকে নিয়ে নানা বাড়ির গ্রাম দেখতে বের হয়। তার নানা প্রথমে তাকে একটা অবস্থাপন্ন পরিবারে নিয়ে যান। এ পরিবারে তার বয়সি মেয়েরা সালোয়ার-কামিজ পরে, ঠোঁটে লিপিস্টিক দেয়, হাতে চুড়ি ও কানে স্বর্ণের দুল পরে। গৃহিণীরা তাঁতের শাড়ি পরে এবং শাড়ির আঁচলে টেনে ঘোমটা দেয়। তাঁদের হাতে ও গলায় স্বর্ণালংকার শোভা পাচ্ছে। এ বাড়ি পেরিয়ে দীপা এক দিনমজুরের খড়ের তৈরি ঝুপড়ি ঘরে ঢুকে পড়ে। দিনমজুরের স্ত্রীর পরনে মলিন শাড়ি, সন্তানদের পরনে ছেঁড়া হাফপ্যান্ট এবং শরীরের রুগ্ণ দশা দেখে দীপার খুব মনকষ্ট হয়। সে ভাবে, শত শত বছর চলে যায়, কিন্তু এদেশের দরিদ্র মানুষের জীবনের অভাবগুলো আর চলে যায় না।ক. বাংলাদেশের ইতিহাস কত বছরের পুরোনো?
খ. ‘ইতিহাস বলতে বোঝায় সব মানুষের কথা’Ñ উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
গ. দীপার দেখা গ্রামের লোকজনের পোশাক-পরিচ্ছদের সাথে হাজার বছর আগের পূর্বপুরুষদের পোশাকের যে মিল পাওয়া যায় তা বর্ণনা কর।
ঘ. ‘শত শত বছর চলে যায়, কিন্তু এদেশের মানুষের জীবনের অভাবগুলো চলে যায় না।’ উদ্দীপক এবং ‘কতকাল ধরে’ প্রবন্ধের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ক বাংলদেশের ইতিহাস প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরোনো।
খ ‘ইতিহাস বলতে বোঝায় সব মানুষের কথা’ উক্তিটির তাৎপর্য হলো সকল শ্রেণির ও পেশার মানুষের কথা ও তাদের জীবনযাত্রা ইতিহাসে আলোচিত হয়।
ইতিহাস মানে শুধু রাজা জমিদারদের কথাই বোঝায় না। ইতিহাস হচ্ছে একটি দেশের সব মানুষের জীবনযাত্রা, আহার বিহার, সংস্কৃতি-উৎসব, অভ্যাস, আচার ব্যবহার এসব কিছুর সারসংক্ষেপ। ফলে ইতিহাসে যেমন ঠাঁই পায় রাজা জমিদার তেমনি খেটে খাওয়া মানুষের কথাও সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের পুরোনো। তবুও জীবনযাত্রায় একটি মিল আছে প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত।
গ দীপার দেখা গ্রামের মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদের সঙ্গে হাজার বছর আগের পূর্বপুরুষদের পোশাকের মধ্যে যথেষ্ট মিল রয়েছে; তবে কিছুটা বৈসাদৃশ্যও রয়েছে।
‘কতকাল ধরে’ প্রবন্ধে দেখি হাজার বছর আগে সব মেয়ে শাড়ি পরত। আর পুরুষেরা পরত ধুতি। ধনীদের ছেলেরা ধুতির সঙ্গে চাদর পরত। আর শাড়ির সঙ্গে ধনীদের মেয়েরা পরত ওড়না। ধনীরা সোনার অলঙ্কারও ব্যবহার করত।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, দীপা শহর থেকে গ্রামে নানার বাড়িতে বেড়াতে আসে। এখানে সে দেখতে পেল গ্রামের এক ধনী পরিবারের মেয়েরা সালোয়ার-কামিজ, হাতে চুড়ি, ঠোঁটে লিপিস্টিক ও কানে সোনার দুল পরে আছে। আর গৃহিণীরা পরে আছে তাঁতের শাড়ি। দীপা অন্য একটি দিনমজুরের পরিবারে গিয়ে দেখল গৃহিণীর পরনে মলিন শাড়ি, সন্তানদের পরনে ছেঁড়া হাফপ্যান্ট। অর্থাৎ গ্রামে অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে মানুষ বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরে। কতকাল ধরে, রচনাতে দেখা যায় তৎকালীন সময়ে অবস্থাভেদে পোশাকেও গহনায় ব্যাপক পার্থক্য ছিল। তাই বলা যায়, দীপার দেখা গ্রামের লোকজনের পোশাক-পরিচ্ছদের সঙ্গে হাজার বছর আগের পূর্বপুরুষদের পোশাকের যথেষ্ট মিল রয়েছে।
ঘ ‘শত শত বছর চলে যায়, কিন্তু এদেশের মানুষের জীবনের অভাবগুলো চলে যায় না’। উদ্দীপকের এই বক্তব্যের সমর্থন মেলে ‘কতকাল ধরে’ প্রবন্ধে।
‘কতকাল ধরে’ প্রবন্ধে দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের কথা রাজা-রাজড়াদের পাশাপাশি তুলে ধরা হয়েছে। দরিদ্ররা বাস করত কাঁচা বাড়িতে। কবি ও লেখকদের লেখায় ফুটে উঠেছে নিদারুণ অভাবের, জ্বালাময় দারিদ্র্যের ও অপরিসীম বেদনার ছবি। নিরানন্দে তাদের সেই কঙ্কালসার দেহ আর পরনের ছেড়া কাপড়। ক্ষুধায় চোখ আর পেট বসে গেছে শিশুদের, যেন এক মন চালে তার একশ দিন চলে যায়।
উদ্দীপকে দিনমজুরদের যে দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, আলোচ্য প্রবন্ধের বক্তব্য অনুযায়ী এদেশ রাজার শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর থেকে তা সূচিত হয়েছে। তখন প্রভু সৃষ্টি হলো, সেখানে কেউ হলো ভৃত্য। কেউ প্রভুর প্রভু, কেউ দাসের দাস। মানুষের মধ্যে দুটি ভাগ হয়ে গেল। কেউ হলো অবস্থাসম্পন্ন আর কারো দুরবস্থার সীমা রইল না। অর্থ বিত্তশালী জমিদার শ্রেণি নিম্নশ্রেণির মানুষদের উপর প্রভাব খাটাতে লাগল। ফলে তৈরি হলো বৈষম্য। শোষিত শ্রেণি দিনে দিনে দিনমজুরে পরিণত হলো।
তাই বছরের পর বছর ধরে তাদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না।
প্রশ্ন- ২
রওনক জাহান বেইলী রোডের নাট্যমঞ্চে বাঙালির প্রাচীন জীবনযাত্রার উপর একটি মঞ্চনাটক দেখলেন। তিনি নাটকের কলাকুশলীদের পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে হতবাক হলেন। কারণ পুরুষ অভিনেতারা পরনে শুধু লুঙ্গি, পায়ে কাঠের খড়ম, হাতে-গলায় তামার অলংকার পরেছেন মেয়েরা পরেছেন মখমলের কাপড় আর হাতে-পায়ে-কানে-নাকে ও গলায় ব্রোঞ্জের তৈরি বেমানান সাইজের অলংকার পরেছেন। এই দৃশ্য দেখে তিনি মনে করলেন প্রাচীনযুগের পরিধেয় বস্ত্রের চেয়ে বর্তমান যুগের পরিধেয় সাজসজ্জা অনেক রুচিশীল ও মার্জিত।ক. হাজার বছর পূর্বে কোন চালের ভাতের কদর সবচেয়ে বেশি ছিল?
খ. ‘প্রাচীনকালে জলপথই যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম’- উক্তিটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. নাটকের কলাকুশলীদের সাজসজ্জার সাথে ‘কতকাল ধরে’ প্রবন্ধের প্রাচীন যুগের সাজসজ্জার বৈসাদৃশ্য বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে রওনক জাহানের বক্তব্য ‘কতকাল ধরে’ প্রবন্ধে কতটুকু প্রতিফলিত হয়েছে বলে তুমি মনে কর? মতামত দাও।
ক হাজার বছর পূর্বে সরু সাদা চালের ভাতের কদর সবচেয়ে বেশি ছিল।
খ প্রাচীনকালে স্থলপথে সকল রাস্তা বন্ধুর ও যাতায়াতের অগম্য হওয়ার কারণে জলপথই ছিল যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম।
প্রাচীনকালে বিজ্ঞানের প্রযুক্তিগত আশীর্বাদ না থাকার কারণে ইট-সুরকির রাস্তাঘাটও ছিল না, আর ইঞ্জিন চালিত কোনো যানবাহনের উপস্থিতিও ছিল না। তাই মানুষ বাধ্য হয়েই জলপথে সকল স্থানে যাতায়াত করত। তবে স্থলপথেও স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য মানুষ গরুর গাড়ি বা ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করত।
গ নাটকের কলাকুশলীদের সাজসজ্জার সঙ্গে ‘কতকাল ধরে’ প্রবন্ধের প্রাচীন যুগের সাজসজ্জার বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
‘কতকাল ধরে’ প্রবন্ধে দেখতে পাই, হাজার বছর আগে পুরুষরা ধুতি পরত, আর মেয়েরা পরত শাড়ি। ধনীর ছেলেরা ধুতির সঙ্গে চাদর ও মেয়েরা শাড়ির সঙ্গে পরত ওড়না। তাদের কাপড়ে নানা রকমের নকশা কাটা হতো। তারা চোখে কাজল ও খোপায় ফুল দিত। বড়লোকরা সোনার অলঙ্কার পরত, হাতে কানে, গলায় সব সময় সোনা-মণিমুক্তা শোভা পেত। কিন্তু উদ্দীপকে দেখতে পাই, নাটকের পুরুষ অভিনেতারা শুধু ধুতি পরে আছে, পায়ে খড়ম ও হাতে গলায় তামার অলংকার পরে আছে। আর মেয়ে অভিনেত্রীরা মখমলের কাপড় পরে হাতে, পায়ে, নাকে, কানে পরে আছে বেমানান সাইজের ব্রোঞ্জের অলঙ্কার। তাদের এই বেমানান সাজসজ্জা দেখে রওনক জাহান হতবাক হলেন।
প্রাচীন বাংলার মানুষের সাজসজ্জা ও নাটকের চরিত্রদের সাজসজ্জা ঠিক এক রকম নয়। এখানেই উদ্দীপকের নাটকের কলাকুশলীদের সঙ্গে ‘কতকাল ধরে’ প্রবন্ধের প্রাচীন যুগের সাজসজ্জার বৈসাদৃশ্য।
ঘ উদ্দীপকের রওনক জাহানের বক্তব্য কতকাল ধরে প্রবন্ধে সম্পূর্ণ রূপে প্রতিপালন বলে আমি মনে করি। কেননা প্রাচীনযুগের পরিধেয় বস্ত্রের চেয়ে বর্তমান সাজসজ্জা অনেক বেশি রুচিশীল।
‘কতকাল ধরে’ প্রবন্ধে দেখি প্রাচীন যুগের পুরুষরা ধুতি পরত। মেয়েরা শাড়ি পরত। তাদের শাড়ি ও ধুতি বহরে ছিল ছোট। তখন পাটের তৈরি কাপড়েরও চল ছিল। সাধারণ লোকেরা খড়ম পরত। ছেলেরা বাবরি রাখত। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরা সোনার অলংকার ব্যবহার করত। সাধারণ পরিবারের মেয়েরা কানে কচি কলাপাতার মাকড়ি পরত। গলায় পরত ফুলের মালা।
উদ্দীপকেও দেখা যায়, একটি প্রাচীন জীবনযাত্রার নাটকে ছেলেরা শুধু ধুতি পরে আছে। পায়ে খড়ম ও গলায় পরে আছে তামার অলংকার। আর মেয়েরা কানে, নাকে ও গলায় ব্রোঞ্জের বেমানান অলংকার পরে আছে। এ দৃশ্য দেখে রওনক জাহান মনে করেন, প্রাচীন পরিধেয় বস্ত্রের চেয়ে বর্তমান যুগের পরিধেয় বস্ত্র অনেক রুচিশীল ও মার্জিত। কারণ এখন মানুষ বেমানান অলংকারও পরে না, যেটুকু পরে সেটুকু মানানসই।
তাছাড়া কেউ বর্তমান যুগে শুধু ধুতি ও খড়মও পরে না। নিজের রুচি ও সামর্থ্য অনুসারে গহনা পরে। তবে পুরুষরা মেয়েদের মতো অত গহনা আর পড়ে না। তাই আমি মনে করি, রওনক জাহানের বক্তব্য ‘কতকাল ধরে’ প্রবন্ধে পূর্ণ রূপে প্রতিফলিত হয়েছে।
Photo source by Google