অমর একুশে
রফিকুল ইসলামপ্রশ্ন- ১ ভাষা আন্দোলন ও ছাত্র সমাজের ভূমিকা
১। ইটের মিনারভেঙেছে ভাঙ্গুক! ভয় কী বন্ধু, দেখ একবার আমরা জাগরী চার কোটি পরিবার।
২। জ্বলে-পুড়ে-মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।
ক. ২১শে ফেব্র“য়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত কত তারিখে নেওয়া হয়?
খ. ২৬শে জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে কেন? বুঝিয়ে লেখ।
গ. প্রথম উদ্দীপকটি ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের কোন দিকটিকে প্রকাশ করছে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. দ্বিতীয় উদ্দীপকটি যেন ভাষা-আন্দোলনকারীদের মনোভাবকেই ধারণ করেÑ বিশ্লেষণ কর।
ক ২১শে ফেব্র“য়ারিকে রাষ্ট্রভাষা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ৪ঠা ফেব্র“য়ারি ১৯৫২ তারিখে।
খ রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে ঘোষণা করায় ২৬শে জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে।
১৯৫২ সালের ২৬শে জানুয়ারি খাজা নাজিমউদ্দিন ঢাকায় নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগের সভাপতির ভাষণে ঘোষণা করেন যে, “উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।” দেশের ছাত্রসমাজ এ ঘোষণার প্রতিবাদ জানায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে এবং ৩০শে জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র-ধর্মঘট পালিত হয়।
গ প্রথম উদ্দীপকে পাকিস্তানিদের ধ্বংসাত্মক দিকের পাশাপাশি বাঙালির লড়াকু মনোভাবও প্রকাশ পেয়েছে।
উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা এমন ঘোষণার প্রতিবাদে ছাত্ররা রাজপথে আন্দোলনে নামে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বর্বর পাক-বাহিনী রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মিছিলে গুলি চালায়। শহিদদের স্মরণে ২৩শে ফেব্রুয়ারি একটি শহিদ মিনার তৈরি করা হয়।
উদ্দীপক (১)-এ দেখা যাচ্ছে, শহিদ মিনার ভেঙে ফেলার কথা উঠে এসেছে। আলোচ্য প্রবন্ধের বর্ণনায় দেখি, ১৯৫২ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি শহিদদের উদ্দেশ্যে যে শহিদ মিনার তৈরি করা হয়, তা পাক-বাহিনী ভেঙে দিলেও আন্দোলনরত ছাত্ররা ক্ষিপ্ত হয়। একত্রে তারা আন্দোলন চালিয়ে যায় এবং দাবি আদায়ে সমর্থ হয়।
ঘ “দ্বিতীয় উদ্দীপকটি যেন ভাষা আন্দোলনকারীদের মনোভাবকেই ধারণ করে”Ñ উক্তিটি যথার্থ।
উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা এমন ঘোষণার প্রতিবাদে ছাত্ররা রাজপথে নামে। কিন্তু বর্বর পাকিস্তানিরা রাষ্ট্রভাষার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর গুলি চালায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রতিবাদী ছাত্র সমাজ দৃঢ় প্রত্যয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ করে।
১৯৫২ সালের ২৬শে জানুয়ারি খাজা নাজিমউদ্দিন ঘোষণা করেছিলেন যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তার এ ঘোষণায় বাঙালি ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। ৪ঠা ফেব্র“য়ারি ছাত্র-ধর্মঘটে সিদ্ধান্ত হয় ২১শে ফেব্র“য়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবসরূপে পালিত হবে। এ ঘটনার পর ২০শে ফেব্র“য়ারি সন্ধ্যায় নূরুল আমিন সরকার ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে শান্তিপূর্ণ ধর্মঘট পালন করে এবং পুলিশ মিছিলের ওপর গুলি চালায়। পুলিশের গুলি ভাষাপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ছাত্রসমাজকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ২২শে ফেব্র“য়ারি সমগ্র ঢাকার রাজপথ হয়ে ওঠে উত্তাল। বহু হতাহতের সঙ্গে এদিন শহিদ হনÑ শফিকুর রহমান, আবদুল আউয়াল, কিশোর অহিউল্লাহ। ২৩শে ফেব্র“য়ারি শহিদদের স্মরণে শহিদ মিনার নির্মিত হয়। কিন্তু পুলিশ তা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। এতে আন্দোলন আরো বেগবান হয়। বাংলা ভাষা প্রেমীরা কিছুতেই দমবার পাত্র নয়।
দ্বিতীয় উদ্দীপকটি ভাষা আন্দোলনকারীদের মনোভাবকেই ধারণ করেছে। তারা জ্বলেপুড়ে মরে ছারখার হলেও কখনো মাথানত করেনি।
প্রশ্ন- ২ ছাত্রসমাজের প্রতিবাদী চেতনা ও মাতৃভাষাপ্রেম
মাগো, ওরা বলে
সবার কথা কেড়ে নেবে।
তোমার কোলে শুয়ে
গল্প শুনতে দেবে না।
বলো, মা,
তাই কি হয়?
ক. মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের সামনে দ্বিতীয় দফা গুলিতে কে শহিদ হয়েছিলেন?
খ. ‘সরকার বস্তুতপক্ষে অচল হয়ে পড়ে’Ñ কেন?
গ. উদ্দীপকের ‘ওরা’ দ্বারা ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের কাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছেÑ বর্ণনা দাও।
ঘ. উদ্দীপকের সন্তানের আকুতিতে ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের ছাত্রসমাজের সংগ্রামী চেতনাই রূপায়িত হয়েছেÑ উক্তিটির যথার্থতা প্রমাণ কর।
ক মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের সামনে দ্বিতীয় দফা গুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবুল বরকত শহিদ হয়েছিলেন।
খ তীব্র আন্দোলন ও ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে সরকার বস্তুতপক্ষে অচল হয়ে পড়ে।
খাজা নাজিমউদ্দিন বাঙালিদের ভাষার অধিকার কেড়ে নিতে চাইলে এদেশের ছাত্র-জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে বেছে নেয় ধর্মঘট। সরকার ধর্মঘট ঠেকাতে ১৪৪ ধারা জারি করে। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় বের হলে পুলিশ গুলি চালায়। ২২শে ফেব্র“য়ারি আবার ছাত্ররা ধর্মঘট ও হরতাল পালন করে। বারবার ধর্মঘট হরতাল আর উত্তাল ছাত্র আন্দোলনে দেশ অচল হয়ে পড়ে।
গ উদ্দীপকের ‘ওরা’ দ্বারা ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের পাকিস্তানের সামরিক জান্তা, সরকার প্রধান ও আমলাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন খাজা নাজিমউদ্দিন। তখন প্রতিবাদী জনতা এর বিরোধিতা করে আন্দোলনের পথে নামে।
‘অমর একুশে’ প্রবন্ধে বর্ণিত আছে, ১৯৫২ সালের ২৬শে জানুয়ারি খাজা নাজিমউদ্দিন ঢাকায় নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগের অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে ঘোষণা করেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। উদ্দীপকে ‘ওরা’ শব্দের মাধ্যমে মাকে তার ছেলে বলছে বাংলা ভাষা বিরোধীদের কথা এবং মায়ের ভাষায় মায়ের কোলে শুয়ে আর গল্প শুনতে পারবে না এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
ঘ ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধে ছাত্র সমাজ কর্তৃক বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার সংগ্রামী চেতনার সাথে উদ্দীপকে বর্ণিত সন্তানের আকুতির সাদৃশ্য রয়েছে।
উদ্দীপক থেকে জানা যায়, মায়ের কোলে শুয়ে সন্তান নানারকম রূপকথার গল্প শোনে। এমন সব গল্পের কথা যদি কেউ কেড়ে নিতে চায় তাহলে সন্তানের আক্ষেপ হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। মায়ের কাছ থেকে মাতৃভাষা বাংলায় গল্প না শুনে, সন্তানকে শুনতে হবে ভিনদেশি কোনো ভাষার গল্প তা কখনো হতে পারে না।
‘অমর একুশে’ প্রবন্ধেও মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সংগ্রামী চেতনার বিষয়টি দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে মাতৃভাষার জন্য ছাত্রসমাজ নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছে। ভাষার জন্য সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ নাম না জানা আরো অনেকে শাহাদত বরণ করেন।
আলেচনার প্রেক্ষিতে দেখা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত সন্তান মায়ের ভাষায় গল্প শোনার আকুতি জানায়। আর এতে বাধাদানকারীর প্রতি এক প্রচ্ছন্ন ক্ষোভও তার আকুতিতে ফুটে ওঠে। একইভাবে ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধেও আমরা লক্ষ করি যে, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে এদেশের ছাত্রসমাজ তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সন্তানের আকুতিতে ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের ছাত্রসমাজের সংগ্রামী চেতনাই রূপায়িত হয়েছে।
প্রশ্ন- ১ রক্তস্নাত পথ ধরে অধিকার আদায়
শহিদ নূর হোসেন এই বাংলাদেশেরই এক গর্বিত সন্তান। স্বৈরাচার উৎখাত ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সে নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে ঢাকার রাজপথে। এদেশের সাধারণ মানুষের ওপর স্বৈরাচারী সরকার এক অপশাসন চাপিয়ে দিয়েছিল। কেড়ে নিয়েছিল মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। সাধারণ মানুষের স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য নূর হোসেন রাজপথে নেমেছিল। নিজের শরীরে অঙ্কন করেছিল ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’- এ স্লোগানটি। কিন্তু সেদিন স্বৈরাচার সমর্থিত পুলিশ সদস্যরা নূর হোসেনের বুকে গুলি চালায়। নূর হোসেন নিজের জীবন দিয়ে রক্ষা করলেন গণতন্ত্রকে। নূর হোসেনের রক্তে ধুয়ে মুছে গেল স্বৈরাচারী অপশাসন। প্রতিষ্ঠিত হলো গণতন্ত্র।
ক. কখন থেকে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়? ১
খ. বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগ্রাম পরিষদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল কেন? ২
গ. উদ্দীপকের নূর হোসেনের মধ্যে ভাষা শহিদদের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে- ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. ‘নূর হোসেনের রক্তে ধুয়ে মুছে গেল স্বৈরাচারী অপশাসন’Ñ উক্তিটি ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ কর। ৪
ক ১৯৪৮ সাল থেকে প্রকৃতপক্ষে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।
খ ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করাই ছিল বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ প্রতিষ্ঠা করার একমাত্র কারণ।
১৯৫২ সালের ২৬শে জানুয়ারি খাজা নাজিমউদ্দিন ঢাকায় নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগের অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে ঘোষণা করলেন যে, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’ তখন ঢাকার ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। প্রতিবাদস্বরূপ ৩০শে জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। তাই সব ছাত্রকে ঐক্যবদ্ধ করে ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ।
গ উদ্দীপকের নূর হোসেনের মধ্যে ভাষা শহিদদের প্রতিবাদী দিকটি ফুটে উঠেছে।
ভাষা শহিদরা মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। জীবনের বিনিময়ে হলেও মাতৃভাষার অধিকার ফিরে পেতে চায় ভোতাপ্রেমিরা। নূর হোসেন গণতন্ত্রের সৈনিক। স্বৈরাচারী অপশাসনের হাত থেকে সে মুক্তি চায়। নূর হোসেনের মধ্যে ভাষাশহিদের মতো অধিকার আদায়ে সংগ্রামশীল মনোভাব লক্ষণীয়।
উদ্দীপকের নূর হোসেন যেমন গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্য বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়েছিল, তেমনি ভাষাশহিদরাও মায়ের ভাষা রক্ষা করার জন্য বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করেছিল। নূর হোসেন যেন ভাষা শহিদের চেতনারই প্রতিরূপ।
ঘ “নূর হোসেনের রক্তে ধুয়ে মুছে গেল স্বৈরাচারী অপশাসন” উক্তিটি প্রাসঙ্গিক।
ভাষাশহিদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি। কারণ খাজা নাজিমউদ্দিন যখন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করল তখন ঢাকার ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে ফেটে পড়ল। ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করলে ছাত্রসমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। পুলিশ মিছিলের ওপর গুলি চালালে বহু ছাত্র হতাহত হয়। সেদিন পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় রফিক, জব্বার, সালাম ও বরকত। ভাষাশহিদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেলাম মায়ের ভাষা।
উদ্দীপকের শহিদ নূর হোসেন এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও এদেশের সাধারণ মানুষকে স্বৈরাচারী শাসকের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নূর হোসেন রাজপথে নেমেছিল। বুকে ও পিঠে অঙ্কন করেছিল ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’- এই স্লোগানটি। সেদিন পুলিশের গুলিতে রাজপথে লুটিয়ে পড়ে নূর হোসেন। নূর হোসেনের রক্তপিচ্ছিল পথ ধরে আসে গণতন্ত্রের শাসন। নূর হোসেনের রক্তের বিনিময়ে এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো।
তাই বলা যায় যে, ‘নূর হোসেনের রক্তে ধুয়ে মুছে গেল স্বৈরাচারী অপশাসন’ উক্তিটি ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের ভাষাশহিদদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রশ্ন- ২ ল্ফল্ফ অধিকার আদায়ে আপসহীন
কেতুপুর গ্রামের মানুষ পদ্মার চরে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। মাঠের ফসল ঘরে এলেই কেতুপুর গ্রামের মানুষের মুখে হাসি ফোটে। কিন্তু জোতদার রহমত ব্যাপারি ও তার দল কৃষকদের পাকা ধানের ভাগ পেতে চায়। তারা কেড়ে নিতে চায় কৃষকদের মাঠের ধান। কৃষকদের অধিকার কেড়ে নিয়ে তারা তাদের উদর পূর্তি করতে চায়। জোতদারদের লাঠিয়াল বাহিনী কেতুপুরের কৃষকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু কেতুপুরের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের প্রতিহত করে। তারা বলে, ‘জান দিমু, তবু ধান দিমু না।’
ক. ছাত্ররা কত জনের দলে ভাগ হয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রস্তুতি নিল? ১
খ. ছাত্ররা দলে দলে বিভক্ত হয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রস্তুতি নেয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর। ২
গ. উদ্দীপকের রহমত ব্যাপারির মধ্যে ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধে কাদের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে- ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. ‘জান দিমু, তবু ধান দিমু না।’Ñএ যেন ভাষাপ্রেমিকদেরই দাবি।-‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের আলোকে উক্তিটির বিচার কর। ৪
ক ছাত্ররা দশ জনের দলে ভাগ হয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রস্তুতি নিল।
খ পুলিশ যাতে রুখে দিতে না পারে তাই আন্দোলনের কৌশল হিসাবে ছাত্ররা দলে দলে বিভক্ত হয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রস্তুতি নেয়।
২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই ১৪৪ ধারা রক্ষায় পুলিশ বাহিনী তৎপর ছিল এবং সংখ্যায় তারা অনেক বেশি ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যদি একত্রিত হয়ে কোনো মিছিল বের করত, তবে পুলিশ সমবেত হয়ে তা সহজেই প্রতিহত করতে পারত। কিন্তু ১০ জনের দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন দিকে বিশৃঙ্খলাভাবে বিভিন্ন দিকে মিছিল করলে পুলিশ বিশেষ কিছু বুঝে উঠতে পারবে না। ফলে সহজেই ১৪৪ ধারা ভঙ্গ হবে। এ কারণেই ১০ জনের দলে বিভক্ত হয়ে ছাত্ররা বিক্ষোভ করল।
গ উদ্দীপকের রহমত ব্যাপারির মধ্যে ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।
হিংস্র, নরপশু, বিশ্বাসঘাতক পাকিস্তানিরা বাঙালির মাতৃভাষা কেড়ে নিতে চায়। রহমত ব্যাপারিও স্বার্থপর জুলুমবাজ। সাধারণ মানুষের কষ্টের ফসল কেড়ে নিতে চায়। রহমত ব্যাপারি যেন বর্বর পাকিস্তানিদেরই প্রেতাত্মা।
উদ্দীপকের রহমত ব্যাপারির মধ্যেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর মতো জুলুমবাজ মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। রহমত ব্যাপারি জোতদার মহাজন। তাই সে এলাকার নিরীহ কৃষকদের ওপর জুলুম করে। রহমত ব্যাপারির নির্দেশে তার লাঠিয়াল বাহিনী কেতুপুরের কৃষকদের ওপর আক্রমণ চালায়। কিন্তু কেতুপুরের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে লাঠিয়াল বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করে। এতে গাঁয়ের অনেক কৃষক হতাহত হয়। তাই বলা যায় উদ্দীপকের রহমত ব্যাপারির মধ্যে ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।
ঘ ‘জান দিমু, তবু ধান দিমু না’Ñএ যেন ভাষাপ্রেমিকদেরই দাবি উক্তিটি যথার্থ।
উদ্দীপকের কৃষকরা যেমন জীবনের বিনিময়ে হলেও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় ঠিক তেমনি ভাষাপ্রেমিকরাও তাদের জীবনের বিনিময়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছে। তাই কৃষকদের এ দাবি যেন ভাষাপ্রেমিকদেরই দাবি।
১৯৫২ সালের ২৬শে জানুয়ারি খাজা নাজিমউদ্দিন উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার পর থেকে এদেশের ছাত্রযুবসমাজের মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় বইতে থাকে। বিশেষ করে ঢাকার ছাত্রসমাজ এ ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ জানায়। তারা ২১শে ফেব্র“য়ারিকে রাষ্ট্রভাষা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ২১শে ফেব্র“য়ারির দিন ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করলে শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশে পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়। ফলে রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। রক্তের বিনিময়ে হলেও ভাষাপ্রেমিক ছাত্রযুবারা মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষা করবে। জীবন দেবে তবু তারা মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নিতে দেবে না।
উদ্দীপকের কেতুপুর গ্রামের কৃষকরা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য কঠোর সংগ্রাম করেছে। জুলুমবাজ রহমত ব্যাপারির হিংস্র থাবা থেকে নিজেদের ফসল রক্ষা করার জন্য কেতুপুর গ্রামের কৃষকরা মরণপণ লড়াই করেছে। তারা তাদের জীবন দিতে প্রস্তুত; তারপরও তাদের অধিকার কেড়ে নিতে দেবে না। তাদের একটাই কথা, ‘জান দিমু, তবু ধান দিমু না।’
তাই বলা যায়, প্রশ্নে উল্লিখিত মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রশ্ন- ৩ মাতৃভাষার প্রতি প্রগাঢ় প্রেম
ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশ দিয়েই চলতে থাকে মিছিলটা। মিছিলে অংশগ্রহণকারী সবাই উত্তেজিত, গলা ফাটিয়ে স্লোগান দিচ্ছে। আকাশে বাতাসে সে চিৎকার মিশে যাচ্ছে। তমালও স্লোগান দিচ্ছে। সে একজন মুটে। সকালে কাজের সন্ধানে বেরিয়েছিল। মিছিল দেখে মন খারাপ হয়ে গেল। কারণ মিছিলের দিনে বেশি রোজগার করা যায় না। হঠাৎ করেই বুঝতে পারল কীসের মিছিল। সঙ্গে সঙ্গে সে থমকে দাঁড়াল। তারপর মিছিলের সঙ্গে গলা মেলাল। খানিক বাদেই গোলাগুলি শুরু হলো। উড়ে এলো কাঁদানে গ্যাসের শেল। ঘুরে দৌড় দিল কলেজের গেটের দিকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। তমাল লুটিয়ে পড়ল পিচঢালা রাজপথে।
ক. ছাত্রছাত্রীরা কত জন মিলে দল গঠন করেছিল? ১
খ. নূরুল আমিন সরকারের পুলিশ হত্যার কারণ কী? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের বৈসাদৃশ্য নিরূপণ কর। ৩
ঘ. ‘উদ্দীপকটি তাৎপর্যগত দিক থেকে ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের সমগ্র ভাবকে ধারণ করে।’ উক্তিটির যথার্থতা যাচাই কর। ৪
ক ছাত্রছাত্রীরা দশ জন মিলে দল গঠন করেছিল।
খ নূরুল আমিন সরকারের পুলিশ হত্যার কারণ ছিল ভাষা আন্দোলনকে স্তিমিত করা।
‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’- খাজা নাজিমউদ্দিনের এই ঘোষণার পর থেকে ঢাকার ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। ৪ঠা ফেব্রুয়ারির ছাত্র ধর্মঘটে সিদ্ধান্ত হয় ২১শে ফেব্র“য়ারিকে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হবে। সরকার ঐদিন ১৪৪ ধারা জারি করে। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। পুলিশ মিছিলে গুলি চালিয়ে বহু ছাত্র হত্যা করে। তারপরও ভাষা আন্দোলনকে দমানো যাচ্ছে না। তারপর নূরুল আমিন সরকার ভাষা আন্দোলনকে স্তিমিত করার জন্য নারায়ণগঞ্জে একজন পুলিশ হত্যা ও একজন আনসার আহত করিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর দোষ চাপাতে চায়।
গ ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধে ২১শে ফেব্রুয়ারিতে ছাত্র-জনতার সামগ্রিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়েছে। আর উদ্দীপকে মিছিলে অংশগ্রহণরত তমালের কথা বলা হয়েছে, যা ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের সঙ্গে বৈসাদৃশ্য সৃষ্টি করে।
উদ্দীপকের তমাল একজন মুটে। কিন্তু এই চরম দৈন্যও তমালের ভাষাপ্রেমকে আটকে রাখতে পারেনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশ দিয়ে মিছিলটা যাচ্ছিল, কাজের খোঁজে বের হওয়া তমাল প্রথমে বুঝতে পারেনি। কিন্তু মিছিলের কারণ যখন তার কাছে স্পষ্ট হলো, তখন সে সচেতন হয়ে গেল। ভাষার প্রতি আন্তরিক দরদ থাকায় সেও পা বাড়াল মিছিলে। ঝাঁঝাল গলায় স্লোগান দিতে লাগল। খানিক বাদেই মিছিলে পুলিশ আক্রমণ চালাল। এলোপাতাড়ি গোলাগুলি চলল। সে গুলির একটা বুলেট তমালের প্রাণ কেড়ে নিল। ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় ছাত্রজনতার আন্দোলনের ধারাবাহিক কর্মকাণ্ড ফুটে উঠেছে। উদ্দীপকে কেবল তমালের অংশগ্রহণ তথা ত্যাগের চিত্র ফুটে উঠেছে।
উদ্দীপকের তমালের আত্মাহুতি ভাষা আন্দোলনের মূল চেতনাকে ধারণ করলেও ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের সামগ্রিক ভাবকে ধারণ করে না। তাই একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় উদ্দীপকের সঙ্গে ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ “উদ্দীপকটি তাৎপর্যগত দিক থেকে ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের সমগ্র ভাবকে ধারণ করে” মন্তব্যটি প্রাসঙ্গিক।
‘অমর একুশে’ প্রবন্ধে ভাষা আন্দোলনের স্বরূপ প্রতিফলিত হয়েছে। ১৯৫২ সালের ২৬শে জানুয়ারি পাকিস্তান মুসলিম লীগের অধিবেশনে খাজা নাজিমউদ্দিন ঘোষণা দেন পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। এ খবর শুনেই ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ২১শে ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিরামহীন আন্দোলন চলে। এতে বহু মানুষ শহিদ হয়। তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় প্রিয় মাতৃভাষার অধিকার।
উদ্দীপকে তমাল একজন সামান্য মুটে। একদিন কাজের খোঁজে বের হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মোড়ে আসতেই সে মিছিল দেখল। যখন সে বুঝল যে, এ আন্দোলন ভাষা রক্ষার আন্দোলন, তখন তার মধ্যে ভাষার প্রতি মমত্ববোধ জাগ্রত হয়। সে চেতনায় তমাল মিছিলে যোগ দেয়। কিন্তু হঠাৎ করেই পুলিশ মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। আর পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে প্রাণ হারায় তমাল।
স্বচ্ছ দৃষ্টিতে আমরা তমালকে দেখলে প্রাথমিক অবস্থায় তার মধ্যে ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে লক্ষ করা যায় না। কিন্তু মিছিলে অংশগ্রহণ করে তার মধ্যে ভাষা আন্দোলনের চেতনা জাগ্রত হয়েছে। তাই তাৎপর্যগত দিক থেকে তমাল ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের সমগ্র ভাবকে ধারণ করে এরূপ মন্তব্য প্রাসঙ্গিক।
প্রশ্ন- ৪ ভাষা শহিদ মায়েদের অপেক্ষার প্রহরগোনা
বিধবা আম্বিয়া সারাক্ষণই তাকিয়ে থাকে রেললাইনের দিকে। মানুষকে দেখলেই প্রশ্ন করে তার খোকাকে তারা দেখেছে কিনা। খোকা তার বাড়ি আসবে এই রেললাইন দিয়ে। ট্রেন এলে ছুটে যায় ট্রেনের কাছে। আধাপাগল এ মহিলাটি জানে না যে, তার ছেলে আর বাড়ি ফিরবে না। ছেলের মৃত্যুতে মানসিক ভারসাম্যহীন আম্বিয়া এখন উন্মাদ। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্র“য়ারি পুলিশের গুলিতে শহিদ হয় খোকা। শহিদের রক্ত আর ছেলেহারা মায়ের অশ্র“তে সিক্ত হয় রাজপথ।
ক. কে ১৪৪ ধারা জারি করে? ১
খ. ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার পক্ষে মনোবল গড়ে তোলা হয় কীভাবে? ২
গ. উদ্দীপকের খোকা চরিত্রটি দ্বারা ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধে কাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছেÑ বর্ণনা কর। ৩
ঘ. “শহিদের রক্ত আর ছেলেহারা মায়ের অশ্র“তে সিক্ত হয় রাজপথ”- ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের আলোকে উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর। ৪
ক নূরুল আমিন সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে।
খ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার পক্ষে মনোবল গড়ে তোলার জন্য বহু প্লাকার্ড, ফেস্টুন তৈরিসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসগুলোতে।
ছাত্ররা ২১শে ফেব্র“য়ারি ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে সব সভা, মিছিল বন্ধ ঘোষণা করে। ভাষাপ্রেমিক ছাত্ররা মাতৃভাষা রক্ষার জন্য ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার পক্ষে মনোবল গড়ে তোলার জন্য বহু প্লাকার্ড, ফেস্টুন তৈরি করে। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান খচিত প্লাকার্ড হাতে ছাত্ররা রাজপথে মিছিল করে।
গ উদ্দীপকের খোকা চরিত্রটি দ্বারা ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের ভাষা আন্দোলনের ভাষাশহিদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
‘অমর একুশে’ প্রবন্ধটিতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ১৯৫২ সালের ২৬শে জানুয়ারি খাজা নাজিমউদ্দিন উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর এদেশের মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিপ্লবী ছাত্র জনতা মিছিল নিয়ে রাস্তায় বের হয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশে পুলিশ মিছিলের ওপর গুলি চালায়। মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েÑ রফিক, বরকত, জব্বারসহ অনেকে। বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হলো রাজপথ।
উদ্দীপকের খোকা চরিত্রটি দ্বারা ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের ভাষাশহিদদের প্রতিচ্ছবি বোঝানো হয়েছে। খোকা মাতৃভাষা রক্ষা করার জন্য মায়ের কোল খালি করে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়। ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের ভাষাশহিদরাও মাতৃভাষা রক্ষার জন্য বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দেয়। উদ্দীপকের খোকা এবং আলোচ্য প্রবন্ধের ভাষাশহিদরা সবাই একই চেতনার সতীর্থ। সুতরাং খোকা চরিত্র দ্বারা ভাষাশহিদদেরই বোঝানো হয়েছে।
ঘ ‘শহিদের রক্ত আর ছেলেহারা মায়ের অশ্র“তে সিক্ত হয় রাজপথ’Ñ উক্তিটি যথার্থ।
প্রবন্ধটি ১৯৫২ সালের ইতিহাস, বাঙালির মাতৃভাষা রক্ষা করার এক বিষাদময় ইতিহাস। খাজা নাজিমউদ্দিনের উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার পর এদেশের ছাত্র-জনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৩০শে জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। ২১শে ফেব্র“য়ারি ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ ধর্মঘটে পুলিশ বেপরোয়া গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে শহিদ হনÑ রফিক, জব্বার ও আবুল বরকত। তারা আর কোনোদিন মায়ের কোলে ফিরবে না। মায়ের ভাষাকে মর্যাদা দিতে গিয়ে বুকের তাজা রক্তে তারা লাল করল ঢাকার রাজপথ।
উদ্দীপকে ছেলেহারা মায়ের অশ্র“তে মুছে যায় রক্তের লাল দাগ। সন্তানকে হারিয়ে মায়েরা হয় পাগলপারা। দিশাহারা হয়ে ঘুরতে থাকে দিগি¦দিক। সন্তানহারা মায়ের হাহাকার আর তাদের বুকের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি মাতৃভাষা।
শহিদের তাজা রক্ত আর সন্তানহারা মায়ের চোখের জলের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি প্রিয় মাতৃভাষা। তাই বলা যায় প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ।
অনুশীলনের জন্য সৃজনশীল প্রশ্নব্যাংক (উত্তরসংকেতসহ)
প্রশ্ন- ৫ বীর বাঙালির সংগ্রাম ও রক্তদানের মহিমা
ভাষা শহিদ জাকির হোসেন। তিনি ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলার জন্য আন্দোলন করেছেন। কারণ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এদেশের ছাপান্ন ভাগ মানুষের মুখের ভাষার পরিবর্তে উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু জাকির হোসেনের মতো বাংলার অনেক দামাল ছেলে তাদের অন্যায় দাবি মেনে না নিয়ে রাজপথে আন্দোলন শুরু করে। তাঁরা তাদের রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষা বাংলার দাবি সুপ্রতিষ্ঠিত করে।
ক. ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার জন্য প্রতি দলে কত জন ছাত্রছাত্রী ছিল? ১
খ. ‘এতবড় শোভাযাত্রা ঢাকায় তখন পর্যন্ত আর কোনোদিন হয়নি’- এ কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? ২
গ. উদ্দীপকটি ‘অমর একুশে’ রচনার কোন দিকটিকে ইঙ্গিত করে- ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. উদ্দীপকের জাকির হোসেনের মতো ভাষাশহিদদের স্মৃতি অর্পণ করা হয়েছে ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধে বিশ্লেষণ কর। ৪
ক ১৪৪ ধারা ভঙ্গের জন্য প্রতি দলে ১০ জন ছাত্রছাত্রী ছিল।
খ উদ্ধৃত উক্তিটি দ্বারা ২২শে ফেব্রুয়ারি শহিদদের জানাজা শেষে যে শোভাযাত্রা বের হয়েছিল তার কথা বলা হয়েছে।
২১শে ফেব্রুয়ারিতে যাঁরা শহিদ হন, তাঁদের জন্য হাজার হাজার ছাত্র-জনতা একটি গায়েবি জানাজায় সামিল হন। জানাজা শেষে একটি শোক-শোভাযাত্রা বের হয়, যার কথা উদ্ধৃত উক্তিটিতে বলা হয়েছে।
ঢপষঁংরাব লিংক : প্রয়োগ (গ) ও উচ্চতর দক্ষতার (ঘ) প্রশ্নের উত্তরের জন্য অনুরূপ যে প্রশ্নের উত্তর জানা থাকতে হবে-
গ ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগের বিষয়টি তুলে ধরে উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ আলোচনা করতে হবে।
ঘ ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের সকল ক্ষেত্রে ভাষা শহিদদের প্রতি স্মৃতি অর্পণ করা হয়েছে উদ্দীপকের সাথে এ বিষয়েও তুলনামূলক আলোচনা করতে হবে।
প্রশ্ন- ৬ বাংলা ভাষার মহিমা
‘জ্ঞানী গুণী এই ভাষাতে লেখন লেখেন দিনে রাতে
ভাবের মানিক রতন দিয়ে ভরান ভাষার ডেরা
ও ভাই-মাতৃভাষা বাংলা আমার সকল ভাষার সেরা।’
ক. কে বাঙালির নির্মিত শহিদ মিনার ধ্বংস করে? ১
খ. মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা রাতারাতি শহিদ মিনার নির্মাণ করেন কেন? ২
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘অমর একুশে’ রচনার সাদৃশ্য নিরূপণ কর। ৩
ঘ. উদ্দীপকে মাতৃভাষার প্রতি যে মমত্ববোধ ফুটে উঠেছে ‘অমর একুশে’ রচনার আলোকে বিশ্লেষণ কর। ৪
ক পাকিস্তানি পুলিশ শহিদ মিনারটি ধ্বংস করে।
খ ভাষা-শহিদদের স্মৃতিরক্ষার্থে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা রাতারাতি শহিদ মিনার নির্মাণ করেন।
১৯৫২ সালের ২১শে এবং ২২শে ফেব্রুয়ারি ভাষা-আন্দোলনের ছাত্র-ছাত্রী-জনতার অনেকে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন। তাঁদের এ আত্মত্যাগের স্মৃতি ধরে রাখতেই শিক্ষার্থীরা রাতারাতি শহিদ মিনার তৈরি করেন।
ঢপষঁংরাব লিংক : প্রয়োগ (গ) ও উচ্চতর দক্ষতার (ঘ) প্রশ্নের উত্তরের জন্য অনুরূপ যে প্রশ্নের উত্তর জানা থাকতে হবে-
গ উদ্দীপক ও ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের আলোকে মাতৃভাষার শ্রেষ্ঠত্ব ব্যাখ্যা করতে হবে।
ঘ মাতৃভাষা রক্ষার প্রতি ভাষা শহিদদের যে মমতা ফুটে উঠেছে তা উদ্দীপক ও ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের আলোকে ব্যাখ্যা করতে হবে।
প্রশ্ন- ৭ অধিকার আদায়ে দৃঢ় সংকল্প
ক. বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি কাদের? ১
খ. নুরুল আমিন কীভাবে পূর্ব বাংলায় দমন নীতির স্টিমরোলার চালায়? ২
গ. ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ ও ‘বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা’। এই সেøাগানগুলো অমর একুশে প্রবন্ধের কোন দিক তুলে ধরে- ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. চিত্রটি ‘অমর একুশে’ প্রবন্ধের মূলভাব ধারণ করে কি- মতের পক্ষে যুক্তি দাও। ৪
ক বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি পূর্ব পাকিস্তানের সকল জনগণের।
খ নুরুল আমিন পূর্ব বাংলার মানুষদের নানারকম মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে দমন নীতির স্টিমরোলার চালায়।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়ে ভাষা-আন্দোলনকারীদের নানা মিথ্যে নামে আখ্যা দেওয়া হয়। তাদের ওপর মিথ্যে হত্যার দোষ চাপিয়ে নুরুল আমিন দমননীতি চালায়।
: প্রয়োগ (গ) ও উচ্চতর দক্ষতার (ঘ) প্রশ্নের উত্তরের জন্য অনুরূপ যে প্রশ্নের উত্তর জানা থাকতে হবে-
গ ছাত্রদের আন্দোলনের বিষয়টি তুলে ধরে উদ্দীপকের চিত্রের সাথে প্রাসঙ্গিক আলোচনা করতে হবে।
ঘ চিত্রটি অমর একুশে ফেব্রুয়ারির আংশিক মূলভাব ধারণ করে তা তুলে ধরতে হবে।