পঞ্চম শ্রেণি, বিজ্ঞান, প্রথম অধ্যায় , প্রশ্নোত্তর আমাদের পরিবেশ


প্রথম অধ্যায়  

  প্রশ্নোত্তর    আমাদের পরিবেশ


    সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর:   


০১।    খাদ্যজাল ও খাদ্যশৃঙ্খলের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর:    খাদ্যজাল ও খাদ্যশৃঙ্খলের মধ্যে পার্থক্য হলোÑ
খাদ্যজাল    খাদ্যশৃঙ্খল
১। যে কোনো বাস্তুসংস্থানে বিদ্যমান একাধিক খাদ্য শৃঙ্খল একটি অপরটির সাথে যুক্ত হয়ে খাদ্য জাল তৈরি করে।    ১। বাস্তুসংস্থানে উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে শক্তি প্রবাহের ধারাবাহিক প্রক্রিয়াকে বলে খাদ্য শৃঙ্খল।
২। এটি বিভিন্ন খাদ্য শৃঙ্খলের মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করে।    ২। এটি জীব পরিবেশের উপাদানসমূহের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে প্রকাশ করে।
৩। খাদ্যজালে দুই বা ততোধিক খাদ্য শৃঙ্খল থাকে।    ৩। খাদ্যশৃঙ্খলে উৎপাদক হিসেবে সবুজ উদ্ভিদ ও খাদক হিসেবে দুই বা ততোধিক প্রাণী থাকে।
৪। খাদ্য জাল একটি বৃহৎ প্রক্রিয়া।     ৪। খাদ্য শৃঙ্খল একটি ক্ষুদ্র প্রক্রিয়া।
৫। একটি পরিবেশে একটি খাদ্যজাল থাকে।    ৫। একটি পরিবেশে অনেকগুলো খাদ্য শৃঙ্খল থাকতে পারে।
০২।    উদ্ভিদ কিসের জন্য প্রাণীর উপর নির্ভরশীল?
উত্তর:    উদ্ভিদ তার খাদ্য তৈরি, বৃদ্ধি, পরাগায়ন ও বীজের বিস্তরণের জন্য প্রাণীর উপর নির্ভরশীল।
উদ্ভিদ খাদ্য তৈরির জন্য প্রাণীর ত্যাগ করা কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করে। পুষ্টি উপাদানের জন্যও উদ্ভিদ প্রাণীর উপর নির্ভরশীল। প্রাণীর মৃতদেহ প্রাকৃতিক সারে পরিণত হয়। এই সার পুষ্টি হিসেবে ব্যবহার করে উদ্ভিদ বেড়ে ওঠে। পাখি, মৌমাছি ইত্যাদি প্রাণী উদ্ভিদের পরাগায়নে সাহায্য করে। আবার পাখি, মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী উদ্ভিদের বীজের বিস্তরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
০৩।    মানুষ নির্ভর করে এমন তিনটি জড় বস্তুর উদাহরণ দাও।
উত্তর:    বেঁচে থাকার জন্য মানুষ বিভিন্ন জড় বস্তুর উপর নির্ভর করে। এই জড় উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলোÑ বায়ু, পানি ও খাদ্য। মানুষ শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে বায়ু থেকে অক্সিজেন নেয়। পান করার জন্য মানুষের পানি প্রয়োজন। আবার দৈহিক পুষ্টির জন্য মানুষ খাদ্যের উপর নির্ভরশীল।
০৪।    পরাগায়ন কী?
উত্তর:    ফুলের পরাগধানী থেকে পরাগরেণুর একই ফুলের বা একই জাতের অন্য ফুলের গর্ভমু-ে স্থানান্তরিত হওয়াকে পরাগায়ন বলে। এটি ফল ও বীজ উৎপাদন প্রক্রিয়ার পূর্বশর্ত।

অতিরিক্ত সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

০১।    পরিবেশের উপাদানগুলোকে কয়ভাগে ভাগ করা যায়?
উত্তর:    পরিবেশের উপাদানগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
০২।    পরিবেশের উপাদানগুলো কী কী?
উত্তর:    পরিবেশের উপাদানগুলো দুই ধরনের- জীব উপাদান ও জড় উপাদান।
০৩।    বেঁচে থাকার জন্য উদ্ভিদ কোন জড় উপাদানের উপর নির্ভর করে?
উত্তর:    বেঁচে তাকার জন্য উদ্ভিদ বিভিন্ন জড় উপাদানের উপর নির্ভর করে। যেমনÑ সূর্যের আলো, মাটি, পানি, বায়ু ইত্যাদি।
০৪।    বাস্তুসংস্থান কাকে বলে?
উত্তর:    কোনো স্থানের সকল জীব ও জড় এবং তাদের মধ্যকার পারস্পরিক ক্রিয়াই হলো ঐ স্থানের বাস্তুসংস্থান।
০৫।    উদ্ভিদের বীজ সৃষ্টি হয় কীভাবে?
উত্তর:    পরাগায়নের ফরে উদ্ভিদের বীজ সৃষ্টি হয়।
০৬।    উদ্ভিদের পরাগায়নে সাহায্যকারী নিয়ামকগুলো কী কী?
উত্তর:    উদ্ভিদের পরাগায়নে সাহায্যকারী নিয়ামকগুলো হলো: পানি, বায়ু, প্রাণী, যেমনÑ মানুষ, পাখি, মৌমাছি ইত্যাদি।
০৭।    বীজের বিস্তরণ কাকে বলে?
উত্তর:    মাতৃউদ্ভিদ থেকে বিভিন্ন স্থানে বীজের ছড়িয়ে পড়াকে বলে বীজের বিস্তরণ। এর ফলে নতুন নতুন ুদ্ভিদ আবাস গড়ে ওঠে।
০৮।    খাদ্য শৃঙ্খল কাকে বলে?
উত্তর:    বাস্তুসংস্থানে সবুজ উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে শক্তি প্রবাহের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার নাম খাদ্য শৃঙ্খল।
০৯।    খাদ্যজাল কী?
উত্তর:    বাস্তুসংস্থানে একাধিক খাদ্য মৃঙ্খল একত্রিত হয়ে জালের মতো যে আকার ধারণ করে তাকে বলে খাদ্য জাল।
১০।    উদ্ভিদ কীভাবে খাদ্য তৈরি করে?
উত্তর:    উদ্ভিদের পাতায় সবুজ কণিকা রয়েছে, যা ক্লোরোফিল নামে পরিচিত। উদ্ভিদ এই ক্লোরোফিলের সহায়তায় সূর্যের আলো, কার্বন ডাই অক্সাইড ও পানির সাহায্যে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে।
১১।    পরিবেশের একটি খাদ্য জালে কয়ি খাদ্য শৃঙ্খল থাকে?
উত্তর:    পরিবেশের একটি খাদ্য জালে একাধিক খাদ্য শৃঙ্খল থাকে।
১২।    সবুজ উদ্ভিদ কোন প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য তৈরি করে?
উত্তর:    সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য তৈরি করে।
১৩।    প্রাণী তার খাদ্যের জন্য কিসের উপর নির্ভরশীল?
উত্তর:    প্রাণী তার খাদ্যের জন্য উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল।
১৪।    সকল প্রাণীর শক্তি প্রয়োজন কেন?
উত্তর:    বেঁচে থাকার জন্য সকল প্রাণীর শক্তি প্রয়োজন।
১৫।    একটি তৃণজাতীয় উদ্ভিদের নাম লেখ।
উত্তর:    একটি তৃণজাথীয় উদ্ভিদ হলো ঘাস।
১৬।    প্রাণীর শ্বাসকার্যে বায়ুতে ত্যাগকৃত এবং উদ্ভিদের খাদ্য তৈরির জন্য গ্রহণকৃত উপাদানের নাম কী?
উত্তর:    প্রাণীর শ্বাসকার্যে বায়ুতে ত্যাগকৃত ও উদ্ভিদের খাদ্য তৈরির জন্য গ্রহণকৃত উপাদান হলো কার্বন ডাই অক্সাইড।
১৭।    উদ্ভিদ ও প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য কোন কোন উপাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর:    উদ্ভিদ ও প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য মাটি, পানি ও বায়ু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


বর্ণনামূলক প্রশ্নোত্তর

০১।    খাদ্য শৃঙ্খলে কীভাবে সাপ এবং ঈগল একই রকম তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর:    বাস্তুসংস্থানে উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে শক্তি প্রবাহের ধারাবাহিক প্রক্রিয়াই হলো খাদ্য শৃঙ্খল। খাদ্য শৃঙ্খলে সাপ ও ঈগল উভয়ই একই রকম তা ব্যাখ্যা করা হলোÑ
খাদ্য শৃঙ্খলে সাপ এবং ঈগল উভয়ই মাংসাশী প্রাণী বলে তারা একই রকম অর্থাৎ একই স্তরের খাদক।
বাস্তুতন্ত্রের দুটি জীব উপাদান হলো উৎপাদক ও খাদক। একমাত্র সবুজ উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে বলে তাদেরকে উৎপাদক বলা হয়। প্রাণীরা খাদ্য উৎপাদন করতে পারে না বলে খাদক হিসেবে বিবেচিত। প্রথম স্তরের প্রাণীরা তৃণভোজী, যেমনÑ ঘাসফড়িং। দ্বিতীয় স্তরের প্রাণীরা মাংসাশী এবং প্রথম স্তরের খাদকদের খেয়ে বেঁচে থাকে। তৃতীয় স্তরের খাদকেরা দ্বিতীয স্তরের খাদকদের খেয়ে বেঁচে থাকে। খাদ্য শৃঙ্খলে সাপ খায় ব্যাঙকে আবার ঈগল খায় সাপকে। কাজেই ঈগল ও সাপ উভয়ই মাংসাশী প্রাণী এবং এরা একই রকম।


০২।    নিচের শব্দগুলো নিয়ে গঠিত খাদ্য শৃঙ্খলের সঠিক ক্রম ব্যাখ্যা কর।
ঈগল, সূর্য, ঘাস, পোকামাকড়, সাপ, ব্যাঙ।
উত্তর:    বাস্তুতন্ত্রের দুটি জীব উপাদান হলো উৎপাদক ও খাদক। সবুজ উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে বলে তাদেরকে উৎপাদক বলা হয়। প্রাণীরা খাদ্য উৎপাদন করতে পারে না। এরা খাদক হিসেবে বিবেচিত। ঈগল, সূর্য, ঘাস, পোকামাকড়, সাপ, ব্যাঙ শব্দগুলো নিয়ে গঠিত খাদ্যশৃঙ্খলটি হলোÑ
    সূর্য  ঘাস  পোকামাকড়  ব্যাঙ  সাপ  ঈগল।
সকল শক্তির উৎস সূর্য। এই শক্তি উৎপাদকের মাধ্যমে বিভিন্ন স্তরের খাদকের দেহে পর্যায়ক্রমে সঞ্চারিত হয়। ঘাস সূর্যের আলো ব্যবহার করে খাদ্য তৈরি করে, পোকামাকড় ঘাস ও অন্যান্য উদ্ভিদ খেয়ে বেঁচে থাকে, ব্যাঙ পোকামাকড় খায়। একইভাবে সাপ ব্যাঙ খায় এবং ঈগল সাপ খায়। এভাবে খাদ্য শৃঙ্খলের মাধ্যমে শক্তিপ্রবাহ সূর্য থেকে ঈগল পর্যন্ত সঞ্চারিত হয়।
০৩।    বায়ুর উপর জীব কীভাবে নির্ভরশীল তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর:    বেঁচে থাকার জন্য জীব পরিবেশের বিভিন্ন জড় উপাদানের উপর নির্ভরশীল। জীবের অন্তর্ভুক্ত হলো মানুষ, অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদ আর বায়ু গুরুত্বপূর্ণ একটি জড় উপাদান। বায়ুতে রয়েছে অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন ইত্যাদি গ্যাসীয় পদার্থ। বায়ুর এই উপাদানগুলোর জন্যই জীব বায়ুর উপর নির্ভরশীল। যেমনÑ
(র)    প্রতিটি জীবের শ্বসন তথ্য শ্বাসের জন্য প্রয়োন অক্সিজেন। শ্বসনের ফলে উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ুতে নির্গত হয়।
(রর)    সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরিতে বায়ুস্থ কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করে।
(ররর)    বায়ুতে থাকা নাইট্রোজেন উদ্ভিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান।
০৪।    উদ্ভিদের জন্য বীজের বিস্তরণ কেন গুরুত্বপূর্ণ তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর:    নতুন নতুন উদ্ভিদ আবাস গড়ে তোলার জন্য উদ্ভিদের বীজের বিস্তরণ গুরুত্বপূর্ণ।
মাতৃউদ্ভিদ থেকে বিভিন্ন স্থানে বীজের ছড়িয়ে পড়াই হলো বীজের বিস্তরণ। নতুন নতুন উদ্ভিদ আবাস গড়ে তুলতে বজের বিস্তরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বীজের বিস্তরণনা ঘটলে কোনো উদ্ভিদ শুধু একটি নির্দিষ্ট স্থানেই জন্মাবে। অন্য কোথাও ঐ উদ্ভিদেক আর পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ পৃথিবীর সবস্থানে শুধু একই ধরনের উদ্ভিদ জন্মাবে। ফলে অন্যান্য উদ্ভিদের পুষ্টি ব্যাহত হবে। এছাড়াও বীজের বিস্তরণ না ঘটলে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর খাদ্যের অভাব দেখা দেবে এবং পশুপাখির আশ্রয়স্থল ধ্বংস হবে। খাদ্য ও আশ্রয়ের অভাবে অনেক প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটবে। ফলে জীববৈচিত্র্যে ভারসাম্য নষ্ট হবে। সুতরাঙ কোনো একটি উদ্ভিদের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে নতুন নতুন আবাস গড়ে তুলতে বীজের বিস্তরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
০৫।    তোমার টেবিলের উপরে রাখা গাছটি মারা যাচ্ছে। তোমার বন্ধুরা গাছটিকে জানালার পাশে নিয়ে রাখার পরামার্শ দিল। কেন?
উত্তর:    টেবিলে রাখা মরণাপন্ন গাছটির খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া চালু করার জন্য আমার বন্ধুরা গাছটিকে জানালার পাশে নিয়ে রাখার পরামর্শ দিল।
সবুজ উদ্ভিদ পাতায় থাকা ক্লোরোফিলের সাহায্যে মাটিস্থ পানি, বায়ুস্থ কার্বন ডাই অক্সাইড ও সূর্যালোকের উপস্থিতিতে শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে। বাস্তুসংস্থানে থাকা উপাদানগুলোর মধ্যে একমাত্র সবুজ উদ্ভিদই খাদ্য উৎপাদক। কিন্তু সূর্যালোকের অনুপস্থিতিতে এ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে। তাই টেবিলের উপরে রাখা গাছটি মারা যাচ্ছিল। গাছটিকে জানালার পাশে নিয়ে এলে তা আবার সজীব হয়ে ওঠে।

কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নোত্তর

০১।    কীভাবে পরিবেশে খাদ্য শৃঙ্খল তৈরি হয়?
উত্তর:    বাস্তুসংস্থানে খাদ্য উৎপাদক সবুজ উদ্ভিদ ও খাদ্য গ্রহণকারী অন্যান্য প্রাণীর (খাদক) পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে খাদ্য শৃঙ্খল তৈরি হয়।
সকল প্রাণীর শক্তির জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। উদ্ভিদ সূর্যের আলো ব্যবহার করে নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করে। পোকামাকড় উদ্ভিদ খেয়ে বেঁচে থাকে। আবার ব্রাঙ পোকামাকড়কে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। একইভাবে সাপ ব্যাঙ খায় এবং ঈগল সাপ খায়। এভাবেই শক্তি উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে প্রবাহিত হয়। বাস্তুসংস্থানে উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে শক্তিপ্রবাহের এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়াই হলো খাদ্যশৃঙ্খল। সবুজ উদ্ভিদ থেকে প্রতিটি খাদ্যশৃঙ্খলের শুরু।
০২।    পরিবেশে কীভাবে খাদ্য জাল তৈরি হয়?
উত্তর:    পরিবেশে একাধিক খাদ্যশৃঙ্খল একত্রিত হয়ে খাদ্যজাল তৈরি হয়।
যেকোনো বাস্তুসংস্থানে অনেকগুলো খাদ্যশৃঙ্খল থাকে। এসব খাদ্যশৃঙ্খল কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং বিভিন্ন খাদ্যশৃঙ্খল পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। বাস্তুসংস্থানের সকল উদ্ভিদ ও প্রাণী কোনোনা কোনো খাদ্যশৃৃঙ্খলের অন্তর্ভুক্ত। যেমনÑ ঈগল, সাপ, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, ব্যাঙ ও অন্যান্য প্রাণী খেয়ে থাকে। এটি একটি খাদ্যশৃঙ্খল। আবার সাপ খরগোশ, ইঁদুর, ব্যাঙ ও অন্যান্য প্রাণী খায়। এটি আরেকটি খাদ্যশৃঙ্খল। এভাবে একাধিক খাদ্যশৃঙ্খল একত্রিত হয়ে খাদ্যজাল তৈরি করে।
০৩।    উদ্ভিদ ও প্রাণীর নির্ভরশীলতা কোন শক্তির কারণে গড়ে উঠেছে? উদ্ভিদ ও প্রাণীর পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ক্ষেত্র উল্লেখ কর।
উত্তর:    উদ্ভিদ ও প্রাণীর নির্ভরশীরতা সৌরশক্তির কারণে গড়ে উঠেছে।
উদ্ভিদ ও প্রাণীর পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ক্ষেত্র নিচে উল্লেখ করা হলোÑ
(র)    প্রতিটি জীব শ্বাসকার্যে অক্সিজেন ব্যবহার করে ও কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে। সবুজউদ্ভিদ খাদ্য তৈরিতে এই কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করে ও অক্সিজেন ত্যাগ করে।
(রর)    সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করে। প্রাণীরা খাদ্যের জন্য সবুজ উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। আবার মৃত জীবদেহ মাটিতেি মশে গিয়ে প্রাকৃতিকভাবে সারে পরিণত হয় এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। আর এ পুষ্টি উপাদানগুলো উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য একান্ত প্রয়োজন।
(ররর)    কীট-পতঙ্গ, পাখি ইত্যাদি প্রাণীর মাধ্যমে উদ্ভিদের পরাগায়ন ঘটে। পরাগায়নের জন্য ফল সৃষ্টি হয়, যা প্রাণী খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
(রা)    অনেক প্রাণীর মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্ভিদের বীজ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এবং নতুন নতুন উদ্ভিদ আবাস সৃষ্টি হয়। আবার অনেক উদ্ভিদ আছে যেগুলো বিভিন্ন প্রাণী এবং কীটপতঙ্গের আবাসস্থল।
০৪।    পরিবেশের উপর জীবের নির্ভরশীলতার দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তর:    জীব বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশের মাটি, পানি, বায়ু ইত্যাদি উপাদানের উপর নির্ভরশীল। পরিবেশের উপর জীবের নির্ভরশীলতার দুটি উদাহরণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
(র)    বায়ু ছাড়া জীব বেঁচে থাকতে পারে না। কারণ জীব তার শ্বাসকার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পরিবেশের উপাদান বায়ু থেকে পায়।
(রর)    পানি ছাড়া কোনো জীব বাঁচতে পারে না। পরিবেশের উপাদান মাটির উপর ও নিচ থেকে জীব পানি সংগ্রহ করে।
০৫।    তুমি কী কী কারণে উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল তা পাঁচটি বাক্যে লিখ।
উত্তর:    আমি বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়ে উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। যেমনÑ
(র)    উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় যে অক্সিজেন ত্যাগ করে আমি তা শ্বাসকার্যে ব্যবহার করে বেঁচে থাকি।
(রর)    উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ, যেমনÑ কা-, শাখা ও ফলমূল আমি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি।
(ররর)    আমি উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক তন্তু নির্মিত পোশাক পরিধান করি।
(রা)    আমি বাসস্থান ও বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরিতে উদ্ভিদ ব্যবহার করি।
(া)    উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করে আমি রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকার করি।
০৬।    রাজুদের স্কুলের মাঠে বড় একটি বটগাছ আছে। গাছটি কোন কোন ক্ষেত্রে রাজু ও অন্যান্য প্রাণীর উপর নির্ভরশীল?
উত্তর:    উদ্ভিদ ও প্রাণী পরস্পর নির্ভরশীল। রাজুদের স্কুলের মাঠে থাকা বটগাছটি নানাভাবে রাজু ও অন্যান্য প্রাণীর উপর নির্ভরশীল। যেমনÑ
(র)    রাজু ও অন্যান্য প্রাণী শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে যে কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে বটগাছটি তা ব্যবহার করে খাদ্য তৈরি করে।
(রর)    পাখি, মৌমাছি ইত্যাদি বটগাছটির পরাগায়নে সাহায্য করে।
(ররর)    রাজু ও অন্যান্য প্রাণী, যেমনÑ পাখি গাছটির বীজের বিস্তরণে সাহায্য করে বলে গাছটির নতুন নতুন আবাস গড়ে ওঠে।
(রা)    বিভিন্ন প্রাণীর মৃতদেহ প্রাকৃতিকভাবে সারে পরিণত হয়, যা পুষ্টি হিসেবে ব্যবহার করে বটগাছটি বেড়ে ওঠে।

০৭।    বাস্তুসংস্থান কাকে বলে? বাস্তুসংস্থানের উপাদানগুলোর উপর মানুষ নির্ভরশীল কেন? একটি বাস্তুসংস্থানে ঈগলের সংখ্যা কমে গেলে পরিবেশে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?
উত্তর:    কোনো স্থানের সকল জীব ও জড় এবং তাদের মধ্যকার পারস্পরিক ক্রিয়াই হলো ঐ স্থানের বাস্তুসংস্থান।
মানুষ বাস্তুসংস্থানের জীব ও জড় উপাদানের উপর খাদ্য ও বেঁচে থাকার বিভিন্ন নিয়ামকের জন্য নির্ভরশীল। যেমনÑ খাদ্যের জন্য মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণীর উপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন জড় উপাদানের মধ্যে মানুষের শ্বাস গ্রহণের জন্য বায়ু, পান করার জন্য পানি, পুষ্টির জন্য খাদ্য, ফসল ফলানো ও বাসস্থান তৈরির জন্য মাটি প্রয়োজন। তাছাড়াও জীবন যাপনের জন্য বাসস্থান, আসবাবপত্র, পোশাক, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি প্রয়োজন।
একটি বাস্তুসংস্থানের খাদ্যজালে থাকা ঈগলের সংখ্যা কমেে গেলে ঈগল যেসব প্রাণীকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত সেগুলোর সংখ্যা বেড়ে যাবে। যেমনÑ ঈগলের খাদ্য হলো ইঁদুর, সাপ, কাঠবিড়ালি, পতঙ্গভোজী পাখি ইত্যাদি।
ঈগলের সংখ্যা কমেে গেল ইঁদুরের সংখ্যা বেড়ে যাবে। ফলে ইঁদুর ফসলের ক্ষতি সাধন করবে, তৃণজাতীয় উদ্ভিদের পরিমাণ কমে যাবে যা ঘাসফড়িং, খরগোশ ও অন্য তৃণভোজী প্রাণীদেরক প্রভাবিত করবে। আবার ঈগলের সংখ্যা কমে গেলে পরিবেশের সাপের সংখ্যা বেড়ে যাবে, যা খরগোশের জীবন বিপন্ন করে তুলবে। অন্যদিকে ঈগলের সংখ্যা কমে গেলে পতঙ্গভোজী পাখির সংখ্যা বেড়ে গিয়ে ঘাসফড়িংের জীবন বিপন্ন হবে।
০৮।    উদ্ভিদ ও প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য কেন মাটি, পানি ও বায়ু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ? পাঁচটি বাক্য লেখ।
উত্তর:    উদ্ভিদ ও প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য মাটি, পানি ও বায়ু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণÑ
(র)    মাটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল।
(রর)    উদ্ভিদ মাটি থেকে পানি সংগ্রহ করে খাদ্য তৈরিতে ব্যবহার করে এবং প্রাণীর সে খাদ্য খেয়ে বেঁচে থাকে।
(ররর)    প্রাণীর মৃতদেহ মাটিতে মিশে প্রাকৃতিক সারে পরিণত হয়, যা উদ্ভিদ পুষ্টি দ্রব্য হিসেবে গ্রহণ করে।
(রা)    উদ্ভিদ ও প্রাণী বায়ু থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে শ্বসনকার্যে ব্যবহার করে।
(া)    উদ্ভিদ বায়ুতে যে অক্সিজেন নির্গত করে তা প্রাণী গ্রহণ করে বেঁচে থাকে এবং প্রাণী দেহ থেকে নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইড উদ্ভিদ খাদ্য তৈরিতে ব্যবহার করে।
Previous Post Next Post

نموذج الاتصال