সমস্ত মুখে যেন কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল মো. আলমাছ উদ্দিনের। এর আগেও একবার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। পরিচিত চিকিৎসকদের কাছে ছবি পাঠানোর পর তাঁরা জানিয়েছিলেন লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে আবারও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ। ২৮ মার্চ শনিবার সকাল ৮টা থেকে বাবা আলমাছ উদ্দিনকে নিয়ে সন্তানেরা পাঁচটি হাসপাতালে ঘুরেছেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের চিকিৎসা ছাড়াই আজ রোববার সকালে মারা যান তিনি।
আলমাছ উদ্দিনের মেয়ে উনি একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। আলমাছ উদ্দিনের মেয়ে বলেন, ‘শনিবার বাবার শরীর হঠাৎ খারাপ হয়ে পরে। তারপর সকাল ৮টায় বাবাকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয় আমাদের বাসাবোর বাসা থেকে। প্রায় অনেকগুলো হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে রাত ১২টার দিকে অনেক দেনদরবারের পর একটি হাসপাতাল নিলাম। কিন্তু শেষ-মেষ বাবাকে আর বাঁচানো গেল না। আমার বাবা একরকম বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে? আমরা ভাবতেই পারিনি, কী যে কষ্ট!’
মেয়ে আরও জানালেন, বাবা আলমাছ উদ্দিনের পেটের পুরোনো রোগ। শুক্রবার ভীষণ ডায়রিয়া, সঙ্গে জ্বরও রয়েছে। কিছুক্ষণ পর পর কথা জড়িয়ে যেতে থাকে বাবার। তখনই পরিবারের লোকজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। এমনিতে দুটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা করাতাম আমরা। জ্বর-ডায়রিয়া কথা শুনেই তাঁরা নিতে চাননি। পরদিন শাহবাগের একটি বড় হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। সেখানে বুকের এক্স-রে করে নিউমোনিয়া মতো মনে হচ্ছিল। করোনাভাইরাসের উপসর্গের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে দেখে তাঁরা রাখেননি। সেখান থেকে বাবাকে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়। তাঁদের আইসোলেশন ওয়ার্ড আছে। রোগী ভর্তি করা যাবে এই আশ্বাস পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় আলমাছ উদ্দিনকে।
কর্তৃপক্ষ রাখতে রাজি হলেও, চিকিৎসকেরা কেউ আসেননি। এরপর হাসপাতাল থেকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনেরা। ভর্তি নেয় তারা। কিন্তু জরুরি বিভাগ থেকে ওয়ার্ডে পাঠানোর সময় চিকিৎসকদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। করোনাভাইরাসের ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য না পেলে রোগী রাখবেন না বলে জানান। তাঁরা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে যান। পৌঁছানোর আগে আইইডিসিআরে যোগাযোগ করেন। সন্ধ্যার পর আলমাছ উদ্দিনের অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছায় কুয়েত মৈত্রীর গেটে। তাঁরা লক্ষণ দেখে বলেন, রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁকে আইসোলেশনে থাকতে হবে। সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা থাকলে বিপদ।
এভাবে ছয় হাসপাতালে গিয়েও বাবাকে ভর্তি করাতে পারেননি সন্তানেরা। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে যখন এভাবে ছুটছেন আলমাছ উদ্দিন, তখন এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে আসেন। আলমাছ উদ্দিনের মেয়ে জানান, ‘আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু এই পরিচয় দিয়ে কখনও কোনো সুবিধা নেওয়া পছন্দ করতেন না। আমরাও তাই কোনো হাসপাতালে গিয়ে এই পরিচয় দিইনি।’ মুগদা জেনারেল হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড আছে। মুক্তিযোদ্ধারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। হাসপাতালের সিটিস্ক্যান, এমআরআই মেশিন নষ্ট। পরদিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর উপায় নেই।
আলমাছ উদ্দিনের মেয়ে আরও জানান, বাবাকে শুধু স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল। বাকি পরীক্ষার পর চিকিৎসা শুরু হবে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু সেই সুযোগ আর হয়ে ওঠেনি। সকাল সোয়া ৭টায় দিকে মারা যান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) আমিনুল হাসান জানান, হাসপাতালে গিয়ে রোগীরা যে চিকিৎসা পাচ্ছেন না, এই খবর তাঁরা পাচ্ছেন। কীভাবে রোগীদের কষ্ট কমানো যায়, ভাবছেন তাঁরা। আগামী বুধবার সবপক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসবেন। সেখান থেকে হয়তো একটা উপায় বেরিয়ে আসবে।
আমাদের এ লেখাটি যাদ আপনার ভালে লাগে, তাহলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকবেন। যদি আরো কিছু জানার থাকে তাহলে আমার এই পোস্টের নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করবেন, আমি আমার সাধ্যমত আপনাদেরকে সঠিক তথ্যটি জানানোর চেষ্টা করব। আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ সবাইকে। ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
Image Source: www.google.com