: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর :-
১. পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের নাম লিখ।উত্তর ঃ ইসলাম পাঁচটি রুকনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি রুকন হল সালাত বা নামায। একজন মুসলমানকে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে হয়। আর এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের জন্য নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। সময়মত সালাত আদায় করা মুমিনের ওপর ফরজ। আল্লাহ বলেন-
অর্থ:- “সঠিক সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনের জন্য ফরজ”।
অর্থাৎ- পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের নাম হলো- ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব ও এশা। আমরা সতর্কতার সাথে সঠিক সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করব। তাহলেই আমরা পরকালে জান্নাত লাভ করতে পারব।
২. তাহারাত সম্পর্কে মহানবি (স) কী বলেন?
উত্তর ঃ তাহারাত ( ) আরবি শব্দ। এর অর্থ পবিত্রতা। পাক-পবিত্র থাকাকেই তাহারাত বলে। যেমন : ওযু করা, গোসল করা, তায়াম্মুম করা ইত্যাদি। যারা পাকসাফ থাকে, পরিষ্কার পোশাক পরে, তাদের সবাই ভালোবাসে। সবাই তাদের আদর করে। পাকসাফ থাকলে দেহমন ভালো থাকে। লেখাপড়ায় মন বসে। আল্লাহ খুশি হন। তাহারাত সম্পর্কে মহানবি (স) বলেন-
অর্থ : পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ”।
সুতরাং আমরা সর্বদা পাক-পবিত্র থাকব।
৩. আসসালাতু খাইরুম মিনান নাওম অর্থ কী?
উত্তর ঃ সালাত জামাতের সাথে আদায় করতে হয়। জামাতের সাথে সালাত আদায় করলে সাতাশ গুণ বেশি সওয়াব হয়। মহানবি (স) জামাতে সালাত আাদায় করতে তাগিদ দিয়েছেন। জামাতে সালাত আদায়ের জন্য কীভাবে ডাকতে হয় কেউ তা জানত না। মহান আল্লাহ স্বপ্নের মাধ্যমে তা জানিয়ে দিয়েছেন।
ফজরের আযানে হাইইয়া আলাল ফালাহ্- এর পর গুম ভাঙানোর ডাক দেয়া হয়। বলতে হয়
অর্থ : ঘুম থেকে সালাত উত্তম, ঘুম থেকে সালাত উত্তম।
আযানের এই মর্মস্পর্মী ডাক শুনে কোনো মুমিন ব্যাক্তি বসে থাকতে পারে না। ফজরের আযান সম্পর্কে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন:
বাজল কিরে ভোরের শানাই
নিদমহলা আঁধার পুরে।
শুনাই আযান গগনতলে
অতীত রাতের মিনার চূড়ো॥
৪. মাগরিব নামাজের ওয়াক্ত কখন শুরু ও শেষ হয়?.
উত্তর ঃ ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে ইমানের পরেই সালাতে স্থান। একজন মুসলমানদের দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে হয়। এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের জন্য নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। সঠিক সময়ে সালাত আদায় না করলে তা আদায় হয় না। আল্লাহ বলেন-
অর্থ:- “সঠিক সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনের জন্য ফরজ”।
সূর্য ডোবার পর মাগরিব নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। পশ্চিম আকাশে আলোর লাল আভা মুছে যাওয়ার সাথে সাথে তা শেষ হয়। সুতরাং- আমরা সঠিক সময়ে সালাত আদায় করব।
৫. ঈদের দিনে সুন্নত কাজগুলো কী কী?
উত্তর ঃ ঈদ ( ) আরবি শব্দ। এর অর্থ আনন্দ বা খুশি। মুসলমানগণ বছরে দুইটি ঈদ পালন করেন। একটি হল ঈদুল ফিতর বা রমযানের ঈদ অপরটি হল ঈদুল আজহা বা কুবানির ঈদ। মহানবি (স) বলেছেন প্রত্যেক জাতির ধর্মীয় উৎসব রয়েছে, আর আমাদের ধর্মীয় উৎসব হলো ঈদ। ঈদের দিন হলো মুসলমানদের মহামিলন ও জাতীয় খুশির দিন। এ দিনের সুন্নাত কাজগুলো হলো :
(ক) গোসল করা।
(খ) সুগন্ধি ব্যবহার করা।
(গ) পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন কাপড় পরা।
(ঘ) সালাত আদায়ের পূর্বে মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়া।
(ঙ) ঈদগাহে গিয়ে ঈদের সালাত আদায় করা।
(চ) ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবির বলতে বলতে যাওয়া।
(ছ) এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে আসা।
আমরা নিজে ঈদের সুন্নতগুলো পালন করব এবং অন্যকে পালক করতে উৎসাহিত করব।
১. এবাদত শব্দের অর্থ কী? এবাদত কাকে বলে?
উত্তর ঃ এবাদত ( ) আরবী শব্দ। এর অর্থ গোলামি করা, মালিকের কতামতো চলা। আল্লাহ তায়লা ও তাঁর রসুল (স) এর কথামতো কাজ করাকে এবাদত বলে। এবাদত শব্দটির অর্থ ব্যপক। যেমন : সালাত আদায় করা, কুরআন মজিদ তিলাওয়াত করা, রোগীর সেবা করা, কথা বলার সময় সত্য কথা বলা সব কিছুই এবাদত।
আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে বলেন-
অর্থ : “আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এজন্য যে, তারা শুধু আমারই এবাদত করবে।”
এর অর্থ হলো :
(ক) আমরা কেবল আল্লাহ তায়ালার গোলামি করব, অন্য কারো নয়।
(খ) আমরা কেবল আল্লাহ তায়ালার আদেশমতো চলব, অন্য কারো নয়।
(গ) কেবলমাত্র তাঁরই সামনে মাতানত করব, অন্য করো নয়।
(ঘ) কেবলমাত্র তাঁকেই ভয় করব, অন্য কাউকে নয়।
(ঙ) কেবলমাত্র তাঁর সাহায্য চাইব, অন্য করো কাছে নয়।
এই পাঁচটি জিনিসকে আল্লাহ তায়ালা বুঝিয়েছেন এবাদত শব্দ দ্বারা।
আমাদের প্রিয় নবি (স) এবং তাঁর পূর্ববর্তী সকল নবির শিক্ষার সারকথা হলো, “আল্লাহ ছাড়া আর কারো এবাদত কর না” আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপর বিভিন্ন এবাদত ফরজ করেছে। যেমন : সালাত, সাওম, যাকাত ও হজ ইত্যাদি।
২. ওযুর ফরজ কয়টি ও কী কী?
উত্তর ঃ কুরআন মজদে আল্লাহ তায়ালা সালাত আদায়ের আগে ওযু করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাকসাফ ও পবিত্র থাকার অনেক নিয়ম আছে । ওযু তার মধ্যে একটি উত্তম নিয়ম। সালাতের আগে ওযু করা ফরজ। ওযু ছাড়া সালাত আদায় হয় না। ওযুর ফরজ চারটি। যথা:
(ক) মুখমন্ডল ধোয়া।
(খ) কনুইসহ উভয় হাত ধোয়া।
(গ) চার ভাগের এক ভাগ মাথা মাসাহ করা।
(ঘ) গিরাসহ উভয় পা ধোয়া
এগুলো কোনো একটি বাদ পড়লে ওযু হয় না। তাই এগুলো আদায়ের ব্যাপারে আমার খুবই সাবধান থাকব।
৩. গোসলের ফরজ কয়টি ও কী কী?
উত্তর ঃ গোসলুন ( ) আরবি শবদ। এর অর্থ ধৌত করা। সুস্থ শরীর ও সুন্দর মনের জন্য পাকসাফ থাকার প্রয়োজন। কিন্তু নানা কাজে নানাভাবে শরীর ময়লা হয়, অপবিত্র হয়। তাই অস্বস্তি লাগে। এই ময়লা ও অপবিত্রতা দূর করার উত্তম উপায় হলো গোসল করা। পানি দিয়ে সারা শরীর ধোয়াকে গোসল বলে। গোসলের ফরজ তিনটি। যথা:-
(ক) গড়গড়সহ কুলি করা।
(খ) পানি দিয়ে ভালোভাবে নাক সাফ করা।
(গ) পানি দিয়ে সারা শরীর ধোয়া।
৪. আযানের গুরুত্ব বর্ণনা কর।
উত্তর ঃ সালাত জামাতের সাথে আদায় করতে হয়। মহানবি (স) জামাতে সালাত আদায় করতে তাগিদ দিয়েছেন। জামাতে সালাত আদায়ের জন্য কীভাবে ডাকতে হয় কেই তা জানতো না। মহানবি (স) সাহাবিদের নিয়ে একটি পরামর্শ বসলেন, আলোচনা চলল। কেউ বললেন, সালাতের সময় হলে ঘন্টা বাজানো হোক। কেউ বললেন, শিঙ্গার ফুঁ দিয়ে ডাকা হোক। কেউ বললেন, আগুন জ্বালানো হোক। আরও অনেকেই অনেক কথা বললেন? আশ্চর্যের কথা, হযরত উমর (রা)ও একই স্বপ্ন দেখেন। বাক্যগুলো মহানবি (স) এর খুব পছন্দ হলো। তিনি বললেন, ‘এটা মহান আল্লাহরই নির্দেশ।’ মহানবি (স) হযরত বিলাল (রা) কে আযান দিতে বললেন। হযরত বিলালের কণ্ঠে ধ্বনিত হলো প্রথম আযান। হযরত বিলাল হলেন ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন।
৫. সালাতের আহকাম কয়টি ও কী কী লিখ।
উত্তর ঃ সালাত শুরুর আগে সাতটি ফরজ কাজ করতে হয়। এগুলোকে বলে সালাতের আহকাম। আহকাম ঠিকমত না পালন করলে সালাত আদায় হয় না। যথ:-
(ক) শরীর পাক হওয়া।
(খ) কাপড় পাক হওয়া।
(গ) সালাতের জায়গা পাক হওয়া।
(ঘ) সতর ঢাকা।
(ঙ) কেবলামুখি হওয়া।
(চ) নিয়ত করা।
এগুলোর কোনো একটি বাদ পড়লে সালাত আদায় হয় না। তাই এগুলো আদায়ের ব্যাপারে খুবই সাবধান থাকব।
৬. সালাতের আরকান কয়টি ও কী কী?
উত্তর ঃ সালাতের ভিতরে সাতটি ফরজ কাজ আছে। এগুলোকে বলে সালাতের আরকান। যথা:-
(ক) তকবির-ই-তাহরিমা বা আল্লাহু আকবার বলে সালাত শুরু করা।
(খ) কিয়াম অর্থাৎ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা। তবে কোনো কারণেঁ দাঁড়াতে অক্ষম হলে বসে, এমনকি শুয়েও সালাত আদায় করা যায়।
(গ) কেরাত অর্থাৎ কুরআন মজিদের কিছু অংশ তিলাওত করা।
(ঘ) রুকু করা।
(ঙ) সেজদা করা।
(চ) শেষ বৈঠকে বসা।
(ছ) সালামের মাধ্যমে সালাত শেষ করা।
৭. সালাতের সামাজিক গুণাবলি বর্ণনা কর।
উত্তর ঃ প্রতিদিন পাঁচবার মসজিদে জামাত হয়। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে আরও বড় আকারে জামে মসজিদে জুমার জামাত হয়। শুক্রবারে জুমার সালাতের জন্য অনেক মুসল্লির সমাবেশ ঘটে। পাড়ার, মহল্লার লোকজন একসাথে সালাত আদায় করেন এতে পরস্পর দেখা-সাক্ষাত হয়, কুশলদি জানা যায়। সুখে-দুঃখে একে অন্যের সাহায্য-সহযোগিতার সুযোগ হয়।
৮. ঈদের সালাত আদায়ের নিয়ম লিখ।
উত্তর ঃ প্রথমে কাতার কনের ইমামের পিছনে দাঁড়াব। নিয়ত করব। আল্লাহু আকবর বলে কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে তহরিমা বাঁধব। সানা পাঠ করব। এরপর কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে ইমামের সাথে তিন তকবির দেব। প্রথম দুইবার হাত না বেঁধে ছেড়ে রাখব। তৃতীয় তকবির দিয়ে সালাতে হাত বাঁধব। এরপর ইমাম সাহেব অন্যান্য সালাতের মতো সূরা ফাতিহা ও যে কোন সূরা পাঠ করবেন এবং যথারীতি রুকু সিজদা করে প্রথম রাকাত শেষ করবেন। অতঃপর দ্বিতীয় রাকাতে ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহা ও যে কোনো সূরা পাঠ করবেন। এর পর তিন তকবির দেবেন। আমরাও তিনবার আল্লাহু আকবর বলব। তিনবারই কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে নামিয়ে রাখব, হাত বাঁধব না। পরে চতুর্থবার আল্লাহু আকবার বলে রুকু করব। এবং অন্যান্য সালারে মতো সিজদা করব, তশাহহুদ , দরুদ, দোয়া মাসুরা পাঠ করে ইমামের সাথে সালাম ফিরাব। সালাত শেষে ইমাম সাহেব দুইটি খুতবা দেবন। খুতবা শোনা ওয়াজিব।
৯. ঈদের সালাতের সামাজিক তাৎপর্য লিখ।
ঈদ ( ) অর্থ আনন্দ। দীর্ঘ একমাস রোজা রাখার তৌফিক দানের জন্য মুসলিম গন শাওয়াল মাসের প্রথম দিন আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একে বলে ঈদুল ফিতর। এটি নিছক আনন্দ উৎসবের দিন নয়। এদিন পাড়া-প্রতিবেশী, গরিব-দুঃখীর খোঁজখবর নিতে হয়। বিধবা, এতিম, সকলের মুখে সাধ্যমতো হাসি ফুটানোর চেষ্টা করতে হয়। ধনীদের উপর এ দিন সাদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। কারণ আনন্দের দিন যাতে কেউ অভুক্ত না থাকে। ঈদের দিনে রোজা রাখা হারাম। আরেকটি হল কুরবানির ঈদ সেদনি সালাত শেষে কোরবানি করতে হয়। কোরবানির গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজের জন্য রাখব, একভাগ আত্মীয়দের মাঝে বিতরণ করব, আরেক ভাগ গরিবদে মাঝে বন্টন করব। এভােেব ঈদের খুশিতে সবাই শরিক হতে পারে। এতে সমাজে মধুর সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
আমরা ঈদের এ মহান শিক্ষা নিজেদের জীবনে বাস্তাবায়িত করব। সবার সঙ্গে মিলেমিশে ঈদের আনন্দ উপভোগ করব। ঈদের এ শিক্ষাকে সমাজে ছড়িয়ে দেব।