নবম শ্রেণি,ব্যবসায় উদ্যোগ,তৃতীয় অধ্যায় : (আত্মকর্মসংস্থান)

 ব্যবসায় উদ্যোগ

তৃতীয় অধ্যায় : (আত্মকর্মসংস্থান)

পাঠ্যবইয়ের উপর ভিত্তি করে সৃজনশীল

 প্রশ্ন- ০১:

কাকলী একজন শিক্ষিত বেকার। বহু ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি না পেয়ে সে আতœকর্মসংস্থানমূলক পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে সে আতœকর্মসংস্থান ভিত্তিক অনেকগুলো প্রকল্পের সম্ভাব্যতা,প্রতিবন্ধকতা ও লাভের সম্ভাবনা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে মৎস্য চাষ ও মৎস্য খামারের চারপাশে ফুল চাষ করার সিদ্ধান্ত নেয়। উক্ত পেশায় সফল হয়ে পরবর্তীতে সে আরও বড় আকারের মৎস্য চাষ এবং ফুলের চাষ করেন। ফলে এলাকার কিছু বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
ক) আতœকর্মসংস্থান কি?
খ) কাকলীর আতœকর্মী হওয়ার কারন বর্ণনা কর।
গ)  আতœকর্মসংস্থানমূলক প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে তুমি কিভাবে অগ্রসর হবে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ) বাংলাদেশের শিক্ষিত বেকারদের বেকারত্ব লাঘবে আতœকর্মসংস্থানের অবদান বিশ্লেষণ কর।


উত্তর:

ক.   আত্মকর্মসংস্থান: সাধারণভাবে বলা যায়, যখন একজন ব্যক্তি বেতনের বিনিময়ে চাকরি না করে, নিজেই নিজের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে তখন তাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে।
ব্যাপকভাবে বলা যায়, নিজস্ব অথবা ঋণ করা স্বল্প সম্পদ, নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে আত্মপ্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে।
খ. কাকলীর আত্মকর্মী হওয়ার কারণ: কাকলীর আত্মকর্মী হওয়ার কারণসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হল:
    স্বাধীন ব্যবসায়: আত্মকর্মসংস্থান একটি স্বাধীন ব্যবসা। এর দ্বারা নিজের ও অন্যের কর্মসংস্থান করা যায়।
    জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন: আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবনযাত্রায় মানের উন্নয়ন সম্ভব। তাই কাকলী আত্মকর্মী হওয়ার পথ বেছে নিয়েছে।
    উপার্জন বৃদ্ধি: আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে ক্রমশ উপার্জন বৃদ্ধি পায় যা অন্য কর্মসংস্থানের বা চাকরির ক্ষেত্রে হয় না।
    ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্য: আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যায়। তাই কাকলী নিজেকে আত্মকর্মী হিসেবে বেছে নিয়েছে।
গ. আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্পে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে আমি নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারিÑ
    সঠিক কর্মসংস্থান নির্বাচন: সঠিক কর্মসংস্থান নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সঠিক কর্মসংস্থানে সফল হতে হলে প্রশিক্ষণ গ্রহণ প্রয়োজন। তাই এক্ষেত্রে আমিও প্রশিক্ষণ, নিয়ে অগ্রসর হতে পারি।
    পণ্যের চাহিদা নির্ধারণ: পণ্যের চাহিদা নির্ধারণ করা আত্মকর্মসংস্থান সফল হওয়ার পূর্বশর্ত। বাজার জরিপের মাধ্যমে পণ্যের চাহিদা নির্ধারণ করে আমি অগ্রসর হতে পারি।
    পুঁজি সংগ্রহ: প্রয়োজনীয় পুঁজি সংগ্রহ করা আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্পে সফল হওয়ার একটি অন্যতম শর্ত। বিভিন্ন উৎস থেকে পুঁজি সংগ্রহ করতে হবে।
    বাজার জরিপ: বাজার জরিপ বলতে পণ্যের বাজার পর্যবেক্ষণ করাকে বুঝায়। এর মাধ্যমে পণ্যের বাজার সম্প্রসারন করা সহজ হবে।
    প্রতিযোগীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ: আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্প শুরত্ব করার পূর্বে প্রতিযোগীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা অতীব জরুরি বিষয়। তাই আমি সঠিক তথ্য সংগ্রহ করব।
    আনুষাঙ্গিক সুযোগ সুবিধা: আত্মকর্মসংস্থানের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা  বিদ্যমান থাকা আবশ্যক। যেমন: গ্যাস বিদ্যুৎ, পানি, শ্রমিক সরবরাহ ইত্যাদি।
আমি মনে করি, আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্পে সফলতা পেতে হলে উপরিউক্ত বিষয়সমূহে গুরুত্ব প্রদান করা উচিত।  

ঘ. শিক্ষিত বেকারদের বেকারত্ব লাঘবে আত্মকর্মসংস্থানের অবদান: বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি। শিক্ষিত বেকার যুবকদের বেকারত্ব লাঘবে আত্মকর্মসংস্থান যেসব অবদান রাখতে পারে সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল:
    সহজ কর্মসংস্থান: একজন শিক্ষিত বেকার নিজস্ব স্বল্পপুঁজি কিংবা স্বল্প পরিমান ঋণ নিয়ে সহজেই ব্যবসায় কিংবা শিল্পোদ্যোগ গ্রহণ করে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে পারে।
    ব্যক্তি স্বাধীনতা: আত্মকর্মসংস্থান একটি স্বাধীন পেশা হিসেবে গ্রহণ করা যায়। এ ধরনের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে উদ্যম, বুদ্ধি ও পরিশ্রমের ফলে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।
    অধিক উপার্জন: মজুরি ও বেতনভিত্তিক চাকরিতে উপার্জন হয় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। পক্ষান্তরে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে অধিক উপার্জন সম্ভব হয়।
    জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন: আত্মকর্মসংস্থানের নানা রকম প্রকল্প মানুষের বিভিন্নমুখী চাহিদা পূরণ করতে পারে। ফলে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
    স্বল্প পুঁজি: স্বল্প পুঁজি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়। যেমন: মৎস্য খামার, খেলনা তৈরী, কাঠের আসবাবপত্র তৈরী ইত্যাদি।
    সম্পদের সদ্ব্যবহার: কৃষি সম্পদ, খনিজ সম্পদ, বনজ সম্পদ ইত্যাদির মাধ্যমে ক্ষুদ্র শিল্পে নতুন নতুন উদ্যোগ সৃষ্টি করা যায়। এতে সম্পদের সঠিক ও বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
    জনশক্তির সদ্ব্যবহার: উপযুক্ত ও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান না থাকায় সমাজের কর্মক্ষম একটি বিরাট জনশক্তি বেকার। আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে এসব বেকার জনশক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার সম্ভব হয়।
পরিশেষে বলা যায়, আমাদের দেশে প্রকট বেকার সমস্যার প্রেক্ষাপটে বেকারদের চাকরির বিকল্প হিসেবে আত্মকর্মসংস্থানে উৎসাহিত করা যেতে পারে।

পাঠ্যবইয়ের উপর ভিত্তি করে সৃজনশীল 

প্রশ্ন- ০২:

ফিরোজ হোসেন ডিগ্রী পাশ করার পর চাকরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর তিনি নিজ গ্রামে মৎস্য খামার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। স্থানীয় মৎস্য উন্নয়ন কার্যালয় থেকে তিনি মৎস্য চাষ বিষয়ক মাসব্যপী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। মাত্র ১ একর পুকুরে মাছ চাষ করে ১ম বছরে তার লাভ  হয় ৫০,০০০ টাকা। লাভের টাকা পেয়ে তার উৎসাহ আরও বেড়ে গেল। সঞ্চিত টাকা এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে কিছু টাকা ঋণ নিয়ে বড় আকারের প্রকল্প হাতে নিলেন। আর এভাবেই তিনি গড়ে তুলেছেন বিকল্প মৎস্য খামার। তার মতে সঠিক প্রশিক্ষণ আর দৃঢ় মনোবল নিয়ে কাজে অগ্রসর হলে সফলতা আসবেই।
ক. কর্মসংস্থান কত প্রকার ও কি কি?
খ. কোন কোন গুন থাকলে একজন আত্মকর্মসংস্থানকারী সফল হতে পারে?
গ. বাংলাদেশে আত্মকর্মসংস্থানের কোন কোন ক্ষেত্রে একজন আত্মকর্মসংস্থানকারী নিজেকে  নিয়োজিত করতে পারেন?
ঘ. ফিরোজ হোসেনের আত্মকর্মসংস্থান হিসেবে মৎস্য খামারকে পছন্দ করার কারনগুলো বিশ্লেষণ কর।

উত্তর:

ক. কর্মসংস্থানের প্রকারভেদ: জীবন ধারনের জন্য মানুষের কাজের সংস্থান বিভিন্নভাবে হতে পারে। কর্মের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কর্মসংস্থানকে প্রধানত ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

    মজুরি ও বেতন ভিত্তিক                       আত্ম-কর্মসংস্থান
    ব্যবসায়

খ. আত্মকর্মসংস্থানকারীর যেসব গুণাবলি থাকা প্রয়োজন: একজন আত্মকর্মসংস্থানকারীর সফলতা অর্জনের জন্য বেশ কিছু গুণাবলির অধিকারী হতে হয়। নিম্নে তা উল্লেখ করা হল:

    আত্মবিশ্বাস                           সুযোগের সদ্ব্যবহারের ক্ষমতা
    অধ্যবসায়                            পুঁজি সংগ্রহের ক্ষমতা
    উদ্ভাবনী শক্তি                       স্বাধীনচেতা
    সাহসী                                   সংবেদনশীল
    কঠোর পরিশ্রমী                      নেতৃত্বদানের যোগ্যতা ইত্যাদি।

এছাড়াও একজন সফল আত্মকর্মসংস্থানকারী দেশে বিরাজমান অর্থনৈতিক সুযোগ- সুবিধাগুলো চিহিৃত করে তা বাণিজ্যিক লক্ষ্যে ব্যবহার করতে সক্ষম। তারা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সীমিত সম্পদের মধ্যে পরিকল্পনা তৈরী করেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহন করেন।
গ. বাংলাদেশে আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সমূহ: বাংলাদেশ একটি দারিদ্র্য- পীড়িত জনবহুল দেশ। দেশে যে পরিমানে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তার চেয়ে অনেক কম হারে চাকুরির সুযোগ বাড়ছে। দেশের বৃহত্তর যুবসমাজ আত্ম-কর্মসংস্থান প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে। নিম্নে আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রগুলো উল্লেখ করা হল:

    হাঁস- মুরগি পালন                                    গবাদি পশুপালন
    মৎস্য চাষ                                              সবজি বাগান তৈরী
    ফুলের চাষ                                              নার্সারী
    মৌমাছি চাষ                                            রেশম চাষ
    বাশ ও বেতের কাজ                                  হস্ত শিল্প,কুটির শিল্প, মৃৎশিল্প
    সেলাই                                                     আচার, জেলি প্রস্তুতকরণ
    ব্লক ও বাটিক প্রিন্ট                                    উন্নতমানের গ্রামীণ চুল্লী তৈরী
    পশু খাদ্য প্রস্তুতকরণ                                 ওয়েল্ডিং
    রাবার চাষ                                               রেডিও, টিভি, ভিসিয়ার মেরামত ইত্যাদি।

ঘ. ফিরোজ হোসেন চাকরি লাভে ব্যর্থ হয়ে আত্মকর্মসংস্থানের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি মৎস্য খামার স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি আত্মকর্মসংস্থানের জন্য মৎস্য খামার কেন গঠন করেছেন তার কারণগুলো নিম্নে বিশ্লেষণ করা হল-
    স্বাধীন পেশা: এটি একটি স্বাধীন পেশা। নিজের ইচ্ছা, বুদ্ধি, পরিশ্রমের উপর এর সফলতা নির্ভর করে।
    স্বল্প মূলধন: স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে সহজে মৎস্য খামার তৈরী করা যায়।
    মাছ সরবরাহ: মৎস্য ঘাটতির সময় মানুষের চাহিদা পূরনের জন্য মৎস্য চাষকে লাভজনক পেশা হিসেবে গড়ে তোলা যায়।
    অধিক মুনাফা: মৎস্য খামারে কিছু ঝুঁকি থাকলেও সফলভাবে মোকাবেলা করলে এ ব্যবসায় হতে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।
    বাজারজাতকরণ: মৎস্য বাজারজাতকরণে তেমন সমস্যা হয় না।
পর্যাপ্ত চাহিদা থাকার কারণে স্থানীয় বাজার বা জনবসতিপূর্ণ এলাকায় সহজেই মাছ বিক্রয় করা যায়।
উল্লেখিত কারনে আত্ম-কর্মসংস্থান হিসেবে মৎস্য খামারকে বেছে নিয়েছেন ফিরোজ হোসেন, তার মতে, দেশের বেকার তরুন সমাজ মৎস্য চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে হতে পারে স্বর্নিভর। মৎস্য খামার স্থাপনে একজন ব্যক্তি নিজস্ব চিন্তার প্রতিফলন ঘটিয়ে  একে লাভজনক ব্যবসায় হিসেবে পরিচালনা করতে পারে।



পাঠ্যবইয়ের উপর ভিত্তি করে সৃজনশীল

 প্রশ্ন- ০৩:

রাকিব আহমেদ একজন বেকার যুবক। অনেক ভেবেচিন্তে সে স্থির করল তাদের স্থানীয় বাজারে একটি মুদি দোকান করবে। এ লক্ষ্যে  স্থানীয় একটি এন.জি. ও   থেকে সে কিছু টাকা ঋন নিয়ে ব্যবসায় আরম্ভ করল। ব্যবসায়ে সে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। কোন কাজে কারও নিকট জবাবদিহি করতে হয় না। তাই সে তার ব্যবসায় সন্তুষ্ট।
ক. ক্ষুদ্র ব্যবসায় কি? ক্ষুদ্র ব্যবসায় বলতে কি বুঝ?
খ. রাকিব আহমেদের ব্যবসায়ের ধরন সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
গ. ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে বিদ্যমান অসুবিধাসমূহ চিহিৃত কর।
ঘ. রাকিব আহমেদের ব্যবসায়ে সন্তুষ্টির কারণ বিশ্লেষণ কর।


উত্তর:

ক. ক্ষুদ্র ব্যবসায়: সাধারণত পুঁজি বিনিয়োগের পরিমাণ, কর্মচারীর সংখ্যা, বিক্রয়ের পরিমান প্রভৃতির মাপকাঠিতে ব্যবসায়ের আকার নিরূপন করা হয়। সুতরাং স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ থেকে শুরু করে। সর্বোচ্চ তিন কোটি টাকা বিনিয়োগকৃত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে ক্ষুদ্র ব্যবসায় বলে।
উদাহরণ: মুদির দোকান, কাপড়ের দোকান, খাবারের হোটেল, ফটোস্টুডিও, কনফেকশনারি ইত্যাদি।
খ. রাকিব আহমেদের ব্যবসায়ের ধরণ: রাকিব আহমেদ তাদের স্থানীয় বাজারে মুদি দোকান চালু করেছে। সাধারণত মুদির দোকান, কাপড়ের দোকান, মনিহারি দোকান, খাবারের হোটেল, রেস্টুরেন্ট, সেলুন, ফলমূলের দোকান, কনফেকশনারি, ফটো স্টুডিও ইত্যাদি ক্ষুদ্রব্যবসায়ের অন্তর্ভুক্ত।
সুতরাং রাকিব আহমেদের ব্যবসায়টি নিঃসন্দেহে একটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়।
গ. ক্ষুদ্র ব্যবসায় বিদ্যমান অসুবিধা: ক্ষুদ্র ব্যবসায় পরিচালনা করতে গিয়ে সাধারণত যেসব সমস্যার সৃষ্টি হয় মূলত তাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের অসুবিধা, নিম্নে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে বিদ্যমান অসুবিধাসমূহ চিহিৃত করা হল-

    ব্যক্তিগত অসুবিধা:


    ব্যর্থতার/ সাফল্যের ভীতি                                   ব্যক্তিগত সময় অপচয়
    ব্যক্তিগত সুনাম ক্ষুন্ন                                           অর্থের অপচয়
    নেতৃত্বের অনুভূতি হারানো                                  আত্মবিশ্বাস হারানো

    সামাজিক অসুবিধা:


    প্রাতিষ্ঠানিক নির্বাহী হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত
    অপরের সহায্যে সময় ব্যয়
    প্রাতিষ্ঠানিক সম্পদ থেকে বঞ্চিত।

    পারিবারিক অসুবিধা:


    বিনোদন সময়ের অভাব                                            পারিবারিক নিরাপত্তা হ্রাস
    ব্যর্থতার ফলে পরিবারের হতাশা                                 পারিবারিক বোঝাপড়া ও আন্তরিকতার অভাব

    পেশাগত অসুবিধা:


    নিরাপত্তার অভাব                                                     পদমর্যাদা বা পদোন্নতির অভাব
    ব্যর্থতায় অর্থ সংকট                                                  স্থায়ী চাকরির সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

ঘ. রাকিব আহমেদের ব্যবসায় সন্তুষ্টির কারণসমূহ: রাকিব আহমেদ ব্যবসায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যবসায় পরিচালনা করছে স্বাধীনভাবে। এতে তার উপার্জনে অনিশ্চয়তা থাকলেও যা আয় হয় তা তার চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট ও পর্যাপ্ত। তদুপরি রাকিব আহমেদ যেসব  কারণে তার ব্যবসায়ে সন্তুষ্ট সেগুলো সংক্ষেপে নিম্নে আলোচনা করা হল-
    স্বাধীন কর্মসংস্থান: রাকিব আহমেদ ব্যবসায়ের মাধ্যমে একদিকে যেমন স্বাধীনভাবে উপার্জন করছে অন্যদিকে তেমনি অন্যের জন্য কর্মসংস্থানের ও সুযোগ সৃষ্টি করছে।
    বৃহদায়তন উৎপাদনে সাহায্যে: রাকিব আহমেদের ব্যবসায় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদকের পণ্যের বাজারজাতকরণ নিশ্চিত হয়। তাই উৎপাদক তার উৎপাদন কাজে মনোনিবেশ করে চাহিদা অনুযায়ী ব্যপক পরিমান উৎপাদন করতে পারে।  এতে পণ্যের উৎপাদন খরচ কম হয় এবং ক্রেতা অপেক্ষাকৃত কম দামে পণ্য ক্রয় করতে পারে।
    জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন: রাকিব আহমেদ জনগনের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করে থাকে। ফলে বিভিন্ন ধরনের বস্তুগত গুনসম্পন্ন পণ্য সেবা গ্রহণ করে জনগন তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে।
    জাতীয় আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি: রাকিব আহমেদের মত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের  দ্বারা দেশে ব্যবসায়- বাণিজ্যের কার্যক্রম সম্প্রসারণের সম্পদের ব্যবহার ও চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায় এবং শিল্পোন্নয়ন ঘটে। এর ফলে অর্থনীতির গতি তরান্বিত হয় এবং ব্যক্তিগত আয়,  জাতীয় আয় এবং সম্পদ বৃদ্ধি পায়।
পরিশেষে বলা যায়, উপযুক্ত কারণে রাকিব আহমেদ তার ব্যবসায় নিয়ে সন্তুষ্ট।


করণীয় সৃজনশীল প্রশ্ন

১। জনাব ইসমাইল একজন স্নাতক ডিগ্রিধারী। কর্মসংস্থানের জন্য তিনি চাকরির চিন্তা করেন না, কারণ চাকরিতে পরের অধীন ও আয়ের সুযোগ সীমিত। তাই তিনি আত্মকর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে স্থানীয় যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে পোলট্রি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। অবশেষে তিনি নিজ গ্রামে একটি পোলট্রি ফার্ম স্থাপন করেন। এতে তিনি সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন এবং দুইজন কর্মচারি নিয়োগ করেন।
ক) আত্মকর্মসংস্থান বলতে কী বোঝ?
খ) জনাব ইসমাইল প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন কেন?
গ) জনাব ইসমাইলের মতো তুমি যদি ডেইরি ফার্ম দিতে চাও সেক্ষেত্রে তুমি কীভাবে অগ্রসর হবে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ) জনাব ইসমাইলের মতো আত্মকর্মসংস্থানকারী কীভাবে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


২। মি. সাকিব খান একজন শিক্ষিত তরুণ। কর্মসংস্থানের জন্য তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসায় স্থাপন করেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। পারিপার্শ্বিক ব্যবসায়িক বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাগুলো বিশ্লেষণ করে তিনি নিজ শহরে ফটো-স্টুডিও- এর ব্যবসায় স্থাপন করেন। ব্যবসায়ের সার্বিক দেখাশোনা তিনি নিজেই করেন। তিনি একজন দক্ষ ফটোগ্রাফার ও একজন কর্মচারি নিয়োগ করেন। ছবি প্রিন্ট থেকে শুরু করে সব কাজ তিনি নিজস্ব স্টুডিওতে সম্পন্ন করেন। এ সকল কাজ সম্পন্ন করতে তিনি ব্যক্তিগত ও পেশাগত কিছু কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
ক) ক্ষুদ্র ব্যবসায় বা শিল্প বলতে কী বোঝায়?
খ) মি. সাকিব খানের ব্যবসায়টি কোন প্রকৃতির এবং কেন তা উল্লেখ কর।
গ) মি. সাকিব ব্যবসায় শুরু করার জন্য বিরাজমান সুযোগসমূহের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করেন কীভাবে?
ঘ) ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তা মি. সাকিব সচরাচর যেসব ব্যক্তিগত ও পেশাগত অসুবিধা মোকাবিলা করেন সেগুলো বিশ্লেষণ কর।
Previous Post Next Post

نموذج الاتصال