অষ্টম শ্রেণি, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা, প্রথম অধ্যায় আকাইদ (পর্ব ৩)


প্রশ্ন -২  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মনসুর সাহেব ও ইকবাল সাহেব একই অফিসে চাকরি করেন। ইকবাল সাহেব একজন ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি। অফিসের সবার সাথেই তিনি ভদ্রভাবে কথা বলেন। একদিন মনসুর সাহেব তার অধীনস্থ কর্মচারী রাশেদকে এক গ্লাস পানি ও ফাইল আনতে বলেন। রাশেদ আসতে দেরি করায় মনসুর সাহেব তার সাথে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করেন। বিষয়টি অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানতে পেরে বলেন, ‘মুমিন ব্যক্তির আচরণ এরূপ হতে পারে না।’
 ক.    জান্নাতের স্তর কয়টি?   
খ.    জাহান্নামের শাস্তির ধরন কীরূপ? ব্যাখ্যা কর।   
গ.    মনসুর সাহেবের আচরণটি কীসের পরিপন্থী? ব্যাখ্যা কর।   
ঘ.    অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উক্তিটি কি যথার্থ? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।   

  ২নং প্রশ্নের উত্তর

ক.    জান্নাতের স্তর আটটি।
খ.    জাহান্নামের শাস্তির ধরন খুবই ভয়াবহ। সেখানে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। পাপিরা সেখানে আগুনে অবিরত দগ্ধ হতে থাকবে। তাদের খাবার হবে যাক্কুম নামক বড় বড় কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ। তাদের পানীয় হবে দোযখিদের উত্তপ্ত রক্ত ও পুঁজ। সেখানে মানুষের কোনো মৃত্যু হবে না, বরং শাস্তি পেতে থাকবে এবং চিরকাল ধরে কষ্ট ভোগ করতে থাকবে।
গ.    মনসুর সাহেবের আচরণটি মুমিনের চরিত্রের পরিপন্থী। সততা, ন্যায়পরায়ণতা, দয়া, ক্ষমা, পারস্পরিক সহযোগিতা, সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব ইত্যাদি সৎগুণ ইমানদার ব্যক্তির চরিত্রে ফুটে ওঠে। অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন, মিথ্যাচার, প্রতারণা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ইত্যাদি অনৈতিক ও অমানবিক কার্যাবলি থেকে মুমিন ব্যক্তি দূরে থাকেন। এগুলো মুমিনের আচরণের পরিপন্থী। উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, মনসুর সাহেব তার অধীনস্থ কর্মচারীর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। কোনো মুমিন এ ধরনের আচরণ করতে পারে না। তাই আমরা বলতে পারি, মনসুর সাহেবের আচরণটি মুমিনের চরিত্রের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
ঘ.    অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উক্তি- মুমিন ব্যক্তির আচরণ এরূপ তথা অশ্লীল হতে পারে না। উক্তিটি যথার্থ।
    মুমিনগণ সর্বদা মানুষের সাথে সদাচরণ করবে। অপরকে কষ্টদায়ক কোনো কথা বলবে না। তারা কাজেকর্মে কথাবার্তায় নীতি ও আদর্শের অনুসরণ করেন। কারণ মুমিন ব্যক্তি ঐক্য, সাম্য, উদারতা, মানবতাবোধ, ভ্রাতৃত্ব, ন্যায়নীতি ইত্যাদির অনুসারী। সততা, ন্যায়পরায়ণতা, দয়া, ক্ষমা ইত্যাদি মুমিনের চারিত্রিক ভূষণ। মুমিনগণ এসবের যথাযথ চর্চা করেন। অথচ উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, মনসুর সাহেব তার অধীনস্থ কর্মচারী রাশেদের প্রতি অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করেন। এটি ইমান ও নৈতিকতার সম্পূর্ণ বিপরীত।
    এ প্রেক্ষিতে উক্ত অফিসের জনৈক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন ‘মুমিন ব্যক্তির আচরণ এরূপ হতে পারে না।’ সুতরাং বলা যায়, অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উক্তিটি যথার্থ।



প্রশ্ন -৩  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রনি ও এনি দুজন সহপাঠী। একদিন ইসলামি বিষয় নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে রনি বলল, হযরত মুহাম্মদ (স) এর পর আর কোনো নবি বা রাসূল পৃথিবীতে আসবেন না। কিন্তু এনি বলল, আরও নবি বা রাসূল আসতে পারেন। একথা শুনে রনির বড় ভাই খায়ের সাহেব বললেন, মুহাম্মদ (স)-ই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি ও রাসূল। তাঁর পরে আর কোনো নবি বা রাসূল এ পৃথিবীতে আসবেন না।
 ক.    ‘খততে নবুয়ত’ শব্দের অর্থ কী?    ১
খ.    ‘খতমে নবুয়তে’ বিশ্বাস করা জরুরি কেন?     ২
গ.    এনির এরূপ ধারণা কোন বিশ্বাসের পরিপন্থী? ব্যাখ্যা কর।    ৩
ঘ.    খায়ের সাহেবের বক্তব্যের যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।    ৪

 ৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক.    ‘খতমে নবুয়ত শব্দের অর্থ নবিগণের দায়িত্বের পরিসমাপ্তি বা নবুয়তের সমাপ্তি।
খ.    খতমে নবুয়তের ওপর বিশ্বাস করা ফরজ। মহানবি (স) ছিলেন খাতামুন নাবিয়্যিন তথা সর্বশেষ নবি। তাঁর মাধ্যমে নবুয়তের ক্রমধারা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। এতে বিশ্বাস না করলে মানুষ ইমানদার হতে পারে না। এজন্যই খতমে নবুয়তে বিশ্বাস করতে হবে।
গ.    উদ্দীপকে এনির ধারণা খতমে নবুয়তে বিশ্বাসের পরিপন্থী।
    খতমে নবুয়ত হচ্ছে নবিগণের দায়িত্বের পরিসমাপ্তি বা নবুয়তের সমাপ্তি। মানবজাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে বহু নবি-রাসুল প্রেরণ করেন। এ ক্রমধারা শুরু হয় হযরত আদম (আ) এর মাধ্যমে আর হযরত মুহাম্মদ (স) এর আগমনের মাধ্যমে শেষ হয়। নবুয়ত তথা নবি-রাসুলগণের আগমনের এ ক্রমধারটির সমাপ্তিকেই খতমে নবুয়ত বলা হয়ে থাকে।
    উদ্দীপকের এনি এ বিষয়টির বিপরীতে উল্লেখ করেছে যে পৃথিবীতে আরও নবী বা রাসুল আসতে পারেন। কাজেই বলা যায় এনির এরূপ ধারণা খতমে নবুয়তে বিশ্বাসের পরিপন্থী।
ঘ.    খায়ের সাহেবের বক্তব্যটি যথার্থ হয়েছে।
    হযরত মুহাম্মদ (স)-এর মাধ্যমে নবুয়তের ক্রমধারা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। কুরআন ও হাদিসের বহু জায়গায় এর প্রমাণ রয়েছে। এ সম্পর্কে মহানবি (স) বলেছেন, “রিসালাত ও নবুয়তের ধারা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমার পর আর কোনো নবি ও রাসুল আসবেন না।”
    মহানবি (স) এক হাদিসে বলেছেন যে, “আমিই সুসজ্জিত দালানের শেষ ইট।” যে ইটটি লাগাতেই সে দালান পরিপূর্ণ হয়ে গেল। তাছাড়া আল-কুরআনে বলা হয়েছে “বলুন, হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রাসুল।” (সুরা আরাফ, আয়াত: ১৫৮)। এতে প্রমাণিত হয় নবি কারিম (স) কোনো বিশেষ স্থান বা কালের জন্য আসেন নি। বরং তিনি সর্বকালের সকলের নবি। কিয়ামত পর্যন্ত তিনি সকল স্থানের নবি।
    উদ্দীপকেও আমরা দেখতে পাই যে এনির ধারণা  খণ্ডন করে খায়ের সাহেব বললেন, মুহাম্মদ (স)-ই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি ও রাসুল। তাঁর পরে আর কোনো নবি বা রাসুল এ পৃথিবীতে আসবেন না। সুতরাং খায়ের সাহেবের বক্তব্যটি যথার্থ। 
প্রশ্ন -৪ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
অমি ও সামি দুই ভাই। তারা নিয়মিত সালাত আদায় করে। কিন্তু অমি প্রায়ই মিথা কথা বলে এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। সামি তাকে বুঝাতে চেষ্টা করে যে, এটা মুনাফেকি আচরণ। যারা এরূপ করে আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন, “নিশ্চয়ই মুনাফিকদের স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে”।
 ক.    ‘নিফাক’ শব্দের অর্থ কী?    ১
খ.    ‘মুনাফিক’ বলতে কী বুঝ? লিখ।    ২
গ.    অমির আচরণে যা প্রতিফলিত হয়েছে পাঠ্যবইয়ের আলোকে তা ব্যাখ্যা কর।    ৩
ঘ.    উদ্দীপকে বর্ণিত আল্লাহর বাণীর যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।    ৪

 ৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক.    নিফাক শব্দের অর্থ ভণ্ডামি, কপটতা, দ্বিমুখী নীতি ইত্যাদি।
খ.    মুনাফিক শব্দের অর্থ গোপনকারী, প্রতারণাকারী ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় মুখে ইমানের স্বীকার ও অন্তরে অবিশ্বাস করাকে নিফাক বলা হয়। যে ব্যক্তি এরূপ করে তাকে বলা হয় মুনাফিক মুনাফিকরা সাধারণত সামাজিক ও পার্থিব লাভের জন্য এরূপ করে থাকে।
গ.    উদ্দীপকের অমির আচরণে নিফাক প্রকাশ পেয়েছে।
    মিথ্যা বলা, ওয়াদা ভঙ্গ করা এবং আমানতের খিয়ানত করা মুনাফিকের নিদর্শন। এসব যার মধ্যে পাওয়া যাবে তাকে মুনাফিক হিসেবে গণ্য করা যাবে। উদ্দীপকের অমির মধ্যেও এ ধরনের দোষ তথা মিথা বলা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা প্রভৃতি প্রকাশ পেয়েছে।
    তাই এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, অমির আচরণে নিফাকী প্রকাশ পেয়েছে।
ঘ.    “নিশ্চয় মুনাফিকদের স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে”।  উদ্দীপকে বর্ণিত আল্লাহর এই বাণীটি নিশ্চয়ই যথার্থ।
    মুনাফিকরা ইসলামের চরম শত্রু। এরা বাইরে মুসলমান বলে দাবি করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরা কাফিরদের পক্ষে কাজ করে। এদের গোপন শত্রুতা মুসলমানদের বিপদে ফেলে। এসব সমূহ ক্ষতিকর কারণে উদ্দীপপের আয়াতে মুনাফিকদের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। বস্তুত প্রকাশ্য শত্রুর তুলনায় গোপন শত্রু বেশি ক্ষতিকর। কেননা প্রকাশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করা যায়। কিন্তু যে গোপন শত্রুতা করে তাকে চেনা যায় না। তার ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য কোনো সুযোগও পাওয়া যায় না। ফলে সে বন্ধু বেশে সহজেই বড় ক্ষতিসাধন করতে পারে। এসব কারণে দুনিয়াতে মুনাফিকরা ঘৃণিত ও নিন্দিত। আখিরাতেও তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের কাঠোর আযাব। আল্লাহ তায়ালা বলেনÑ

    অর্থ : “নিশ্চয়ই মুনাফিকদের স্থান জাহান্নামের নর্বনিম্ন স্তরে।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত ১৪৫)
Image source by google

1 Comments

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال