অষ্টম শ্রেণি, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা, প্রথম অধ্যায় আকাইদ (পর্ব ২)


বর্ণনামূলক প্রশ্ন ও উত্তর   
প্রশ্ন \ ১ \ ইমানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : ইমানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যন্ত ব্যাপক ও অপরিসীম। ইমান আল্লাহর একটি বড় নিয়ামত। ইমানের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভ করতে পারে। মুমিন ব্যক্তি দুনিয়াতে শ্রদ্ধা, সম্মান, কল্যাণ ও সাফল্য লাভ করে।
আল্লাহ তায়ালা বলেনÑ

অর্থ : আর সম্মান তো কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং মুমিনদের জন্যই।
মুমিন ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রিয়পাত্র। আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের  ভালোবাসেন। আখিরাতে মহান আল্লাহ মুমিনদের চিরশান্তির জান্নাত দান করবেন। মুমিনগণ সেখানে চিরকাল থাকবেন এবং জান্নাতের অফুরন্ত নিয়ামত ভোগ করবেন। পবিত্র কুরআনে সূরা আল-কাহাফে আল্লাহ তায়ালা বলেনÑ
‘নিশ্চয়ই যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের আপ্যায়নের জন্য রয়েছে ফিরদাউস জান্নাত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।’
সুতরাং এটা প্রতীয়মান হয় যে, ইমানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।
প্রশ্ন \ ২ \ রিসালাতের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মানবজাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে বহু নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন। তাঁরা মানুষকে আল্লাহর দিকে আহŸান করতেন। তাঁরা সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় শিক্ষা দিতেন। আর নবি-রাসুলগণের এরূপ দায়িত্বকেই বলা হয় রিসালাত। মহান আল্লাহ বলেন,

অর্থ- “আল্লাহ ইবাদত করার ও তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেয়ার জন্য আমিতো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসুল পাঠিয়েছি” (সূরা আন-নাহল, আয়াত-৩৬)। তাই বলা যায়, রিসালাতের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
প্রশ্ন \ ৩ \ নৈতিক চরিত্র গঠনে ইমানের ভ‚মিকা বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : ইমান ও নৈতিকতার সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। নৈতিক চরিত্র গঠন করা মুমিনের অপরিহার্য দায়িত্ব। নীতি-নৈতিকতা না মানলে কোনো ব্যক্তি পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারে না। সততা-ন্যায়পরায়ণতা, দয়া, ক্ষমা, পারস্পরিক সহযোগিতা, সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব ইত্যাদি সৎগুণ মুমিন ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য। মুমিনরা অন্যায়, অত্যাচার, যুলুম, নির্যাতন, মিথ্যাচার, প্রতারণা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ইত্যাদি অনৈতিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকেন। যার ফলশ্রæতিতে মুমিন ব্যক্তির চরিত্র অত্যন্ত সুন্দর, শালীন ও মার্জিত হয়।
সুতরাং বলা যায়, ইমান নৈতিক চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে।


প্রশ্ন -১ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
সুমাইয়া ও সামিয়া দুই বান্ধবী। নুহাশপল্লীতে বেড়াতে যাবে বলে দুজনেই দিন-তারিখ ঠিক করে। সুমাইয়া নির্দিষ্ট তারিখে প্রস্তুতি নিয়ে সামিয়ার অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু সামিয়া তার বাবার কাছ থেকে টিফিন, কাগজ ও কলমের অজুহাত দিয়ে বেশ কিছু টাকা নিয়ে আদিবার সাথে মার্কেটে ঘুরতে চলে যায়। পরদিন সামিয়ার সাথে সুমাইয়ার দেখা হয়। সুমাইয়া বিষয়টি উত্থাপন করলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এবং উভয়ই মনঃক্ষুণ হয়।
 ক.    মুনাফিকের চিহ্ন কয়টি?   
খ.    তাকদিরে বিশ্বাস বলতে কী বোঝায়?   
গ.    সামিয়ার আচরণে কী প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা কর।   
ঘ.    সুমাইয়ার কার্যক্রমের ফলাফল পাঠ্যপুস্তকের আলোকে ব্যাখ্যা কর।  

 ১নং প্রশ্নের উত্তর 

ক.    মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি।
খ.    তাকদির অর্থ ভাগ্য। এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হয়। ভালো-মন্দ যা কিছু তা সবই তাঁর হুকুমে হয়, এই বিশ্বাস করাই তাকদিরে বিশ্বাস।
গ.    সামিয়ার আচরণে নিফাকি প্রকাশ পেয়েছে। নিফাক হলো নৈতিকতা ও মানবিকতার আদর্শের বিপরীত কাজ। যারা নিফাকি করে তাদেরকে মুনাফিক বলে। এ সম্বন্ধে রাসুলের হাদীস-
    “মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি। যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং যখন তার নিকট কোনো কিছু গচ্ছিত রাখা হয়, তখন তার খিয়ানত করে” (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)।
    উদ্দীপকের সামিয়া তার বান্ধবীর সাথে বেড়াতে যাওয়ার জন্য দিনক্ষণ ঠিক করে ওয়াদাবদ্ধ হয়। কিন্তু ঐদিন সে সুমাইয়ার সাথে বেড়াতে না গিয়ে আদিবার সাথে মার্কেটে যায়। তার এ ধরনের  কাজে ওয়াদাভঙ্গ হয় এবং এতে নিফাকি প্রকাশ পায়।
ঘ.    সুমাইয়ার কার্যক্রমের ফলাফল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তার কার্যক্রমে মুমিনের বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠেছে। কেননা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। উদ্দীপকে লক্ষ করলে দেখা যায় সুমাইয়ার সাথে সামিয়ার এই ওয়াদা হয় যে, তারা একটি নির্দিষ্ট সময়ে নুহাশপল্লীতে বেড়াতে যাবে। সুমাইয়া কথা অনুযায়ী সামিয়ার অপেক্ষায় তার ওয়াদা রক্ষা করেছে। এর ফলে সে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভ করবে। সে তার সততা ও সত্যবাদিতার
প্রতিদান স্বরূপ মানুষের শ্রদ্ধা, স্নেহ, ভালোবাসা লাভ করবে। সে উভয় জগতেই সাফল্য লাভ করবে। সে আল্লাহ ও রাসুলের প্রিয়পাত্র হিসেবে আখিরাতে চিরশান্তির স্থান জান্নাত লাভ করবে। সে চিরকালব্যাপী সেখানে বসবাস করবে এবং জান্নাতের অফুরন্ত নিয়ামত ভোগ করতে পারবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেনÑ

    অর্থ : নিশ্চয়ই যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের আপ্যায়নের জন্য রয়েছে ফিরদাউস জান্নাত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।    [সূরা আল কাহাফ : ১০৭-১০৮]

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال