ষষ্ঠ শ্রেণি, বাংলা ১ম পত্র, তোলপাড়, সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর


তোলপাড়

শওকত ওসমান।

সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর   
প্রশ্ন- ১  
রিকশায় ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়ে আমিন সাহেব পায়ে ভীষণ ব্যথা পেলেন। ফারুক তাঁকে উঠিয়ে পরিচয় জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা আমিন। ফারুক তাঁকে সালাম জানিয়ে কাছের বন্ধুদের ডেকে এনে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। মুক্তিযোদ্ধা আমিন সুস্থ হয়ে ফারুককে কিছু বখশিশ দিতে চাইলে ফারুক একজন মুক্তিযোদ্ধার সেবা করতে পারাকেই বড় বখশিশ বলে জানায়।

ক.    সাবুর মায়ের নাম কী?
খ.    ‘আর এখন কিছু করতে না পারলে অসোয়াস্তি’ Ñ সাবুর এই মনোভাবের কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ.    উদ্দীপকের মুক্তিযোদ্ধা আমিনের সঙ্গে ‘তোলপাড়’ গল্পের মিসেস রহমানের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ.    তুমি কি মনে কর ফারুকের ভূমিকা ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবুর ভূমিকারই প্রতিচ্ছবি? তোমার সপক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তর

 ক     সাবুর মায়ের নাম জৈতুন বিবি।
 খ     হানাদার বাহিনীর অত্যাচারে বিপদগ্রস্ত মানুষদের জন্য সাধ্যমতো কিছু করতে না পারার বিরক্তিবোধ থেকে সাবুর মধ্যে অসোয়াস্তি হয়।
সাবু শহর থেকে আগত বিপদগ্রস্ত হাজার হাজার মানুষকে মুড়ি ও পানি পান করিয়ে সান্ত¡না খোঁজে। কিন্তু সাবু ভেবে পায় না কীভাবে সে তাদের আরো অধিক উপকার করবে। সাবু পূর্বে কারো ফরমায়েশ খাটতে খুব বিরক্তবোধ করত কিন্তু যুদ্ধের সময় শহর থেকে জীবন হাতে নিয়ে পালানো বিপর্যস্ত মানুষগুলোর জন্য কিছু করতে না পারায় সে মনে মনে অস্বস্তিবোধ করেছে এবং সে তাদের জন্য আন্তরিকভাবে আরো বেশি কিছু করতে চায়। মূলত আলোচ্য অংশে সাবুর মনের আবেগই প্রতিফলিত হয়েছে।
 গ     উদ্দীপকের মুক্তিযোদ্ধা আমিনের সঙ্গে ‘তোলপাড়’ গল্পের মিসেস রহমানের বিপদে পড়ার ঘটনা ও মহানুভবতার সাদৃশ্য রয়েছে।
উদ্দীপকে মুক্তিযোদ্ধা আমিন সাহেব রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে ভীষণ ব্যথা পেলেন এবং তার সাহায্যে এগিয়ে এলেন ফারুক। উদ্দীপকে মুক্তিযোদ্ধা আমিনের মতো মিসেস রহমান মুক্তিযুদ্ধকালীন শহর থেকে গাবতলি গ্রামে বিপদে পড়ে উপস্থিত হলেন এবং এই বিপদের দিন সাবু তাকে খাবার ও পানি পান করিয়ে তৃপ্ত করলেন। উদ্দীপকের আমিন সাহেব চিকিৎসা শেষে কৃতজ্ঞতাবশত ফারুককে বখশিশ দিতে চেয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিলেন। অপরদিকে মিসেস রহমানও সাবুর প্রতি খুশি হয়ে তাকে পাঁচ টাকা বখশিশ দিতে চেয়ে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাইলেন।
তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের মুক্তিযোদ্ধা আমিনের সঙ্গে ‘তোলপাড়’ গল্পের মিসেস রহমানের উদারতার দিক থেকে দারুণ মিল রয়েছে।
 ঘ  ফারুকের ভূমিকা ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবুর ভূমিকারই প্রতিচ্ছবি- মন্তব্যটি যথার্থ।
‘তোলপাড়’ গল্পে আমরা দেখি সাবু বিভিন্ন ভাবে শহর থেকে গ্রামে আসা হাজার হাজার মানুষকে মুড়ি ও পানি পান করিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করেছে। সে অন্য সময় কোনো কাজের ফরমায়েশ পেলে বিরক্তবোধ করলেও মুক্তিযুদ্ধকালীন বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাধ্যমতো উপকার করতে না পেরে আফসোস বা অস্বস্তিবোধ করছিল। কিন্তু তাকে তার কাজের বিনিময়ে কেউ বখশিশ দিতে চাইলে সে তা নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
পক্ষান্তরে উদ্দীপকের ফারুক একজন মুক্তিযোদ্ধাকে যথার্থ মর্যাদা দেয়ার জন্য আহত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তোলে। মুক্তিযোদ্ধা আমিন ফারুককে বখশিশ দিতে চাইলে ফারুক তা নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং ফারুক তাকে জানায় একজন মুক্তিযোদ্ধার সেবা করাই তার বড় বখশিশ।
তাই এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় ফারুকের ভূমিকা ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবুর ভূমিকারই প্রতিচ্ছবি।

প্রশ্ন- ২

রসুলপুর এলাকায় হঠাৎ নাম না জানা এক ভাইরাসের আক্রমণে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। কয়েকজনের মৃত্যুর খবর দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। দু-চারদিনের মধ্যেই তা মহামারীর আকার ধারণ করে। এলাকার মানুষ ভয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছিল। এসব দেখে নিঃসন্তান বিধবা করিমন্নেসা তার বাড়ির যুবক ছেলেদেরকে অসুস্থ লোকদের সহায়তার পরামর্শ দেন। বাড়ির কিছু ছেলে এ পরামর্শ না শুনে ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। আর অন্যরা বাড়িতে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেয়। এসব দেখে করিমন্নেসা মর্মাহত হয়ে নিজেই অসুস্থ রোগীদের সেবা শুরু করলেন এবং অনেককে সুস্থ করে তুললেন।

ক.    সাবু চিৎকার করে কাকে ডাকছিল?
খ.    ‘আমার মাকে আপনি চেনেন না’ Ñ এ কথা দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ.    করিমন্নেসার চরিত্রে জৈতুন বিবির যে বৈশিষ্ট্যটি পরিলক্ষিত হয়Ñ ব্যাখ্যা কর।
ঘ.    করিমন্নেসার বাড়ির ছেলেদের কর্মকাণ্ডই কি ‘তোলপাড়’ গল্পের প্রতিচ্ছবি? Ñ তোমার মতামত উপস্থাপন কর।



উত্তর

  ক     সাবু চিৎকার করে তার মাকে ডাকছিল।
 খ     ‘আমার মাকে আপনি চেনেন না’Ñ এ কথা দ্বারা সাবু তার মায়ের আদর্শ ও কঠোরতার কথা বুঝিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে হাজার হাজার মানুষ বিপদে পড়ে শহর ছেড়ে গ্রামে আসতে লাগল। শহর থেকে আগত মানুষকে মুড়ি ও পানি পান করানোর সময় মিসেস রহমান নামের একজন প্রৌঢ় মহিলা সাবুর প্রতি খুশি হয়ে তাকে বখশিশ দিতে চাইলে  সে নিতে চায় না। মিসেস রহমান তাকে কয়েক বার অনুরোধ করলে তখন সাবু তাকে বলল, আমার মাকে আপনি চেনেন না। সে তার মায়ের সততা, কঠোরতা ও আদর্শকেÑ এ উক্তির মাধ্যমে মিসেস রহমানকে বোঝাতে চেয়েছে।
 গ     করিমন্নেসার চরিত্রে জৈতুন বিবির পরোপকারিতার বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় ।
উদ্দীপকের করিমন্নেসা রসুলপুর এলাকার ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সেবা করে পরোপকারিতার মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ঠিক তেমনি ‘তোলপাড়’ গল্পের জৈতুন বিবিও মুক্তিযুদ্ধের সময় শহর থেকে আগত মানুষদের উপকার করার মাধ্যমে পরোপকারিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
জৈতুন বিবি নিজেদের খাবারের কথা চিন্তা না করে, শহর থেকে আগত মানুষদের খাওয়ার জন্য খুব ভোরে উঠে মুড়ি ভেজে ছেলেকে দিয়ে পাঠায়। এতে তার নিঃস্বার্থ পরোপকারিতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে, যা উদ্দীপকে করিমন্নেসার চরিত্রেও পরিলক্ষিত হয়।
 ঘ     “করিমন্নেসার বাড়ির ছেলেদের কর্মকাণ্ডই ‘তোলপাড়’ গল্পের প্রতিচ্ছবি।” এই মন্তব্যটি যথার্থ নয়।
সমাজে ভীরু সাহসী দু’রকম মানুষই লক্ষ করা যায়। অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসে, আবার অনেকে নিজের জীবনের মায়ায় বিপদ দেখে পালিয়ে যায় বা লুকিয়ে থাকে।
উদ্দীপকে রসুলপুর গ্রামে ভাইরাসের আক্রমণে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়লে করিমন্নেসা তার বাড়ির ছেলেদের পরামর্শ দেয় অসুস্থদের সেবা করার জন্য। কিন্তু বাড়ির কিছু ছেলে ভয়ে এলাকা ছাড়ে, অন্যরা নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেয়। ‘তোলপাড়’ গল্পে জৈতুন বিবি তার ছেলেকে অসহায় মানুষকে সাহায্য করতে বলে এবং প্রতিদানে কিছু নিতে নিষেধ করে। ছেলে মায়ের কথামতো সাধ্যমতো মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করে।
উদ্দীপকের ছেলেরা বিপদগ্রস্ত মানুষকে সেবা করার বদলে পালিয়েছে, অন্যদিকে গল্পের সাবু বিপদগ্রস্ত মানুষকে যথাসাধ্য সাহায্য করেছে। তাই বলা যায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ নয়।


অতিরিক্ত  সৃজনশীল, প্রশ্ন উত্তর


প্রশ্ন- ১

বারো বছরের বালক অজয়দের এলাকায় ডাকাত দল মাঝে মাঝেই বিভিন্ন বাড়িতে ডাকাতি করে, বহু লোক হত্যা করে। এরপর তারা বিভিন্ন বাড়ি থেকে যুবতি মেয়েদের অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে। তারা এলাকার মানুষকে দিনের পর দিন নির্মম নির্যাতন করে। অজয় বয়সে ছোট হলেও ডাকাত দলের এ অত্যাচার ও নির্মমতা দেখে তার মনে ঘৃণা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তাদের মোকাবিলা করার জন্য তার কিশোর মন চঞ্চল হয়ে ওঠে।

ক.    ঢাকা থেকে গাবতলি গ্রামের দূরত্ব কত ছিল?    ১
খ.    সাবুদের গাবতলি গ্রামে গোটা শহর হুমড়ি খেয়ে পড়ল কেন?    ২
গ.    অজয়দের এলাকার ডাকাত দলের সঙ্গে ‘তোলপাড়’ গল্পের কাদের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়Ñ নির্ণয় কর।    ৩
ঘ.    “উদ্দীপকের অজয় ও ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবু চরিত্রে প্রকাশিত ক্ষোভই অন্যায় দূরীকরণে সক্ষম” উক্তিটির পক্ষে তোমার মতামত দাও।    ৪


 ক     ঢাকা থেকে গাবতলি গ্রামের দূরত্ব ছিল পঞ্চাশ মাইল।
 খ     পাঞ্জাবি মিলিটারিদের অত্যাচারের থেকে বাঁচার জন্য সাবুদের গাবতলি গ্রামে গোটা শহর হুমড়ি খেয়ে পড়ল।
পঁচিশে মার্চের রাতে পাঞ্জাবি মিলিটারিরা ঢাকায় সাধারণ জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা জীবন্ত যাকে পেয়েছে তাকে হত্যা করেছে। তাই ঢাকার অসহায় জনগণ নিজের জীবন রক্ষার জন্য সবাই ঢাকা থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে রওনা হয়। হাজার হাজার মানুষ গাবতলি গ্রামের উপর দিয়ে জেলা বোর্ডের সড়ক অতিক্রম করে নিরাপদ আশ্রয়ের লক্ষ্যে যাত্রা করে এবং অনেকে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য রাস্তায় যাত্রা বিরতি করে। শহরের মানুষের ভিড়ে গ্রামটা ভরে ওঠে। এ কারণে বলা হয়েছে, সাবুদের গাবতলি গ্রামে গোটা শহর যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ল।
 গ     অজয়দের এলাকার ডাকাত দলের সঙ্গে ‘তোলপাড়’ গল্পের পাঞ্জাবি মিলিটারিদের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
অজয়দের এলাকায় ডাকাত দল হঠাৎ এক রাতে আক্রমণ করে এবং তারা বহু লোককে হত্যা করে। এছাড়া তারা বহু নারীকে অপহরণ করে নিয়ে তাদের জন্য মুক্তিপণ দাবি করে। তারা এলাকার মানুষকে দিনের পর দিন কঠিন নির্যাতন করে। ‘তোলপাড়’ গল্পেও বাঙালি জনগণের ওপর ২৫শে মার্চের রাতে পাঞ্জাবি মিলিটারিরা ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং নির্বিচারে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে। নারীদের অপহরণ করে নির্মম নির্যাতন চালায়।
উদ্দীপকের অজয়দের গ্রামে ডাকাত দলের আগমন ও ২১শে মার্চে ঢাকা শহরে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ একই রকম। তাদের নির্যাতনের ধরনও একই রকম। এই প্রেক্ষিতে বলা যায় উদ্দীপকের ডাকাত ও পাঞ্জাবিদের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে।
 ঘ     উদ্দীপকের অজয় ও ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবু চরিত্রে প্রকাশিত ক্ষোভই অন্যায় দূরীকরণে সক্ষম কথাটির সাথে আমি একমত।
উদ্দীপকে অজয়দের গ্রামে ডাকাত দল আক্রমণ করে বহু মানুষ হত্যা করে। অনেক নারীদের অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে। এতে অজয়ের মনে ঘৃণা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ‘তোলপাড়’ গল্পে পাকিস্তানি মিলিটারিরা ২৫শে মার্চ রাতে ঢাকা শহরের শত শত মানুষ হত্যা করে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। এতে সাবুর মনে পাকিস্তানি অত্যাচারীদের প্রতি ঘৃণা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
আমাদের সমাজে উদ্দীপক ও ‘তোলপাড়’ গল্পে উল্লিখিত অন্যায়ের মতো বহু অন্যায় সংঘটিত হয়। শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ তথা সর্বস্তরের মানুষের মনে এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সৃষ্টি হলে তারা এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেকোনো মানুষের দায়িত্বশীল উদ্যোগ সমাজ থেকে অন্যায় দূরীকরণে সক্ষম। যেমন : বাঙালিদের মনে সাবুর মতো ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়ার ফলেই আমরা পাকিস্তানিদের অপশাসন দূর করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের আমরা পরাজিত করেছি।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সাধারণ মানুষের মনে সঞ্চিত ক্ষোভ কোনো বড় শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রেরণা জোগায়। তাই বলা যায় অজয়, সাবু এদের মনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভই অন্যায় দমনে যথেষ্ট।

প্রশ্ন- ২   

শান্তিপূর্ণ গ্রামটা যেন হঠাৎ করেই মৃত্যুপুরী হয়ে গেল। কোথাও কোনো মানুষ নেই। এমনকি জীবজন্তুর চোখে পড়ে না। শুধু দু-একটা পাখি এদিক-ওদিকে ভীতস্বরে ডেকে উঠছে। পাশের ঝোপে লুকিয়ে এসব ভাবতে ভাবতেই আশ্চর্য হয় তাপস। তার বয়স পনেরো বছর। দুদিন আগে তাদের পাশের গ্রামে মিলিটারি এসেছে। তারপর থেকেই গ্রামটা নিশ্চুপ। এমন সময় পায়ের আওয়াজ শুনল তাপস। তারপর দেখল সবুজ হেলমেট আর খাকি পোশাক পরা মিলিটারিরা আসছে। খালি গ্রাম দেখে তারা শূন্য ঘরগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিল। এই দৃশ্য দেখে তাপস উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে। হাতের মুঠো শক্ত হয়। দৃঢ় শপথ নেয় একাকী দাঁড়িয়ে। এ অন্যায় রুখে দেবে সে, যেভাবেই হোক।

ক.    মিসেস রহমানের বাসা ঢাকার কোন এলাকায় ছিল?    ১
খ.    ‘গরিব হইতাম পারি, কিন্তু আমরা জানোয়ার না’Ñ উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।    ২
গ.    উদ্দীপকে ‘তোলপাড়’ গল্পের কোন ভাবটি প্রকাশ পেয়েছে?    ৩
ঘ.    “উদ্দীপকের তাপস ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবু চরিত্রেরই প্রতিনিধি।” বিশ্লেষণ কর।    ৪


 ক     মিসেস রহমানের বাসা ঢাকার লালমাটিয়া এলাকায় ছিল।
 খ     ‘গরিব হইতাম পারি, কিন্তু আমরা জানোয়ার না’Ñ উক্তিটি ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবুর।
‘তোলপাড়’ গল্পে মিসেস রহমান নামক একজন প্রৌঢ় নারী মুক্তিযুদ্ধের সময় শহর থেকে গাবতলি গ্রামে পৌঁছলে পথিমধ্যে তাকে সাবু নামের ওই গ্রামের একটি ছেলে পানি পান করায়। তিনি খুশি হয়ে তাকে পাঁচ টাকা বখশিশ দিতে চাইলে সাবু তা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাই সে মিসেস রহমানের টাকাটা না নিয়ে তাকে বলল, ‘গরিব হইতাম পারি, কিন্তু আমরা জানোয়ার না।’ সাবুর এ উক্তিটির মধ্যে তার পরোপকারিতা ও আদর্শের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
 গ     ‘তোলপাড়’ গল্পে পাকিস্তানি মিলিটারিদের অত্যাচারে সাবুর মনে প্রতিবাদ ও প্রতিশোধের যে মিশ্র ভাবটি সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়টিই উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।
‘তোলপাড়’ গল্পে দেখা যায়, মিলিটারিদের আক্রমণের পর ঢাকা শহর থেকে সাবুদের গ্রামে অত্যাচারিত মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। একদিন সাত-আট জনের একটা অসহায় পরিবার এলো। তিন বিধবা, পুত্রবধূ আর নাতি-নাতনি রয়েছে অসহায় বৃদ্ধের সঙ্গে। বৃদ্ধের সামনেই তার তিন পুত্রকে মিলিটারিরা হত্যা করেছে। তাদের কষ্ট দেখে সাবুর মনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরূপ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তার মনে বিদ্রোহের আগুন দানা বাধে।
উদ্দীপকে তাপস নামক ছেলেটির মধ্যেও সাবুর মতো দৃঢ়তা প্রকাশ পেয়েছে। তাপসদের গ্রাম হঠাৎ করেই মৃত্যুপুরীর মতো হয়ে গেছে। এর কারণ হলো পাশের গ্রামে মিলিটারির উপস্থিতি। একটি ঝোপে লুকিয়ে হঠাৎ তাপস মিলিটারিদেরকে দেখতে পায়। গ্রাম খালি দেখে ধ্বংসের নেশায় তারা জনশূন্য ঘরগুলোতে আগুন দিতে শুরু করেছে। তা দেখে তাপসের মনে বিদ্রোহ সৃষ্টি হয়। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, যেভাবেই হোক এ ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিশোধ সে নেবেই। এ থেকে বলা যায়, ‘তোলপাড়’ গল্পে অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার ও প্রতিশোধ নেওয়ার ভাবটিই উদ্দীপকে প্রদর্শিত হয়েছে।
 ঘ     পাকিস্তানি মিলিটারির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাবের দিক থেকে উদ্দীপকের তাপস ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবু চরিত্রের প্রতিনিধি।
‘তোলপাড়’ গল্পে সাবু নামক কিশোরের অটল সংকল্পের পরিচয় পাওয়া যায়। ঢাকা শহর থেকে দলে দলে মানুষ সাবুদের গ্রামে আসতে থাকে। মিলিটারির আক্রমণের বিভীষিকায় সবাই পালাতে চায়। কেউ বাবা হারিয়ে, কেউ মা হারিয়ে, কেউ ভাই হারিয়ে এক বুক শোক নিয়ে ছুটতে থাকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। তাদের সবার চোখে মুখে অনিশ্চয়তার ছাপ। এসব সাবুর সহ্য হয় না। ধীরে ধীরে তার মধ্যে বিদ্রোহভাব সঞ্চার হয়। এক সময় সে বোধ তোলপাড় রূপ ধারণ করে। পাকিস্তানি মিলিটারিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অগ্নিমশাল তোলপাড়।
উদ্দীপকেও তাপস নামের কিশোরের বিদ্রোহের ভাব স্পষ্ট হয়েছে। পাশের গ্রামে মিলিটারি আসায় তাদের গ্রামের সমস্ত মানুষ ভয়ে আত্মগোপন করল ফলে গ্রামে কোনো মানুষের চিহ্ন রইল না। ভয়ে গবাদি পশুগুলোও ডাকতে ভুলে গেছে। এরূপ নিশ্চুপ পরিবেশ তাপসের মনে প্রশ্নের সৃষ্টি করে। একটা ঝোপের ভেতর লুকিয়ে হঠাৎ তাপস সবুজ হেলমেট পরা মিলিটারিদের দেখতে পায়। গ্রামে মানুষ না পেয়ে পাশবিক আক্রোশে তারা শূন্যঘর পোড়াতে থাকে। এসব দেখে তাপস সহ্য করতে পারে না, চুপি চুপি এই পাশবিকতার প্রতিশোধের শপথ নেয়।
উদ্দীপকের তাপসের বিদ্রোহী মন যে ধরনের ঘটনার প্রেক্ষিতে জেগে উঠে। তেমনি ঘটনার প্রেক্ষিতে ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবুর মনও জেগে ওঠে। ঘটনার সূত্রে তাদের মনের ভাব অভিন্ন। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের তাপস ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবু চরিত্রের প্রতিনিধি।

প্রশ্ন- ৩ 

আবিদের বয়স ১৮ বছর। সে একজন রিকশাচালক। একদিন তার রিকশায় একজন বয়স্ক ভদ্রলোক ভুলে একটি ব্যাগ ফেলে চলে যায়। আবিদ ব্যাগের মধ্যে তার মোবাইল নম্বর খুঁজে পেয়ে তাকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। বয়স্ক ভদ্রলোকটি আবিদের ফোন পেয়ে দ্রুত ছুটে আসে এবং ব্যাগটি বুঝে পেয়ে সে আবিদকে ১০০ টাকা বখশিশ দিতে চাইলে আবিদ টাকাটি নিতে অস্বীকৃতি জানায়। আবিদ বলে, ‘মানুষের উপকার করার বিনিময়ে কিছু নেয়া উচিত নয়।’

ক.    ধলা পরির মতো দেখতে মহিলাটির নাম কী?    ১
খ.    “মাফ করবেন, টাকা নিলে আমারে মা বাড়ি থাইকা বাইর কইরা দিব” ব্যাখ্যা কর।    ২
গ.    উদ্দীপকে রিকশাচালকের সঙ্গে ‘তোলপাড়’ গল্পের কোন চরিত্রটির সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়? নিরূপণ কর।    ৩
ঘ.    ‘মানুষের উপকারের বিনিময়ে কিছু নেয়া উচিত নয়’ ‘তোলপাড়’ গল্পের আলোকে রিকশাচালক আবিদের উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।    ৪


 ক     ধলা পরির মতো দেখতে মহিলাটির নাম মিসেস রহমান।
 খ     মায়ের নৈতিকতাকে ভয় ও সম্মান দেখিয়ে সাবু প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছে।
সাবু তাদের গ্রামে আসা মিসেস রহমানের উদ্দেশ্যে কথাটি বলেছে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী সারা শহরে হামলা করে। নির্যাতিত মানুষ শহর ছেড়ে পালাতে থাকে। তেমনি কিছু পলায়নপর মানুষরা সাবুদের গ্রামে আসে। সাবুরা মুড়ি ভেজে তাদের খাওয়ায়। এদের একজন মিসেস রহমান। যিনি পানি পানের প্রতিদানস্বরূপ সাবুকে পাঁচটি টাকা দিয়েছিলেন। সাবু টাকা না নিয়ে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছিল।
 গ     উদ্দীপকে রিকশাচালকের সঙ্গে ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
উদ্দীপকে আবিদ রিকশাচালক হয়েও একজন বৃদ্ধ লোকের ব্যাগ ফিরিয়ে দেয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে। সে ব্যাগ ফেলে যাওয়া বৃদ্ধ লোকটির ব্যাগের মধ্যে ফোন নম্বর খুঁজে পেয়ে তাকে ফোন করে এবং ব্যাগটি ফিরিয়ে দেয়। সেই ভদ্রলোকটি তাকে ১০০ টাকা দিতে চাইলে সে দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও সেই টাকা নেয় না এবং বলে মানুষের উপকারের বিনিময়ে কিছু নেয়া উচিত নয়। ঠিক একইভাবে ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবুও মিসেস রহমানকে পানি পান করিয়ে উপকার করে তার বিনিময়ে মিসেস রহমান তাকে ৫ টাকা বখশিশ দিতে চাইলে সাবু তা ফিরিয়ে দেয়।
রিকশাচালক আবিদ ও সাবু দুজনই নিঃস্বার্থভাবে মানুষের উপকার করে। তাই বলা যায়, শহর থেকে আসা উদ্দীপকের রিকশাচালক ও ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে একইরূপ সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।
 ঘ      ‘মানুষের উপকারের বিনিময়ে কিছু নেয়া উচিত নয়’ রিকশাচালক আবিদের এ উক্তিটির মাধ্যমে তার অপূর্ব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, যা ‘তোলপাড়’ গল্পে আমরা সাবুর মধ্যেও লক্ষ করি।
‘তোলপাড়’ গল্পে সাবু মিসেস রহমান নামক একজন প্রৌঢ় নারীকে পথিমধ্যে পানি পান করালে তিনি খুশি হয়ে সাবুকে পাঁচ টাকা বখশিশ দিতে চান। আর সাবু তা নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং বলে যে তার মা বলেছে, ‘বিপদে পইড়া মানুষ বাড়ি আইলে কিছু লওয়া উচিত না।’ যার কারণে সে বখশিশ ফিরিয়ে দিয়েছে।
উদ্দীপকে রিকশাচালক আবিদ। তার রিকশায় একজন বৃদ্ধ লোকের ব্যাগ রয়ে গেলে সে তাকে ওই ব্যাগটি ফিরিয়ে দেয়। ব্যাগটি ফিরে পেয়ে ভদ্রলোকটি আবিদকে কিছু টাকা বখশিশ দিতে চাইলে আবিদ তা নিতে অস্বীকার করে। মানুষকে সাহায্য করা প্রতিটি মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। সে টাকাটি না নিয়ে বৃদ্ধ লোকটিকে বলল, মানুষের উপকারের বিনিময়ে কিছু নেয়া উচিত নয়।
রিকশাওয়ালা আদিম ও সাবু একেবারে নিঃস্বার্থভাবে মানুষের উপকারে এসেছে। মূলত উপকারের বিনিময়ে কোনো কিছু প্রত্যাশা করলে উপকারের যথার্থতা রক্ষিত হয় না। এতে মনুষ্যত্ববোধের বিকাশ ঘটে না। কারণ বিপদগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো মানুষের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। তাই বলা যায় মানুষের উপকারের বিনিময়ে কিছু নেয়া উচিত নয় উক্তিটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

প্রশ্ন- ৪ 

১৯৭১ সালের কথা। সোহানের বয়স তখন ১৮। দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। পাকবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে। অবাধে হত্যা করছে অগণিত নারী-পুরুষ। মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে। এ দৃশ্য দেখে সোহান আর সহ্য করতে পারল না। তার মনের মধ্যেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রতি ঘৃণা জন্মায়। সেও যুদ্ধে যাওয়ার জন্য মন স্থির করল। যাওয়ার সময় মাকে বলল, “আমি আমার বাংলাকে ভালোবাসি মা”।

ক.    শহর থেকে আসা মানুষের জন্য জৈতুন বিবি কী ভেজে দিয়েছিল?    ১
খ.    সাবুর শরীর থরথর করে কাঁপছে কেন?    ২
গ.    সোহানের মনের অবস্থার সঙ্গে কার মনের অবস্থার সাদৃশ্য রয়েছে- বর্ণনা কর।    ৩
ঘ.    “উদ্দীপক ও ‘তোলপাড়’ গল্পে মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতার সার্থক প্রকাশ ঘটেছে” মন্তব্যটি যাচাই কর।    ৪


 ক     শহর থেকে আসা মানুষের জন্য জৈতুন বিবি মুড়ি ভেজে দিয়েছিল।
 খ     ঢাকা শহরে পাঞ্জাবিরা গুলি করে মানুষ মারছে সে কথা মাকে বলতে গিয়ে সাবুর শরীর থরথর করে কাঁপতে থাকে।
শহর ছেড়ে পালিয়ে আসা মানুষের কাছে সাবু শুনতে পায় পাঞ্জাবি মিলিটারিরা নিরস্ত্র বাঙালিদের গুলি করে মারছে। সেই খবর সাবু মাকে দেয়ার জন্য দৌড়ে আসে। মা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখে সাবু কাঁপছে। তাকে খুব উত্তেজিত দেখাচ্ছে। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। কারণ হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে তার শরীর থরথর করে কাঁপতে থাকে।
 গ     উদ্দীপকের সোহানের মনের অবস্থার সাথে ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবুর মনের অবস্থার সাদৃশ্য রয়েছে। তারা দুজনই স্বদেশপ্রেমে উৎসাহী হয়ে মুক্তিযুদ্ধে যেতে চেয়েছে।
‘তোলপাড়’ গল্পে সাবুর মনের মধ্যে এক রকম যন্ত্রণা বিরাজ করছে। কেননা সে পাকিস্তানিদের বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতার কথা শুনেছে। নিরস্ত্র ও নিরীহ হাজার হাজার মানুষকে তারা গুলি করে মেরেছে। সবাই তাদের ভয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে পালাচ্ছে।
আলোচ্য উদ্দীপকে সোহান পাকিস্তানিদের নিষ্ঠুরতা দেখে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য মন স্থির করেছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্বিচারে মানুষকে হত্যা করছে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে, তাই সোহানের মনের মধ্যে একটা অশান্তি কাজ করছে। সে মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে দেশকে স্বাধীন করে ফিরে আসবে বলে মাকে কথা দিয়েছে। এ অবস্থা দেখে পাকিস্তানিদের অত্যাচারের মোকাবিলা করার জন্য সাবুর মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। সোহান ও সাবু দুজনের মনের মধ্যেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও দেশপ্রেমের একটি চিরন্তন রূপ প্রকাশিত হয়েছে। পাঠ্যপুস্তক এবং উদ্দীপকের প্রেক্ষিতে যা সাদৃশ্যপূর্ণ মনে করা যায়।
 ঘ     “উদ্দীপক ও ‘তোলপাড়’ গল্পে মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতার সার্থক প্রকাশ ঘটেছে” মন্তব্যটি যথার্থ।
পাকিস্তানি সৈন্যরা বাঙালির ওপর হায়েনার মতো নিষ্ঠুর আচরণ করেছে মুক্তিযুদ্ধের সময়। তারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা ও অমানবিক নির্যাতন করে পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত মানবতার কাছে তাদের হার মানতে হয়েছে।
আলোচ্য উদ্দীপক ও ‘তোলপাড়’ গল্পে মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতার চিত্র ফুটে উঠেছে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদাররা ঘুমন্ত, নিরস্ত্র, নিরীহ বাঙালিদের ওপর হিংস্র পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। শহর ও গ্রামের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে। যাকেই জীবন্ত পেয়েছে তাকেই হত্যা করেছে। নারী ও শিশুদের ওপর চালিয়েছে অমানবিক নির্যাতন; যা মধ্যযুগের নির্যাতনকেও হার মানায়। তাদের নির্মম নির্যাতনে মানুষ নিজের আশ্রয় থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের হাত থেকে ছোটবড়, বৃদ্ধ-শিশু কেউ রক্ষা পায়নি। তাদের অত্যাচার, অবিচার ছিল মানুষের জন্য চরম লজ্জার। আর এ বিষয়ই উদ্দীপক ও ‘তোলপাড়’ গল্পে যথার্থভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রশ্ন- ৫ 

হাসিমপুর গ্রামের এক বৃদ্ধা মেহেরুন্নেসা। তার এলাকায় একবার মহামারী দেখা দেয়। মহামারীর ভয়ে অনেক লোক গ্রাম থেকে পালিয়ে যায়। মেহেরুন্নেসা ও তার পুত্র বাবলু অসহায় মানুষের পাশে এগিয়ে আসে ও তাদের সেবা করে। তারা দুজনই মহামারীতে আক্রান্ত অসুস্থ লোকদের চিকিৎসা ও সেবার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলে।

ক.    জৈতুন বিবির ছেলের নাম কী?    ১
খ.    ‘ভিড় নয় স্রোত’ কোন কারণে এ কথা বলা হয়েছে?    ২
গ.    হাসিমপুর গ্রামের মেহেরুন্নেসার সঙ্গে ‘তোলপাড়’ গল্পের কার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় বর্ণনা কর।    ৩
ঘ.    ‘মেহেরুন্নেসা ও তার ছেলের কর্মকাণ্ডই ‘তোলপাড়’ গল্পের প্রতিচ্ছবি’ Ñ মন্তব্যটির ওপর তোমার মতামত ব্যক্ত কর।    ৪


 ক     জৈতুন বিবির ছেলের নাম সাবু।
 খ     প্রাণ বাঁচাতে শহর ছেড়ে আসা হাজার হাজার মানুষের ভিড়কে লেখক স্রোত বলে অভিহিত করেছেন।
১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর হাজার হাজার মানুষ শহর ছেড়ে চলে আসতে থাকে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবাই-গণ্যমান্য ব্যক্তি, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত প্রায় সব বয়সের সব শ্রেণির মানুষই একযোগে আসতে থাকে। তাদেরই সৃষ্ট ভিড়কে লেখক জনগণের স্রোত তথা স্রোত হিসেবে অভিহিত করেছেন।
 গ     ‘তোলপড়’ গল্পের সাবুর সঙ্গে মেহেরন্নেছার চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলতে হবে।
 ঘ     সাবু পলায়নপর পরিশ্রান্ত মানুষের সেবা করে যে উদায় মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে- ঠিক তেমনি উদ্দীপকের মেহেরুন্নেছার চরিত্রের সহানুভবতার দিকটি ফুটিয়ে তুলতে হবে।

প্রশ্ন- ৬

নদীর ধারে ছোট একটি গ্রাম নাম রূপনগর। কফিল উদ্দিন ছেলেমেয়ে নিয়ে ঐ গ্রামে সুখে-শান্তিতে বাস করত। তার ছোট ছেলের নাম শিশির। শিশিরের বয়স যখন আট বছর, তখন তার মা ও বড় বোনকে পাকিস্তানি বাহিনী জোর করে তুলে নিয়ে যায়। বাবাকে নির্যাতন করে ফেলে রাখে। এই ঘটনা শিশির নিজ চোখে দেখেছে। তারপর থেকেই সে পাকিস্তানিদের ঘৃণা করে।

ক.    ‘তোলপাড়’ গল্পটির রচয়িতা কে?    ১
খ.    ‘একদম পিলপিল মানুষের সারি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?    ২
গ.    উদ্দীপকে ‘তোলপাড়’ রচনার ‘সাবু’ চরিত্রের প্রকাশিত দিকটি ব্যাখ্যা কর।    ৩
ঘ.    উদ্দীপকটি ‘তোলপাড়’ সামগ্রিক ভাব ধারণ করে কি? মতের পক্ষে যুক্তি দাও।    ৪


 ক     ‘তোলপাড়’ গল্পটির রচয়িতা শওকত ওসমান।
 খ     পঁচিশে মার্চের রাতের ঘটনার পর শহর ছেড়ে আসা মানুষদের ভিড়কে পিলপিল পিঁপড়ের সারি বলা হয়েছে।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর হাজার হাজার মানুষ শহর ছেড়ে চলে আসে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। তারা দেশের বিভিন্ন গ্রামে বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় গ্রহণ করে। এরকমই শহর ছেড়ে আসা মানুষদের সারিকে পিলপিল পিঁপড়ের সারির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
 গ     ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবুর হানাদার বাহিনীর প্রতি সৃষ্ট ঘৃণার সাথে উদ্দীপকের শিশিরের ঘৃণার তুলনামূলক আলোচনা করতে হবে।
 ঘ     উদ্দীপকটি ‘তোলপাড়’ গল্পের সামগ্রিক ভাব ধারণ করে না। এ বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে হবে। কারণ উদ্দীপকে শুধু শিশিরের ঘৃণার বিষয়টি উঠে এসেছে।

প্রশ্ন- ৭


ক.    শওকত ওসমান কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?    ১
খ.    ‘অসীম আক্রোশে তার রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকে’-কেন?    ২
গ.    উদ্দীপকের ছবিটি ‘তোলপাড়’ গল্পের কীসের প্রতীক? নিরূপণ কর।    ৩
ঘ.    উপরের ছবির প্রেক্ষাপটই ‘তোলপাড়’ গল্পের মূল বিষয় মন্তব্যটি যাচাই কর।    ৪


 ক     শওকত ওসমান পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সবল সিংহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
 খ     পাক-বাহিনীর নির্মম অত্যাচারের চিত্র দেখে তাদের ওপর ক্ষোভ আর ঘৃণার আক্রোশে সাবুর রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকে।
মানুষের প্রতি হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুরতা অনুভব করে সাবু ক্ষুব্ধ হয়। শহর ত্যাগী মানুষের অসহায়ত্ব ও কষ্ট দেখে তার মন বেদনায় সিক্ত হয়ে ওঠে। পাকিস্তানিদের প্রতি তার ঘৃণা বেড়ে যায়।
 গ     উদ্দীপকের ছবিটি হানাদার বাহিনীকে রুখে দেওয়ার প্রতীক এ বিষয়টি আলোচনা করতে হবে।
 ঘ     উদ্দীপকে তুলে ধরা ছবিটির মধ্যেই ‘তোলপাড়’ গল্পের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়টি ফুটে উঠেছে সে বিষয়টি তুলে ধরতে হবে।

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال