শ্রণি : চতুর্থ বিষয় : ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা, প্রথম অধ্যায়

ইমান ও আকাইদ

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর:

১। আল্লাহ তায়ালার পাঁচটি গুণের নাম লিখ।
উত্তর: মহান আল্লাহ অসংখ্য গুণাবলির অধিকারী। মহান আল্লাহর ৯৯টি গুণবাচক নাম রয়েছে। মহন আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, বিধানদাতা, শান্তিদাতা, পরম দয়ালু ইত্যাদি। এ সকল গুণবাচক নাম দ্বারা আল্লাহকে ডাকলেই তিনি বান্দার ডাকে সাড়া দেন। নি¤েœ মহান আল্লাহর পাঁচটি গুণবাচক নামের বর্ণনা দেওয়া হলো:
ক) আল্লাহু খালিকুন: আল্লাহু খালিকুন অর্থ আল্লাহ সৃষ্টিকর্ত। পৃথিবী ও আকাশ এ দুয়ের মাঝে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন।
খ) আল্লাহু মালিকুন: আল্লাহু মালিকুন অর্থ আল্লাহ অধিপতি। আল্লাহ তায়ালা সব কিছুর মালিক। কুরআন মাজিদে আছে আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সব কিছুর মালিক আল্লাহ।
গ) আল্লাহু কাদীরুন: আল্লাহু কাদীরুন আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনিই সীমাহীন শক্তির অধিকারী।
ঘ) আল্লাহু সালামুন: আল্লাহু সালামুন অর্থ আল্লাহ শান্তিদাতা। তিনি যাকে শান্তি দেন সেই শান্তি পায়।
ঙ) আল্লাহু হাকিমুন: আল্লাহু হাকিমুন অর্থ আল্লাহ বিধানদাতা, হুকুমদাতা। আদেশ-নিষেধ দানের মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা।

২। ইমান মুফাসসালে কয়টি বিষয়ের উল্লেখ আছে?
উত্তর: ইমান অর্থ বিশ্বাস। আর মুফাস্সাল অর্থ বিস্তারিত। ইমান মুফাস্সাল অর্থ বিস্তারিত বিশ্বাস। আমরা মুমিন। ইসলামের কতকগুলো মূল বিষয়ের উপর আমাদের ইমান আনতে হয়। আমরা এর আগে যে বিষয়গুলোতে সংক্ষিপ্ত কথায় স্বীকার করেছি, এখন সে বিষয়গুলোকে বিস্তারিত ভাবে জানব। বিস্তারিতভাবে স্বীকার করব। সে জন্য একে বলা হয় ইমান মুফাস্সাল।
ইমান মুফাস্সালে আমরা সাতটি বিষয়ের উপর ইমান আনি। বিষয়গুলো হলো:
ক) আল্লাহ, খ) ফেরেশতা, গ) কিতাব, ঘ) রসুলগণ, ঙ) শেষ দিবস, চ) তকদির, ছ) মৃত্যুর পর পুনরুত্থান।

৩। চারজন প্রসিদ্ধ ফেরেশতার নাম লিখ।
উত্তর: ফেরেশতাগণ আল্লাহ তায়ালার বিশেষ সৃষ্টি। তাঁরা নূরের তৈরি। নূর মানে আলো। তাঁরা আল্লাহর আদেশে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। তাঁরা কখনো আল্লাহর হুকুম অমান্য করেন না। তাঁদের পানাহারের প্রয়োজন নেই। আল্লাহর জিকিরই তাঁদের জীবিকা। তাঁদের সংখ্যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। চারজন ফেরেশতা খুব প্রসিদ্ধ। প্রসিদ্ধ চারজন ফেরেশতার নাম হলো:
ক) হযরত জিবরাইল (আ), খ) হযরত মিকাইল (আ), গ) হযরত আযরাইল (আ), ঘ) হযরত ইসরাফিল (আ)।
এই প্রসিদ্ধ চার ফেরেশতাসহ আমরা সকল ফেরেশতাগণের উপর বিশ্বাস করব।

৪। চারখানা বড় কিতাবের নাম লিখ।
উত্তর: আল্লাহ তায়ালা নবি-রসুলের কাছে ওহি পাঠিয়েছেন। ওহি হলো আল্লাহর বাণী। আল্লাহর বাণীসমূহের সমষ্টিকে বলে আসমানি কিতাব। আসমানি কিতাবে আছে মানুষের জন্য হিদায়েত। মুক্তির কথা।
আসমানি কিতাব হলো ১০৪ খানা। ৪ খানা বড়। আর ১০০ খানা ছোট। ছোট কিতাবকে সহীফা বলে। সহীফা মানে পুস্তিকা।
৪ খানা বড় কিতাব হলো:
ক) তাওরাত, খ) যাবূর, গ) ইনজিল, ঘ) কুরআন মজিদ।
আমরা জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে আসমানি কিতাবের বিধান অনুযায়ী চলব।

৫। দশজন নবি-রসুলের নাম লিখ।
উত্তর: মহান আল্লাহ মানুষের হিদায়েতের জন্য ওহি পাঠিয়েছেন। ওহি আসত নবি-রসুলগণের কাছে। নবি-রসুলগণ মানুষের শিক্ষক। তাঁরা আদর্শ শিক্ষক। তাঁরা ছিলেন নিঃস্বার্থ মানবদরদি। তাঁরা মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকতেন। তাঁকে খুশি করার পথ দেখাতেন। কিতাবে বিশ্বাস করা যেমন ইমানের অঙ্গ, নবি-রসুলে বিশ্বাস করাও তেমনি ইমানের অঙ্গ।
প্রথম নবি হলেন হযরত আদম (আ)। আর শেষ নবি হলেন হযরত মুহাম্মদ (স)। এ দুজনের মাঝে অনেক নবি-রসুল এসেছেন। আল্লাহ বলেনÑ

অর্থÑ “এমন কোনো জনপদ নেই যেখানে আমি কোনো নবি পাঠাইনি।”
কুরআন মজিদে ২৫ জন নবি-রসুলের নাম উল্লেখ আছে। তার মধ্যে থেকে নিচে ১০ জন নবি-রসুলের নাম দেওয়া হলো: হযরত আদম (আ), হযরত ইদরীস (আ), হযরত নূহ (আ), হযরত ইবরাহীম (আ), হযরত ইসমাঈল (আ), হযরত দাঊদ (আ), হযরত সুলাইমান (আ), হযরত মূসা (আ), হযরত ঈসা (আ), হযরত মুহম্মদ (স)।
আমরা সকল নবি-রসুলগণে বিশ্বাস করব, সম্মান করব ও তাঁদের আদর্শ মেনে চলব।

৬। আসমানি কিতাব কত খানা?
উত্তর: আল্লাহ তায়ালা নবি-রসুলের কাছে ওহি পাঠিয়েছেন। ওহি হলো আল্লাহর বাণী। আল্লাহর বাণীসমূহের সমষ্টিকে বলে আসমানি কিতাব। আসমািন কিতাবে আছে মানুুষের জন্য হিদায়েত। মুক্তির কথা।
আসমানি কিতাব হলো ১০৪ খানা। ৪ খানা বড়। আর ১০০ খানা ছোট। ছোট কিতাবকে সহীফ বলে। সহীফ মানে পুস্তিকা।

৭। ছোট কিতাবকে কী বলে?
উত্তর: আল্লাহ তায়ালা নবি-রসুলের কাছে ওহি পাঠিয়েছেন। ওহি হলো আল্লাহর বাণী। আল্লাহর বাণীসমূহের সমষ্টিকে বলে আসমানি কিতাব। আসমানি কিতাবে আছে মানুষের জন্য হিদায়েত। মুক্তির কথা।
আসমানি কিতাব হলো ১০৪ খানা। ৪ খানা বড়। আর ১০০ খানা ছোট। ছোট কিতাবকে সহীফ বলে। সহীফ মানে পুস্তিকা।

৮। সর্বশেষ নবি কে?
উত্তর: মহান আল্লাহ মানুষের হিদায়েতের জন্য ওহি পাঠিয়েছেন। ওহি আসত নবি-রসুলগণের কাছে। নবি-রসুলগণ মানুষের শিক্ষক। তাঁরা আদর্শ শিক্ষক। তাঁরা ছিলেন নিঃস্বার্থ মানবদরদি। তাঁরা মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকতেন। তাঁকে খুশি করার পথ দেখাতেন। কিতাবে বিশ্বাস করা যেমন ইমানের অঙ্গ, নবি-রসুলে বিশ্বাস করাও তেমনি ইমানের অঙ্গ।
প্রথম নবি হলেন হযরত আদম (আ)। আর শেষ নবি হলেন হযরত মুহাম্মদ (স)। এ দুজনের মাঝে অনেক নবি-রসুল এসেছেন। আল্লাহ বলেনÑ

অর্থÑ “এমন কোনো জনপদ নেই যেখানে আমি কোনো নবি পাঠাইনি।”
আমরা সকল নবি-রসুলগণে বিশ্বাস করব, সম্মান করব ও তাঁদের আদর্শ মেনে চলব।

৯। সর্বশেষ আসমানি কিতাব কী?
উত্তর: আল্লাহ তায়ালা নবি-রসুলের কাছে ওহি পাঠিয়েছেন। ওহি হলো আল্লাহর বাণী। আল্লাহর বাণীসমূহের সমষ্টিকে বলে আসমানি কিতাব। আসমািন কিতাবে আছে মানুুষের জন্য হিদায়েত। মুক্তির কথা।
আসমানি কিতাব হলো ১০৪ খানা। ৪ খানা বড়। আর ১০০ খানা ছোট। সর্বশেষ আসমানি কিতাব হলোÑকুরআন মজিদ। যা অবতীর্ণ হয়েছিল সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবি হযরত মুহাম্মদ (স) এর উপর। এতে আছে কেয়ামত পর্যন্ত বিশ্বের সকল মানুষের সব সমস্যার সমাধান, ভালো হওয়ার শিক্ষা। আমরা সকল কিতাবে বিশ্বাস করব। আর কুরআন মজিদের শিক্ষা মেনে চলব।

বর্ণনামূলক প্রশ্নাত্তর

১। সংক্ষেপে আল্লাহর পরিচয় দাও।
উত্তর: আমরা মানুষ। আমরা নিজে নিজে সৃষ্টি হই নি। আমাদের সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহ। আমরা যে পৃথিবীতে বাস করছি তাও নিজে নিজে সৃষ্টি হয় নি। এ সুন্দর পৃথিবীও সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তায়ালা। আমাদের জন্য যা যা প্রয়োজন সেসবও তিনিই সৃষ্টি করেছেন। কত বিশাল এই পৃথিবী। এতে আছে পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, খাল-বিল ও গাছপালা। আছে নানারকম ফলফলাদি ও ফুল-ফসল। আরও আছে নানারকম পশুপাখি ও জীবজন্তু। এসবই সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহ।
আমাদের মাথার উপর আছে দিগন্ত জোড়া বিশাল আকাশ। আকাশে আছে চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র। পৃথিবীর চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণ বড় একটি নক্ষত্র। আরও আছে অসংখ্য ছায়াপথ। আর নীহারিকা পুঞ্জ। একসময় এসব কিছুই ছিল না। এসবও সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহ। তিনি সকল সৃষ্টির মালিক। তিনি সর্বশক্তিমান। মহান আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়। তাঁর কোনো শরিক নেই। তাঁর সত্তার ও গুণের সাথে তুলনা করা যায় এমন কোনো কিছুই নেই। তিনি অনাদি, অনন্ত।

২। আল্লাহ তায়ালার কয়েকটি গুণের নাম লিখ।
উত্তর: মহান আল্লাহ অসংখ্য গুণাবলির অধিকারী। মহান আল্লাহর ৯৯ টি গুণবাচক নাম রয়েছে। মহান আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, বিধানদাতা, শান্তিদাতা, পরম দয়ালু ইত্যাদি। এ সকল গুণবাচক নাম দ্বারা আল্লাহকে ডাকলেই তিনি বান্দার ডাকে সাড়া দেন। নি¤েœ মহান আল্লাহর কয়েকটি গুণবাচক নামের বর্ণনা দেওয়া হলো:
ক) আল্লাহু খালিকুন: আল্লাহু খালিকুন (    ) এটি আরবি শব্দ। এর অর্থ আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা। দুনিয়াতে যা কিছু আছে চন্দ্র, সূর্য, গাছপালা, পশুপাখি, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, খাল-বিল এসব কিছু মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন।
খ) আল্লাহু মালিকুন: আল্লাহু মালিকুন (    ) এটি আরবি শব্দ। এর অর্থ আল্লাহ অধিপতি। আল্লাহ তায়ালা সব কিছুর মালিক। তিনি
সব কিছুর অধিকারী।
গ) আল্লাহু কাদীরুন: আল্লাহু কাদীরুন (          ) এটি আরবি শব্দ। এর অর্থ আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনি যাকে শান্তি দেন সেই শান্তি
পায়। কুড়েঘরে থাকলেও শান্তি পায়। অভাব অনটনের মধ্যে থেকেও শান্তি পায়। শান্তির মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা।
ঘ) আল্লাহু সালামুন: আল্লাহু সালামুন (    ) এটি আরবি শব্দ। এর অর্থ আল্লাহ শান্তিদাতা। তিনি যাকে শান্তি দেন সেই শান্তি পায়।
কুড়েঘরে থাকলেও শান্তি পায়। অভাব অনটনের মধ্যে থেকেও শান্তি পায়। শান্তির মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা।
ঙ) আল্লাহু হাকিমুন: আল্লাহু হাকিমুন (        ) এটি আরবি শব্দ। এর অর্থ বিধানদাতা, হুকুমদাতা। আল্লাহ তায়ালা হুকুমদাত,
বিধানদাতা। আদেশ-নিষেধ দানের মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা।

৩। ‘আল্লাহ সর্বশক্তিমান’ কথাটির অর্থ বুঝিয়ে লিখ।
উত্তরঃ আল্লাহ কাদীরুন (            )। এটি আরবি শব্দ। কাদীর অর্থ সর্বশক্তিমান। তাঁর মতো শক্তি আর কারো নেই। সর্বশক্তিমান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন। পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগর সৃষ্টি করেছেন। গাছপালা, পশুপাখি, জীবজন্তু এসবই তিনি সৃষ্টি করেছেন।
আমাদের মাথার উপর এই আকাশ, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, নীহারিকাপুঞ্জ, ছায়াপথ এসবই সৃষ্টি করেছেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ। আমরা দেখি প্রতিদিন পূর্বদিকে রাঙা করে সূর্য উঠে। দিন হয়। আবার দিন শেষে পশ্চিম আকাশে সূর্য অস্ত যায়। রাত হয়। সর্বশক্তিমান আল্লাহই এ পরিবর্তন করেন। তিনি অসীম শক্তির অধিকারী। তাঁর হুকুমে পৃথিবীর সবকিছু চলে। মহাকাশের সবকিছুই তাঁর হুকুমে চলে। তাঁর ব্যবস্থাপনায় চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র ও নীহারিকাপুঞ্জ আপন কক্ষপথে পরিচালিত হয়। কোথাও কোনো অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা বা সংঘর্ষ দেখা যায় না। মহান আল্লাহ আলো, বাতাস আগুন, পানি সৃষ্টি করেছেন। তাঁর ইচ্ছাতেই মরুভূমির বুকচিরে সুপেয় পানি ঝরণাধারা বেরিয়ে আসে। আমরা মাটিতে বীজ বপন করি, তা হতে চারা গজায়। আলোবাতাস, আগুন-পানি সবকিছুই মহান আল্লাহর শক্তির অধীন।
আল্লাহ শাস্তি দিতে চাইলে কেউ রক্ষা পায় না। তিনি নমরুদ, ফিরাউনের মতো পরাক্রমশালী জালিম শাসকদের ধ্বংস করেছেন।
কুরআন মজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেনÑ
অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।”
আমরা মহান আল্লাহকে সর্বশক্তিমান হিসেবে বিশ্বাস করব। তাঁর কাছেই সাহায্য চাইব। তাঁর উপর ভরসা রাখব।

৪। ‘আল্লাহ শান্তিদাতা’ বাক্যটি বুঝিয়ে লিখ।
উত্তর: আল্লাহু সালামুন (        )। এটি আরবি শব্দ। সালাম অর্থ শান্তি। আল্লাহু সালামুন অর্থ আল্লাহ শান্তিদাতা। আমাদের মন যখন ভালো থাকে, তখন শান্তি লাগে। শরীর ভালো থাকলে মনে শান্তি লাগে।
আমাদের পরিবারে আছেন আব্বা-আম্মা, ভাইবোন, দাদা-দাদী। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে আমরা অস্থির হয়ে পরি। আমাদের শান্তি থাকে না। আমরা তাঁদের সেবা করি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি। তিনি বিপদমুক্ত করেন। আমরা শান্তি পাই। আমরা যখন বন্ধু ও সহপাঠীদের সাথে মিলেমিশে থাকি তখন বালো লাগে। বন্ধু ও সহপাঠীদের সাথে কখনো কখনো ঝগড়া হয়। মন খারাপ হয়। তখন শান্তি লাগে না। তাড়াতাড়ি ঝগড়া মিটিয়ে ফেলব, তা হলে শান্তি লাগবে।
আল্লাহ তায়ালা যাকে শান্তি দেন সেই শান্তি পায়। কুড়েঘরে থাকলেও শান্তি পায়। অভাব-অনটনেও শান্তি থাকে। আল্লাহ শান্তি দিলে কেউ তার ক্ষতি করতে পারে না।
একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই শান্তি দাতা। যারা আল্লাহর হুকুম মেনে চলে তিনি তাদের শান্তি দেন। দুনিয়াতে শান্তি দেন। আখিরাতেও শান্তি দিবেন। তাঁর কাছেই শান্তি চাইব। সবার সাথে শান্তিতে বাস করব। শান্তির পক্ষে কাজ করব।

৫। কালেমা শাহাদত অর্থসহ বাংলায় লিখ।
উত্তরঃ কালিমাতু শাহাদাতিন (            )। কালেমা অর্থ বাক্য শাহাদাত অর্থ সাক্ষ্য দেওয়া। কালেমা শাহাদাত মানে সাক্ষ্য দেওয়ার বাক্য। এই কালো দ্বারা তাওহিদ ও রিসালতের সাক্ষ্য দেই। এ দ্বারা আমরা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকেই মাবুদ হিসেবে স্বীকার করে নেই। হযরত মুহাম্মদ (স) কে আল্লাহর বান্দা ও রসুল হিসেবে সাক্ষ্য দেই। তাওহিদ ও রিসালতের উপর ইমান আনি। এটি ইসলামের মূল বিষয়। কালেমা শাহাদত হলোঃ
প্রথম অংশ: আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকালাহুÑ
অর্থ; আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই।
এই প্রথম অংশ দ্বারা আমরা আমাদের ¯্রষ্টা, পালনকারী, রিজিকদাতা, পরম দয়ালু, একমাত্র আল্লাহকে মাবুদ হিসেবে স্বীকার করে নিই। আর সাক্ষ্য দেইÑ আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ এবাদতের যোগ্য নেই।
দ্বিতীয় অংশ: ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রসুলুহূ।
অর্থ: “আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (স) আল্লাহর বান্দা ও রসুল।”
এই দ্বিতীয় অংশ দ্বারা সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মদ (স) যেমন আল্লাহর বান্দা তেমনি তিনি আল্লাহর রসুল।
মুহাম্মদ (স) আমাদের আল্লাহর পরিচয় জানিয়েছেন। তাঁর বাণী শুনিয়েছেন। আল্লাহর এবাদত করার নিয়ম শিখিয়েছেন। তিনি নিজে আল্লাহর বিধান পালন করে আমাদের তা হাতে-কলমে শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা আল্লাহর পথে চলব। রসুল (স) এর দেখান পথে চলব। তাওহিদ ও রিসালতের বিশ্বাস হলো ইমানের মূলকথা।

৬। ইমান মুজমাল অর্থসহ বাংলায় লিখ।
উত্তরঃ ইমান অর্থ বিশ্বাস। আর মুজমাল অর্থ সংক্ষিপ্ত। ইমান মুজমাল মানে সংক্ষিপ্ত বিশ্বাস। ইসলামের মূল বিষয়গুলোকে সংক্ষেপে বিশ্বাস ও স্বীকার করাকে বলে ইমান মুজমাল। ইমান মুজমাল দ্বারা সংক্ষিপ্ত কথায় ইমানের ঘোষণা দেওয়া হয়।
ইমান মুজমাল: আমান্তু বিল্লাহি কামা হুয়া বিআস্মাইহি, ওয়া সিফাতিহী ওয়া কাবিলতু জামী’আ আহ্কামিহী ওয়া আরকানিহী।
অর্থ আমি ইমান আনলাম আল্লাহর উপর ঠিক তেমনি যেমন আছেন তিনি, তাঁর সব নাম ও গুণাবলিসহ। আর মেনে নিলাম তাঁর সব হুকুম-আহকাম ও বিধি-বিধান।
আমাদের মাবুদ মহান আল্লাহ। তিনি এক, অদ্বিতীয়, অতুলনীয়। তাঁর কোনো শরিক নেই। তাঁর আছে কতগুলো সুন্দর নাম। আল্লাহর সত্তায় যেমন বিশ্বাস করতে হয় তেমনি তাঁর সিফাত বা গুণাবলিতেও বিশ্বাস করতে হয়। তাঁর সত্তার সাথে কারো তুলনা হয় না। তেমনি তাঁর গুণের সাথে তুলনা করা যায় এমন কোনো কিছুই নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেনÑ
অর্থঃ “তাঁর মতো কোনো কিছুই নেই।”
আমরা আল্লাহ তায়ালার সত্তায় ও গুণাবলিতে বিশ্বাস করব। মহান আল্লাহর বিধি-বিধান ও আদেশ-নিষেধ মেনে নেব।

৭। ইমান মুফাসসালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর নাম লিখ।
উত্তর: ইমান (        ) অর্থ বিশ্বাস। আর মুফাস্সাল (        ) অর্থ বিস্তারিত। ইমান মুফাস্সাল অর্থ বিস্তারিত বিশ্বাস। আমরা মুমিন। ইসলামের কতকগুলো মূল বিষয়ের উপর আমাদের ইমান আনতে হয়।
ইমান মুফাস্সালে আমরা সাতটি বিষয়ের উপর ইমান আনি। বিষয়গুলো হলো:
ক) আল্লাহ: ইমানের প্রথম কথা হলো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস। আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ তার সত্তায় ও গুণাবলিতে এক ও অদ্বিতীয়। তিনি অনাদি, অনন্ত।
খ) ফেরেশতা: ফেরেশতা গণ আল্লাহর তায়ালার বিষেশ সৃষ্টি। তাঁরা নূরের তৈরি। নূর মানে আলো। তাঁরা আল্লাহর আদেশে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। তাঁদের সংখ্যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা।
গ) কিতাব: আল্লাহ নবি-রসুলের কাছে ওহী পাঠিয়েছেন। ওহী হলো আল্লাহর বাণী। আল্লাহর বাণী সমূহের সমষ্টিকে বলে আসমানি কিতাব। আসমানি কিতাব ১০৪ খানা।
ঘ) রসুলগণ: মানুষের হেদায়েতের জন্য আল্লাহ বহু নবি-রসুল পাঠিয়েছেন। তাঁরা ছিলেন মানুষের শিক্ষক ও নিঃস¦ার্থ মানবদরদি।
ঙ) শেষ দিবস: যার জীবন আছে তার মৃত্যু আছে। মৃত্যুই শেষ কথা নয়। মৃত্যুর পর আরও এক জীবন আছে। একে বলে আখিরাত। আখিরাত মানে পরকাল। এই জীবন অনন্তকালের জীবন।
চ) তকদির: তকদির মানে ভাগ্য। আমাদের ভগ্যের নিয়ন্ত্রণকারী আল্লাহ্ তায়ালা। আল্লাহর হুকুমে ভাল-মন্দ হয়ে থাকে এর উপর বিশ্বাস করতে হবে।
ছ) মৃত্যুর পর পুনরুত্থান: মৃত্যই আমাদের শেষ কথা নয়। ইহকালে আমরা যেসব কাজ করি তার জবাবদিহি করতে হবে পরকালে। সকলকে আবার জীবিত করে হাশরের দিনে উঠানো হবে। একেই বলে পুনরুত্থান।
আমরা মুফাস্সালের বিষয়গুলো মনে প্রাণে বিশ্বাস করব এবং সে অনুসারে জীবন যাপন করব।

৮। আল্লাহর উপর বিশ্বাস কথাটি বুঝিয়ে লিখ।
উত্তর: ইমানের প্রথম কথাই হলো আল্লাহর উপর বিশ্বাস। আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ তাঁর সত্তায় এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোনো শরিক নেই। তিনি তাঁর গুণাবলিতেও অদ্বিতীয় ও অতুলনীয়। তিনি অনাদি, অনন্ত। তিনিই প্রথম, তিনিই শেষ। যখন কোনো কিছুই ছিল না তখন ছিলেন তিনি। আবার একদিন সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে তখন তিনিই থাকবেন। মহান আল্লাহর সবকিছু জানেন, সবকিছু শোনেন ও দেখেন। আসমান জমিনের সবকিছু তাঁর সৃষ্টি। তিনি সকল সৃষ্টির পালনকারী। তিনি পরম দয়ালু। তিনিই সবকিছুর মালিক। আমরা ভালো কাজ করলে তিনি খুশি হন। মন্দ কাজ করলে অসন্তুষ্ট হন। আমরা আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ভালো কাজ করব।

৯। প্রসিদ্ধ ফেরেশতাদের নাম ও তাঁদের কাজ বর্ণনা কর।
উত্তরঃ ইমানের দ্বিতীয় বিষয় হল মালাইকা বা ফেরেশতাগণে বিশ্বাস। ফেরেশতাগণ আল্লাহ তায়ালার বিশেষ সৃষ্টি। তাঁরা নূরের তৈরি। নূর মানে আলো। তাঁরা আল্লাহর আদেশে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। তাঁরা কখনো আল্লাহর হুকুম অমান্য করেন না। তাঁদের পানাহারের প্রয়োজন নেই। আল্লাহর জিকিরই তাঁদের জীবিকা। তাঁদের সংখ্যা আল্লাহ ছাড়া কেই জানে না। চারজন ফেরেশতা খুব প্রসিদ্ধ।
ক) হযরত জিবরাইল (আ): তিনি নবি-রসুলগণের কাছে আল্লাহর ওহি নিয়ে আসতেন। ওহি মানে আল্লাহর বাণী।
খ) হযরত মিকাইল (আ): তিনি জীবের জীবিকা বণ্টন ও মেঘবৃষ্টির দায়িত্বে নিয়োজিত।
গ) হযরত আযরাইল (আ): তিনি আল্লাহর হুকুমে জীবের জান কবজ করেন।
ঘ) হযরত ইসরাফিল (আ): তিনি শিঙ্গা হাতে আল্লাহর আদেশের অপেক্ষায় আছেন। তিনি প্রথম ফুঁ দেবেন, তাতে সকল সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যাবে। দ্বিতীয় ফুঁ দেবেন তখন সবকিছু জীবন ফিরে পাবে।
একদল ফেরেশতা আছেন, যারা মানুষের ভালো-মন্দ কাজের হিসেব রাখেন। তাদের বলে কিরামান কাতিবিন। মানে সম্মানিত লেখকগণ। মুনকির-নকির নামে আরও একদল ফেরেশতা আছেন। তারা কবরে প্রশ্ন করবেন। প্রশ্ন করবেনÑআল্লাহ, রসুল ও দীন সম্বন্ধে। আল্লাহর অনুগত বান্দারা এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।

১০। আসমানি কিতাব কাকে বলে? সর্বশেষ আসমানি কিতাবের সংক্ষেপে বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ ইমানের তৃতীয় বিষয় হল আসমানি কিতাবে বিশ্বাস। আল্লাহ তায়ালা নবি-রসুলের কাছে ওহি পাঠিয়েছেন। ওহি হলো আল্লাহর বাণী। আল্লাহর  বাণীসমূহের সমষ্টিকে বলে আসমানি কিতাব। আসমানি কিতাবে আছে মানুষের জন্য হিদায়েত। মুক্তির কথা। আসমানি কিতাব হলো ১০৪ খানা। ৪ খানা বড়। আর ১০০ খানা ছোট। ছোট কিতাবকে সহীফা বলে। সহীফা মানে পুস্তিকা।
কুরআন মজিদ সর্বশেষ আসমানি কিতাব। এতে আছে কিয়ামত পর্যন্ত বিশ্বের সকল মানুষের সব সমস্যার সমাধান, ভাল হওয়ার শিক্ষা। মহান আল্লাহ বলেনÑ

অর্থ: “এ তো কুরআন মজিদ লওহে মাহফূযে সংরক্ষিত।”
কুরআন মজিদ আল্লাহ তায়ালার বাণী। আল্লাহ তায়ালা তাঁর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রসুল হযরত মুহাম্মদ (স)Ñএর নিকট ফেরেশতা হযরত জিবরাঈল (আ)Ñএর মাধ্যমে এ কিতাব নাযিল করেন। মহান আল্লাহ মানুষকে সুন্দর ও সঠিক পথ দেখানোর জন্য কুরআন মজিদ নাযিল করেছেন। মানুষ কোন পথে চললে দুনিয়াতে শান্তি পাবে। আখিরাতে কঠিন জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে এবং জান্নাতের পরম সুখ-শান্তি লাভ করবে, তার বর্ণনা রয়েছে কুরআন মজিদে। কুরআন মজিদ সকল প্রকার জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস। এটি মানবজাতির পথ প্রদর্শক।

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال