করোনা ভাইরাসে সতর্কতাঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ


বর্তমানে চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ায়, বিশ্বব্যাপী ‘স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচও। সংস্থার প্রধান টেড্রোস গ্যাব্রিয়েসুস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এই ভাইরাস দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ‘জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছে বেইজিংও। পর্যটকদের সে দেশে না যেতে বলা হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুসারে, এই রোগে চীনে এ যাবৎ মারা গেছেন অন্তত ২১৩ জন। সে দেশের ৩১টি প্রদেশে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার মানুষ। তবে মৃতের সংখ্যা নিয়ে চীন সরকার যে হিসাব দিয়েছে প্রকৃতপক্ষে মৃতের সংখ্যা আরো অনেক বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।



অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালে মৃতের কোনো রেকর্ড না রেখেই তড়িঘড়ি লাশগুলো সমাধিস্থ করছে চীনা কর্তৃপক্ষ। ব্রিটিশ ডেইলি মেইলের খবর, উহান শহরে হাসপাতাল থেকে সমাধিস্থ করার জন্য যেসব লাশ পাঠানো হচ্ছে তার বেশির ভাগেরই রেকর্ড রাখা হচ্ছে না। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের পূর্ব এশিয়া প্রতিনিধিও চীনের দেয়া পরিসংখ্যানের বিষয়ে সংশয় জানিয়েছেন। এই ভাইরাস সংক্রমণের কারণে আন্তর্জাতিক বিশ্ব চীনের ব্যাপারে যে সতকর্তা নিয়েছে, তাতে চীন কার্যত বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

মার্কিন গণমাধ্যমের খবর, এক মাস আগে শনাক্ত হওয়ার পর ভাইরাসটি ছড়িয়ে অন্তত ২৩টি দেশে। এসব দেশে আক্রান্তের সংখ্যা শতাধিক। এখনো কারো মারা যাওয়ার খবর আসেনি। কিন্তু নিম্ন ও মধ্যম আয়ের অনেক দেশে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় যথাযথ চিকিৎসাউপকরণ নেই। সেসব দেশে ছড়িয়ে পড়লে ভাইরাসটি মারাত্মক প্রাণহানির কারণ হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সে জন্যই বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর ফলে এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আরো বেশি কার্যকরভাবে কাজ করতে পারবে সংস্থাটি। ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে পারবেন তাদের কর্মকর্তারা। করোনা ভাইরাসের কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো তৈরি করা যায়নি। ফলে এর কোনো চিকিৎসাও মানুষের জানা নেই। আপাতত একমাত্র উপায় হলো, আক্রান্ত এবং এ ভাইরাস বহনকারীদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।


বাংলাদেশ এ বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছে। চীন ভ্রমণে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। এ ছাড়া নাগরিকদের স্বাস্থ্যগত চারটি সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো-১. আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে দুই হাত দূরে থাকতে হবে। ২. বারবার প্রয়োজন মতো সাবান পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। বিশেষ করে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বা ভাইরাস ছড়িয়েছে এমন এলাকা ভ্রমণ করলে, এই সতকর্তা নিতে হবে। ৩. জীবিত ও মৃত গবাদি পশু/বন্যপ্রাণী থেকে দূরে থাকতে হবে। ৪. ভ্রমণকারী আক্রান্ত হলে হাঁচি/কাশির সময় দূরত্ব বজায় রাখা, মুখ ঢেকে হাঁচি/কাশি দেয়া, যেখানে সেখানে থুথু না ফেলা প্রভৃতি। নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, কাশির লক্ষণ থাকার কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলেছে, ভ্রমণের সময় বিশেষ করে চীন থেকে বাংলাদেশে ও বাংলাদেশ থেকে চীনে গেলে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ঠেকানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। চীনের উহান থেকে ৩৬১ জন বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে আনছে সরকার। দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের আশকোনা হজ ক্যাম্পে ১৪ দিনের জন্য নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। সেখানে অবস্থানকালে কেউ অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা দেয়ার জন্য পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী সব সময় মোতায়েন থাকবে।



বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেনি। তাই বাংলাদেশী নাগরিকদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা যেসব পরামর্শ দিচ্ছেন, সেগুলো অনুসরণ করা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়াই আমাদের জন্য জরুরি।

লেখক : এম. লোকমান হেকিম, কলামিস্ট।

আমাদের এ লেখাটি যাদ আপনার ভালে লাগে, তাহলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকবেন। যদি আরো কিছু জানার থাকে তাহলে আমার এই পোস্টের নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করবেন, আমি আমার সাধ্যমত আপনাদেরকে সঠিক তথ্যটি জানানোর চেষ্টা করব। আমাদের ফেসবুক পেজ এ লাইক বাটন ক্লিক করে পরবর্তী নিউজের সাথে আপডেট থাকবেন। বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ সবাইকে। ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
Image Source: www.google.com
Previous Post Next Post
banner
banner
banner

نموذج الاتصال