ষষ্ঠ শ্রেণি, বাংলা ১ম পত্র, কতদিকে কত কারিগর, সৃজনশীল, প্রশ্ন উত্তর

কতদিকে কত কারিগর

সৈয়দ শামসুল হক

প্রশ্ন- ১  লোকশিল্পের বর্তমান অবস্থা 


সুমনা পহেলা বৈশাখের মেলায় গেল। আশা ছিল একটা শখের হাঁড়ি, একটা টেপা পুতুল, একটি শীতল পাটি কিনবে। কিন্তু মেলায় কয়েকটি দোকান ঘুরেও সে তার প্রত্যাশিত বস্তুগুলি খুঁজে পেল না। আরো কয়েকটি দোকান ঘুরে সে উড়ন্ত পাখি, ময়ূর পঙ্খি নৌকা, রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি কিনে নিল। এক সময় বিক্রেতাকে সে প্রশ্ন করল, “তার প্রত্যাশিত শখের জিনিসগুলো নেই কেন” উত্তরে বিক্রেতা বলল, “এসবের এখন বেশি চাহিদা নেই বলে তারা আর বানায় না।”

 ক.    কে ছোকড়াদের দামড়া বলে ডাকছিল?
খ.    কেন বঙ্গবন্ধুর ছবিকে নিচে বা মধ্যে রাখা যায় না?
গ.    সুমনার কেনা পণ্যসামগ্রীর সাথে তোমার পঠিত গদ্য ‘কতদিকে কত কারিগর’- এ বর্ণিত শিল্পপণ্যের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ.    সুমনার না পাওয়া জিনিসগুলো সম্পর্কে দোকানির বক্তব্যের যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।

উত্তর

 ক     পাল মশাই ছোকড়াদের দামড়া বলেছিল।

 খ     বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে সম্মানিত করার লক্ষ্যেই তাঁর ছবি নিচে রাখা যায় না।
বঙ্গবন্ধুর স্থান সবার ঊর্ধ্বে বলে পালমশাই তাঁর ছবিটিকে সব ছবির উপরে স্থান দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হলেন বাংলাদেশের স্থপতি। তিনি সবার কাছে সম্মানের। তাই তাঁর প্রতিকৃতি সবার ঊর্ধ্বে রাখাই উচিত, কোনোভাবেই বঙ্গুবন্ধুর ছবি মধ্যে বা নিচে রাখা যায় না। পালমশাইয়ের এ ধারণায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশিত হয়েছে।

 গ     সুমনার কেনা উড়ন্ত পাখি, ময়ূরপঙ্খি নৌকা, রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি প্রভৃতি জিনিস লোকসংস্কৃতির উপাদান। তার কেনা এসব পণ্যসামগ্রীর সঙ্গে ‘কতদিকে কত কারিগর’ রচনায় বর্ণিত শিল্পপণ্যের সাদৃশ্য বিদ্যমান।
‘কতদিকে কত কারিগর’ রচনায় আমরা দেখি কুমোরগণ মাটির তৈরি জিনিসপত্র যেমন- হাঁড়ি, পাতিল, সরা, সানকি প্রভৃতি বানাচ্ছে। এছাড়া তারা মাটির পাটায় ফুলের নকশা, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, লালনসহ নানা মনীষীর ছবি আঁকছে। কুমোরগণের সব কাজই মূলত মাটিকে ঘিরে ।
উদ্দীপকেও আমরা দেখি, সুমনা মেলা থেকে একটি উড়ন্ত পাখি, ময়ূরপঙ্খি নৌকা, রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি কিনেছে। সেগুলো সবই মাটির তৈরি। গল্পে বর্ণিত শিল্পপণ্য মূলত আমাদের মৃৎশিল্পের অংশ। সুমনার কেনা উড়ন্ত পাখি ও ময়ূরপঙ্খি নৌকা লোকশিল্পের অন্যতম উপাদান। তাই বলা যায়, ঐতিহ্যগত দিক থেকে উদ্দীপকে ও আলোচ্য রচনায় আমাদের লোকসংস্কৃতি, লোকশিল্পের উপাদানের সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। 

 ঘ     বর্তমান সময়ে বাহারি পণ্যের ভিড়ে বাংলা ও বাঙালির শিকড়ঘেরা জিনিসগুলো হারাতে হয়েছে। সে কারণে উদ্দীপকের দোকানির করা মন্তব্য যথার্থ।
‘কতদিকে কত কারিগর’ প্রবন্ধে আমরা দেখি পালমশাই বংশপরম্পরায় কুশের পেশায় থাকলেও এ পেশায় কাজের গুণগত মান সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। সে মাটির পাটায় রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের ছবি ফুটিয়ে তোলে শুধুমাত্র এসবের কাটতি বেশি দেখে।
উদ্দীপকের সুমনা পহেলা বৈশাখের মেলায় গিয়ে শখের হাঁড়ি, টেপা পুতুল ও শীতল পাটি কিনতে চেয়েছিল। কিন্তু মেলায় কোথাও তার হদিস মেলেনি। সুমনা যখন একজন বিক্রেতাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করে তখন বিক্রেতার স্পষ্ট জবাব এসব পণ্যের চাহিদা না থাকায় তারা আর এসব পণ্য তৈরি করেন না। মূলত বাঙালির আদিম এ শিল্পপণ্যগুলোর প্রতি মানুষের চাহিদা কম থাকায় এ পণ্যগুলো বিলুপ্তির প্রধান কারণ।
তাই শুধুমাত্র চাহিদার ক্ষেত্রে নয়, মৃৎশিল্প আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পরিচায়ক। অপর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং এসব পণ্যের প্রতি সাধারণ মানুষের অনীহার কারণে এ শিল্প আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তাই ব্যবসায়িক স্বার্থে বিক্রেতার উক্তিটি যথার্থ বলে বিবেচিত হলেও এ শিল্পের হারানো ঐতিহ্য আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে।

প্রশ্ন- ২  লোকশিল্প রক্ষা ও মর্যাদা বৃদ্ধি করা। 


গোলাম মাওলা একজন সৌখিন শিল্পপতি। তিনি তাঁর বাড়ির ড্রইংরুম মাটির তৈরি ফুলদানি, নৌকা, গরুর গাড়ি এবং বিভিন্ন মনীষীর প্রতিকৃতি দিয়ে সাজিয়েছেন। এগুলো তিনি সংগ্রহ করতে নিজেই চলে যান কুমোর পাড়ার প্রবীণ কারিগরের কাছে; যিনি নামেও প্রবীণ কাজেও প্রবীণ। মাওলা সাহেবের অভিমত প্রবীণসহ আরো কয়েকজন পুরোনো কারিগরের অবদানেই আমাদের মৃৎশিল্প টিকে আছে। তাঁদের মতো পরিশ্রমী, নিষ্ঠাবান, যতœশীল এবং নিপুণ কারিগরের বড় অভাব আজকের দিনে। এই অভাব পূরণ করতে না পারলে আমাদের মৃৎশিল্প ধ্বংসের মুখে পতিত হবে।

 ক.    জয়নুল আবেদিন কে ছিলেন?
খ.    পালমশাই একজন ‘জাতশিল্পী’Ñএখানে লেখক ‘জাতশিল্পী’ বলতে কী বুঝিয়েছেন?
গ.    মাওলা সাহেবের ড্রইংরুমে সজ্জিত মাটির জিনিসপত্রের দ্বারা ‘কতদিকে কত কারিগর’ রচনার কোন দিকটিকে ইঙ্গিত করেন ব্যাখ্যা কর।
ঘ.    ‘তাঁদের মতো পরিশ্রমী, নিষ্ঠাবান, যতœশীল এবং নিপুণ কারিগরের বড় অভাব আজকের দিনে।’ মাওলা সাহেবের এই অভিমত উদ্দীপক এবং ‘কতদিকে কত কারিগর’ রচনার আলোকে বিশ্লেষণ কর।

উত্তর

 ক     জয়নুল আবেদিন ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী।

 খ     ‘পালমশাই একজন জাতশিল্পী’ বলতে জন্মসূত্রেই যে শিল্পী তাকেই বোঝায়।
বংশপরম্পরায় যারা গ্রামীণ লোকশিল্পের সঙ্গে জড়িত জাতশিল্পী বলতে তাদেরই বোঝানো হয়। ‘পালমশাই একজন জাতশিল্পী’ এখানে লেখক জাতশিল্পী বলতে শিল্পকর্ম বাছাইয়ে দক্ষ, কাজের ক্ষেত্রে সর্বদা সতর্ক শিল্পী পালমশাইকে বুঝিয়েছেন।

 গ     মাওলা সাহেবের ড্রইংরুমে সজ্জিত মাটির জিনিসপত্র দ্বারা ‘কতদিকে কত কারিগর’ রচনার লোকশিল্প সামগ্রীর প্রয়োজনীয়তার দিকটিকে ইঙ্গিত করে।
কুমোরের তৈরি জিনিসপত্রের ধরন বদলে গেছে। এখন আর আগের মতো শুধু হাঁড়ি-পাতিলের মধ্যেই মৃৎশিল্প সীমাবদ্ধ নেই। বর্তমানে সময়ে মাটির তৈরি নানা রকম সামগ্রী তৈরি হচ্ছে, সেগুলো দিয়ে ঘর সাজানো যায়। তাই তো পালমশাই বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি, তাদের আঁকা চিত্র, নানারকম নকশা তৈরি করছেন। এসবের দাম কম এবং শিল্পমান বেশি হওয়ার কারণে দিন দিন এসবের কদর বেড়ে যাচ্ছে। আর এর মাধ্যমেই লোকশিল্পের মূল্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উদ্দীপকেও আমরা এমনি একটি বিষয়ের প্রতিফলন দেখি, মাওলা সাহেব অনেক অর্থবিত্তের মালিক হওয়া সত্ত্বেও তার বাড়ির ড্রইংরুম সাজিয়েছেন মাটির তৈরি ফুলদানি, নৌকা, গরুর গাড়ি, বিভিন্ন মনীষীর প্রতিকৃতি দ্বারা। লোকশিল্পের কদর বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে এসব শিল্পকর্ম যে দিন দিন মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তা বলা যায়। 

 ঘ     লোকশিল্প রক্ষার তাগিদে কুমোরদের প্রতি উৎসর্গিকৃত গোলাম মাওলা সাহেবের উক্তি যথাযথ।
লোকশিল্প বাঙালির চিরন্তন ঐতিহ্যের উৎস। লোকশিল্প আমাদের দেশীয় কারিগরি ও নিজস্ব উপাদান দ্বারা তৈরি হয় বলে তা কিছুটা সহজলভ্য। তবে দিন দিন নানা কারণে আমাদের লোকশিল্প বিলুপ্ত প্রায়। এক্ষেত্রে লোকশিল্প বিলুপ্তির অন্যতম প্রধান কারণ নিষ্ঠাবান, পরিশ্রমী ও প্রবীণ কারিগরদের অভাব।
কুমোর শ্রেণি জীবিকা নির্বাহের উপর এ পেশার উপর নির্ভরশীল হলেও এ পেশার প্রতি তাদের দরদ কম, লোকশিল্পের অফুরন্ত প্রাণের ভাণ্ডার যে মৃৎশিল্প বাঙালির প্রাণের শিল্প, যা বাঙালির আদিম ভাণ্ডার পরিচয় বহন করে তা বর্তমান সময়ের কুমোরদের জানা নেই। তাই আমরা উদ্দীপকের লোকশিল্প অনুরাগী মাওলা সাহেবের সাথে সুর মিলিয়ে বলতে পারি বর্তমান সময়ে পরিশ্রমী, নিষ্ঠাবান এবং যতœশীল, নিপুণ কারিগরের বড় অভাব।
বিশ্বের দরবারে লোকশিল্প বাংলাদেশকে আলাদা মর্যাদা প্রদান করে। তাই আমাদের উচিত লোকশিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকদের এ বিষয়টি অবগত করা যে- লোকশিল্প বাঙালির শিকড়। তাই শিল্পটি যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্য কুমোরদের পরিশ্রমী ও যতœবান হতে হবে।


Photo source by Google
Previous Post Next Post

نموذج الاتصال