পঞ্চম শ্রেণি - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা, প্রথম অধ্যায়- আকাইদ

 ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা

(প্রথম অধ্যায়:আকাইদ)

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নউত্তরঃ

১। ইমান শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে প্রথম ও প্রধান হচ্ছে ইমান। বিশুদ্ধ ইমান ছাড়া মুমিন হওয়া যায় না।
ইমান             একটি আরবি শব্দ। ইমান শব্দটি ‘আমনুন’ শব্দ হতে এসেছে। ইমান শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- বিশ্বাস স্থাপন, আস্থা স্থাপন, স্বীকৃতি দেয়া, মেনে নেয়া ইত্যাদি।
ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর অস্থিত্ব সম্পর্কে জানা এবং কবর কেয়ামত, হাশর, মিযান, জান্নাত ও জাহান্নামের উপর বিশ্বাস স্থাপন করার নামই হচ্ছে ইমান।
পরিশেষে বলা যায় আমরা ইমানের সাতটি বিষয়ের উপর বিশ্বাম রাখাব এবং সে অনুযায়ী আমল করব।

২। সারা বিশ্বের পালনকর্তা কে?
উত্তরঃ সমস্ত প্রশাংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সারা বিশ্বের প্রতিপালক। মহান আল্লাহ তায়ালা সারা বিশ্বের পালন কর্তা। তিনি সব কিছু লালন পালন করেন।
কুরআন মাজীদে বলা হয়েছেÑ                    (সুরা ফাতিহা)। “সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর যিনি সারা বিশ্বের পালনকর্তা।”
আল্লাহ আমাদের রব। আল্লাহ আমাদের পালনকর্তা। তিনি নিখিলবিশ্বের পালনকর্তা। আলো, বাতাস, পানি ও খাদ্য দিয়ে তিনি আমাদের লালন-পালন করেন। তিনি সবকিছু দিয়ে সারা বিশ্ব লালন-পালন করেন। তাঁর নিয়ামত লাভ করে আমরা বেঁচে আছি।
অতএব আমরা আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হব এবং তাঁর সৃষ্টিকে যথাসাধ্য লালন-পালন করব।

৩। আমাদের দীনের নাম কী?
উত্তরঃ আল্লাহ তায়ালার অনুগত্যের নামই হচ্ছে ইসলাম। আমাদের দীনের নাম ইসলাম। ইসলাম নিছক একটি ধর্ম নয়। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান।
মৃত্যুর পর প্রত্যেক মানুষকেই সাওয়াল-জওয়াবের সম্মুখীন হতে হবে। কবরে দুজন ফেরেশতা মৃত ব্যাক্তিকে সিটি প্রশ্ন করবেন। মৃত ব্যক্তিকে ২য় প্রশ্ননটি করা হবে দীন সম্পর্কে। প্রশ্নটি হলÑ         -মা দীনুকা। অর্থ- তোমার দীন কী?
এ প্রশ্নের উত্তর হলোঃ                    দীনী-ইয়াল ইসলাম।
    অর্থঃ আমার দীন ইসলাম।
প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবে এবং জান্নাত লাভ করবে।
৪। আমরা কী বলে আল্লাহর শোকর আদায় করব?
উত্তরঃ আলো, বাতাস, পানি সবই আল্লাহর দান। চন্দ্রসূর্য, পশুপাখি, জীবজন্তু, আলো-বাতাস, পাহাড়-পর্বত, গাছপালা, সাগর-মহাসাগর, আসমান জমিন সব কিছু তিনি মানুষের কল্যানে দান করেছেন। তাঁর নিয়ামত গণনা করে শেষ করা যায় না।
আমরা আল্লাহর নিয়ামত ভোগ করে বেঁচে আছি। এ জন্য তাঁর লোকের আদায় করব। আমরা আল্লাহর শোকর আদায় করতে বলবোÑ
(আল্ হামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন) অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি সারা বিশ্বের পালনকর্তা।
    পরিশেষে বলা যায় আমরা আল্লাহর আদেশ মতো তাঁর নিয়ামত ভোগ করব। আর একমাত্র তাঁরই অনুগত্য ও শোকর করব।

৫। আখিরাত মানে কী?
উত্তরঃ মৃত্যুর পরের জীবন ও অনন্তকালের জীবন। মৃত্যুর পরবর্তী জীবন হল আখিরাত। আখিরাতের জীবনের শেষ নেই। সকল নবী-রাসূলই বলেছেন আখিরাতের কথা।
আখিরাত             একটি আরবি শব্দ। আখিরাত শব্দের অর্থ- পরকাল। পৃথিবীর কোন কিছুই আমর নয়। যার জন্ম আছে তার মৃত্যুও আছে। কিন্তু মৃত্যুতেই সব কিছু শেষ হয়ে যায় না। মৃত্যুর পর ও এক জগৎ আছে। মৃত্যুর পরবর্তী জগতকে বলা হয় আখিরাত।
আখিরাতে মানুষের ভাল-মন্দের বিচার হবে। নবী-রাসূল গণ ওহির মাধ্যমে আখিরাতের জ্ঞান লাভ করেছেন। আমরা ও তাঁদের কাছ থেকে শিখেছি। তাই আমরা দুনিয়াতে ভাল কাজ করব যাতে পরকালে জান্নাত পেতে পারি।


রচণামূলক প্রশ্নউত্তরঃ
১। আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে জানা ও ইমান আনার জন্য আমাদের কী কী জানা জরুরী?
উত্তরঃ মহান আল্লাহ আমাদের ¯্রষ্টা। আল্লাহর বান্দা হিসেবে তাঁর সম্পের্কে জ্ঞানার্জন ও ইমান সম্পর্কিত কিছু বিষয় জ্ঞান লাব করা আমাদের অত্যন্ত জরুরি। নি¤েœ এ বিষয় আলোচনা করা হলো:
আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে  জানাঃ ইমান আনার জন্য সবার আগে আমাদের আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী। কেননা মহান আল্লাহ আছেন এ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকলে আল্লাহর প্রতি ইমান আনা ও সরল সঠিক পথে চলা কিছুতেই সম্ভব নয়।
    আল্লাহর নির্দেশনাবলী সম্পর্কে জানাঃ মাহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত সঠিক পথ কোনটি সে সম্পর্কে আমাদের সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। আল্লাহ যা পছন্দ করেন তা করা আর যা অপছন্দ করেন তা বর্জন করা। এ উদ্দেশ্যে আল্লাহর আইন ও বিধি-বিধান সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।
    আল্লাহর নির্দেশিত পথে না চলার পরিণাম সম্পর্কে জানাঃ মহান আল্লাহর দেখানো পথে চললে আমরা পাবো চিরসুখের স্থান জান্নাত। পক্ষান্তকের তাঁর বিরোধী পথে চললে ভোগ করতে হবে চির অশান্তির জাহান্নাম, তই জান্নাত ও জাহান্নাম, কিয়ামত, কবর ইত্যাদি সম্পর্কে ইমান থাকা ও জানা একান্ত অপরিহার্য। উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা ও এর উপরে দৃঢ় ইমান রাখা একান্ত জরুরী।

২। মুমিন কাকে বলে? ইমানের ফল কী?
উত্তরঃ আল্লাহর অনুগত বান্দাহদের মধ্যে মুমিনগণ অন্যতম। যার মধ্যে ইমান আছে তিনি মুমিন। মুমিননের জন্য আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরী। এছাড়া ইমানের ৭টি বিষয়ে বিশ্বাস রাখা অপরিহার্য।
    মুমিন শব্দের অর্থঃ মুমিন (            ) আরবি শব্দ। মুমিন শব্দের অর্থ ইমানদার, বিশ্বাসী।
মমিন পরিচয়ঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর একত্ববাদ তাঁর গুনাবলি তাঁর বিধান এবং তাঁর পুরষ্কার ও শান্তি সম্পর্কে জানে এবং অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করে তাকে মুমিন বলা হয়।
ইমানের ফলঃ
১. ইমানের ফল হল মানুষকে আল্লাহর অনুগত বান্দা হিসেবে গড়ে তোলা। আর অনগত বান্দা কখন ও আল্লাহর অবাধ্য হতে পারে না। তাই শুনিন সর্বদা আল্লাহর বিধি-বিধান মেনে চলে এবং আল্লাহর বাধ্য হয়।
২. ইমানের ফলে আল্লাহর আদেশ পালন করা ও নিষেধ হতে দূরে থাকা যায়।
৩. ইমান গ্রহনের ফলে আল্লাহর গুণাবলি জানা যায় এবং তাঁর অস্তিত্ব উপলব্ধি করা যায়।
৪. ইমানের ফলে আল্লাহর কুদরত, হেকমত, দয়া ইত্যাদি গুণের পরিচয় জানা যায়।
৫. ইমানের ফলে কবর, কেয়ামত, হাশর, মিজান, জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে জানা ও বিশ্বাস স্থাপন সম্ভব হয়।
৬. ইমানের ফলে ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি পাওয়া যায়।
    পরিষেশে বলা যায় মুমিন সকল কাজে কর্মে আল্লাহর অনুগত্য প্রকাশ করে। আর ইমানের ফলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব হয়।
৩। সারা বিশ্বের পালনকর্তা কে? তাঁর লালন-পালনের একটি বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ                 “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সারা বিশ্বের পালনকর্তা। আল্লাহ আমাদের রব। মহান আল্লাহ তায়ালা সারা বিশ্বের পালনকর্তা। তিনি সব কিছু লালন পালন করেন।
গাছপালা, পশুপাখি, জীবজন্তু, সবারই বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। মহান আল্লাহ তায়ালা আলো, বাতাস, পানি ও খাদ্য দিয়ে তাঁর সৃষ্টিকে লালন-পালন করেন। তাই আল্লাহ তায়ালা সারা বিশ্বের পালনকর্তা।
আল্লাহর লালন পালনের বর্ণনাঃ
আমরা শ্বাস নেই এবং শ্বাস ফেলি। শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়া কোন জীব বাঁচতে পারে না। শ্বাস ফেলার সময় এক প্রকার বিষাক্ত বায়ু আমাদের দেহ হতে বে হয়। এই বিষাক্ত বায়ুর নাম কার্বন-ডাই-অক্সাইড। এই বায়ু-গ্রহণ করে গাছ খাদ্য তৈরির উপাদান হিসেবে। আর আমাদের জন্য ছাড়ে অক্সিজেন। শ্বাস নেয়ার সময় আমরা অক্সিজেন গ্রহণ করি। অক্সিজেন ছাড়া কোন প্রাণী বাঁচতে পারে না।
কী অপরূপ আল্লাহর এই সৃষ্টি মহিমা। আমাদের জন্য যা বিষ, গাছের জন্য তা খাদ্য তৈরির উপাদান। আমরা গাছ-পালার ছেড়ে দেয়া অক্সিজেন গ্রহণ করে বেঁচে থাকি।
মহান আল্লাহ তায়ালা গাছ-পালার মাধ্যমে আমাদের কে অক্সিজেন, ফলমূল, শাক-সবজি ও খাদ্য দান করেন। এভাবে নানা উপায়ে আল্লাহ তায়ালা আমাদের লালন পালন করেন।
পরিশেষে বলা যায় মহাবিশ্বের সব কিছুর পালনকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালা। তিনি বিভিন্ন রকমের খাদ্য দিয়ে, বিভিন্ন রকমের প্রাণী, জীবজন্তু ও গাছ-পালা লালন পালন করেন। তাই কুরআনে বলা হয়েছে- “ভূপৃষ্ঠে যতপ্রাণী আছে, সকলের খাদ্য দানের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালার।”

৪। আল্লাহ তাআলার ৫টি গুণবাচ নাম বাংলা অর্থসহ আরবিতে লেখ।
উত্তরঃ মহান আল্লাহ সকল উত্তম গুণের অধিকারী। তিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু। তিনি সব কিছুর স্রষ্টা ও পালনকারী তিনি সব দেখেন ও শোনেন। তিনি সর্বশক্তিমান।
আল্লাহ তাআলার এ গুণবাচক নামগুলোকে আল-আসমাউল হুসনা বলা হয়। আল-আসমা অর্থ নামসমূহ, আল হুসনা এর অর্থ সুন্দর তম। এগুলোকে আল্লাহর সিফাতি নামও বলা হয়।
বাংলা অর্থসহ আরবিতে আল্লাহ তাআলার ৫টি গুণবাচক নামঃ
১.             অর্থ- আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল। ক্ষমাকরা, মাফ করা মহান আল্লাহর অন্যতম গুণ।
২.             অর্থ- আল্লাহ অতি সহনশীল। আল্লাহ নিজে অতি সহনশীল। তিনি বান্দার সহনশীলতাকে পছন্দ করেন।
৩.             অর্থ- আল্লাহ সর্বশ্রোতা। আমরা প্রকাশ্যে যা বলি তা তিনি শোনেন। গোপনে যা বলি তাও তিনি শোনেন। তাঁর কাছে কোন কিছুই গোপনে যা বলি তাও তিনি শোনেন। তাঁর কাছে কোন কিছুই গোপন থাকে না।
৪.             অর্থÑ আল্লাহ সর্বদ্রষ্টা। আল্লাহ সব সময় সবকিছু দেখেন। আমরা প্রকাশ্যে ও গোপনে যা করি তা তিনি দেখেন। তাঁর কাছে কোন কিছুই অদৃশ্য থাকে না।
৫.             অথ্যÑ আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনি কারও কল্যাণ করতে চাইলে কেউ তার ক্ষতি করতে পারে না। আবার কারও শাস্তিদিতে চাইলে কেউ তা বোধ করতে পারে না।
    পরিশেষে বলা যায় আমরা আল্লাহু তাআলার গুনবাচক নাম সম্পর্কে জানব এবং নিজেদেরকে আল্লাহর গুণে গুণাম্বিত করতে সচেষ্ট হব।

৫। আল্লাহ ক্ষমাশীল তা বুঝিয়ে লেখ।
উত্তরঃ আল্লাহ গাফুরুন অর্থ আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ পরম দয়ালু ও মেহেরবান। তিনি ক্ষমাশীল ও মার্জনাকারী। ক্ষমা করা, মাফ করা আল্লাহর অত্যতম গুণ। কুরআন মাজীদে এসেছে।
    “নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।”
মানুষ শয়তানের প্ররোচনায় অন্যায় করে ফেলে। পাপ কাজে লিপ্ত হয়। শত পাপ করে ও যদি সে অনুতপ্ত হয়, ভুল স্বীকার করে, পাপ কাজ থেকে ফিরে আসে এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে আন্তরিক ভাবে ক্ষমা চায় তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।
কুরআনে আল্লাহ নিজেই বলেছেনÑ
“হে আমার বান্দাগণ, তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (জুমার-৫৩)
পরিশেষে বলা যায় আমাদের কোনো ভুল হলে আমরা সাথে সাথে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইব এবং সাবধানে থাকবো যেনো আর ভুল না হয়। তাহলে আল্লাহ আমাদের মাফ করে দিবেন। এবং আমরা পরকালে জান্নাত লাভ করতে পারবো।

৬। নবী-রাসূলগণের শিক্ষার মূল কথাগুলো কী কী?
উত্তরঃ নবী-রাসূলগণ ছিলেন মানব জাতির শিক্ষক। কোন পথে মানুষের কল্যাণ, কোন পথে রয়েছে মানুষের ক্ষতি তা শিক্ষা দেয়ার জন্য আল্লাহ নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। কুরআনে এসেছে (                ) অর্থ “প্রত্যেক জাতির জন্য রয়েছে পথ প্রদর্শক।”
নবী-রাসূলগণের শিক্ষার মূল কথাঃ
১. তাওহিদ: আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোনো শরিক নেই। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। তিনি আছেন ও থাকবেন। নবী-রাসূলগণের শিক্ষার মূল কতা ছিল এ তাওহিদ।
২. রিসালাত: নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌঁছাছে। নবী-রাসূলগণের এ কাজ বা দায়িত্বকে রিসালাত বলে।
৩. দ্বীন: আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষকে জাননো। আর তা হল ইসলাম।
৪. আখলাক: চারিত্রিক গুণ ও ভালো ব্যবহারের নিয়ম-কানুন নবী-রসূলগণ আমাদের শিখিয়েছেন। এটাই হল আখলাক।
৫. শরিয়ত: হালাল-হারাম, জায়েজ-নাজায়েজ ও অন্যান্য বিধি-বিধানের জ্ঞানই হলে শরিয়ত।
৬. আখিরাত: মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে আমাদের ভাল-মন্দের বিচার হলে। এটাই হল আখিরাত।
    পরিশেষে বলা যায় পৃথিবীর সকল এলাকার মানুষকে উক্ত কথাগুলো শেখানোর জন্য নবী-রসূলগণ এসেছিলেন। তাই আমরা তাঁদের আদর্শ অনুসরণ করবো ও তাঁদের শিক্ষানুযায়ী জীবন গড়বো।
৭। আখিরাতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কী কী?
উত্তরঃ মৃত্যুর পরের জীবন অনন্ত কালের জীবন। মৃত্যুর পরবর্তী জগতকে আখিরাত বলে। আখিরাতের জীবনের শেষ নেই। আখিরাতে মানুষের ভালো মন্দের বিচার হবে।
আখিরাতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ
১. কবরে সাওয়াল ও জওয়াব: সওয়াল ও জাওয়াব মানে প্রশ্ন ও উত্তর। মৃত্যুপর প্রত্যেক মানুষকে কবরে মুনকীর ও নাকীর ফেরেশতা দ্বয় ৩টি করে প্রশ্ন করবেন। তোমার রব কে? তোমার দ্বীন কী? এই ব্যাক্তি (হযরত মুহাম্মদ স.) কে? পূণ্যবান ব্যক্তিরা এ প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিতে পারবে এবং পাপীরা উত্তর দিতে পারবে না।
২. কবরে আরাম ও আযাব: পৃথিবীতে যারা পাপ কাজ হতে বিরত রয়েছে, তারা কবরে জান্নাতের অনুরূপ শান্তি ভোগ করবে। আর যারা পাপী তারা জাহান্নামের মত শাস্তি পাবে।
৩. কিয়ামত: মানুষের অবাধ্যতা যখন চরমে পৌঁছবে, আল্লাহর নাম নেবার মত কেউ তাকবে না সেদিন আল্লাহ বিশ্ব জগৎ এবং এর সবকিছু ধ্বংস করে দিবেন। একেই কিয়ামত বলে।
৪. হাশর: বিশ্ব জগৎ ধ্বংসের পর আল্লাহ তায়ালা সবাইকে পাপ-পূণৌর বিচারে জন্য পূণরায় জীবিত করবেন। সবাইকে সেদিন আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। এসে বলা হয় হাশর।
৫. মিযান: মিযান অর্থ পরিমাপক বা দাঁড়ি পাল্লা। হাশরের দিন আমাদের পাপ-পূণ্যের আমলনামা ওজন করা হবে। যার দ্বারা ওজন করা হবে তাকে বলে মিযান।
৬. জান্নাত ও জাহান্নাম: জান্নাত অর্থ উদ্যান। জান্নাত চিরস্থায়ী সুখের স্থান। ব্যাক্তিগণ জান্নাতে যাবে। সেখানে থাকবে উত্তম খাদ্য, পানীয় এবং সুন্দর বাগান ও ফলফলাদি সহ আরামের সুব্যবস্থা।
জাহান্নাম অর্ত জলন্ত অগ্নি। জাহান্নাম চিরস্থায়ী কষ্টের স্থান। সেখানে থাকবে ভীষণ ও ভয়ংকর শাস্তি। জাহান্নামীরা জলন্ত আগুনে পড়তে থাকবে।
    পরিশেষে বলা যায় আখিরাতের বিশ্বাস ব্যতিত কেউ মুমিন হতে পারবে না এবং পরকালে মুক্তি পাবে না। তাই আমরা আখিরাতের বিষয়গুলোর উপর বিশ্বাস রাখব এবং দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভ করবো।

৮। একজন মুসলিমের চরিত্র কেমন হওয়া উচিত? এ সম্পর্কে ১০টি বাক্য লেখ।
উত্তরঃ মুসলিম শব্দের অর্থ আত্মসর্ম্পনকারী। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে মুসলিমরা সবচেয়ে বেশি আল্লাহর অনুগত। মুসলমানদের আচার-আচরণ হওয়া উচিত তাকওয়ায় পরিপূর্ণ, পুত-পবিত্র ও নির্মল। অসত্য, অন্যায়, অবিচার ও অশ্ললীন আচারণের বিরুদ্ধে তরা থাকবে সর্বদা সোচ্চার ও সচেতন।
একজন মুসলিমের চরিত্র যেমন হওয়া উচিত এ সম্পর্কে ১০টি বাক্য হল:
১. আল্লাহ তায়ালা সব কিছুর মালিক এ বিশ্বাস নিয়ে একজন মুসলিমের চরিত্র হবে তাকওয়ায় পরিপূর্ণ।
২. একজন মুসলিমের অন্তরে আল্লাহ ছাড়া কারোর ভয় স্থান পাবে না।
৩. মুসলিম কখনো আল্লাহ ব্যতিত কারো নিকট মাথা নত করবে না।
৪. একজন মুসলিমের চরিত্র হবে পুত-পবিত্র, সুন্দর, নির্মল ও সত্যাশ্রয়ী।
৫. একজন মুসলিমের মনে থাকবে না কোন মন্দ ও অসৎ চিন্তা।
৬. একজন মুসলিম সর্বদা জুলুম ও অন্যায়কে ঘৃণা করবে।
৭. সে কখনো না খেয়ে থাকলে ও হারাম জিনিস ভক্ষণ করবে না।
৮. একজন মুসলিম সর্বদা কথা দিয়ে কথা রাখবে এবং কখনো কারো আমানত নষ্ট করবে না।
৯. একজন মুসলিম কখনো মিথ্যা বলবে না এবং মিথ্যার সামনে মাথানত করবে না।
১০. একজন মুসলিম তাঁর চোখকে মন্দ দেখা জিনিস হতে হেফাজত করবে।
    পরিশেষে বলা যায়, এমনি করে একজন মুসলিম পৃথিবীতে ইজ্জত ও সম্মানের সাথে জীবন অতিবাহিত করে যখন আল্লাহর সামানে হাজির হবে তখন তার উপর বর্ষিত হবে আল্লাহর অসীম অনুগ্রহ, রহমত ও কুদরত।



2 Comments

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال