প্রশ্ন- ১ জন্মভূমির অপরূপ রূপ
আজাদ দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরল। বিদেশের উঁচু উঁচু দালান আর বদ্ধ পরিবেশে তার মন বিষিয়ে উঠেছিল। বিকালবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে গ্রাম দেখতে বের হলো আজাদ। গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ আর নদী তীরের দৃশ্য দেখে তার মন আনন্দে নেচে উঠল। বিকালের মৃদুমন্দ বাতাসে তার ক্লান্ত শরীর জুড়িয়ে গেল। বিদেশের বহুতল ভবন আর সম্পদের প্রাচুর্য তার মনকে ভোলাতে পারেনি। মাতৃভূমির মেঠোপথ আর প্রাকৃতিক শোভা তার মনকে শীতল করেছে। রাতের বেলায় শিশিরভেজা ঘাসের ওপর চাঁদের রুপালি আলোর ঝিলিক দেখে তার চোখ জুড়িয়ে গেল। এমন একটি সুন্দর দেশে সে চিরদিন বেঁচে থাকতে চায়।
ক. কবি তার মাতৃভূমির কী খোঁজেননি? ১
খ. কী দেখে প্রথমেই কবির চোখ জুড়ালো? ২
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘জন্মভূমি’ কবিতার বৈসাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. “উদ্দীপকের সঙ্গে ‘জন্মভূমি’ কবিতার বৈসাদৃশ্য থাকলেও তা একই উৎসমূল থেকে উৎসারিত।” উক্তিটির যথার্থতা বিচার কর। ৪
খ. কী দেখে প্রথমেই কবির চোখ জুড়ালো? ২
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘জন্মভূমি’ কবিতার বৈসাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. “উদ্দীপকের সঙ্গে ‘জন্মভূমি’ কবিতার বৈসাদৃশ্য থাকলেও তা একই উৎসমূল থেকে উৎসারিত।” উক্তিটির যথার্থতা বিচার কর। ৪
উত্তর
ক কবি তার মাতৃভূমির ধনরতœ খোঁজেননি।
খ এদেশের প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে কবি মুগ্ধ। তাই এদেশের সূর্যের উজ্জ্বল আলো প্রথম দেখায় তার চোখ জুড়িয়ে গেল।
কবি জন্মগ্রহণ করে যখন প্রথম চোখ খুলে দেখেছেন জন্মভূমির সূর্য আলোর পসরা সাজিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছে। কবির কাছে জন্মভূমি মায়ের মতো, মায়ের পানে তাকালে সন্তানের হৃদয় যেমন আনন্দে পরিপূর্ণ হয়, চোখ জুড়িয়ে যায়। ঠিক তেমনি জন্মের পর চোখ মেলে যখন দেশমাতার আলো দেখেছেন তখন কবির চোখও একইভাবে জুড়িয়ে গেছে।
গ ‘জন্মভূমি’ কবিতার কবি এবং উদ্দীপকের আজাদের ইচ্ছার দিক দিয়ে বৈসাদৃশ্য সৃষ্টি হয়েছে।
‘জন্মভূমি’ কবিতায় কবি মাতৃভূমিকে ভালোবেসে তার সৌন্দর্য বর্ণনায় মুখরিত হয়েছেন। এই দেশকে তিনি এতই ভালোবাসেন যে এমন সুন্দর দেশে জন্মগ্রহণ করে তিনি গর্ববোধ করেন। তাই কবি এদেশের সুন্দর প্রকৃতির উজ্জ্বল আলোতে চোখ রেখে শেষবারের মতো চোখ বন্ধ করতে চান। অর্থাৎ মৃত্যুবরণ করতে চান।
উদ্দীপকের আজাদ দেশকে ভালোবেসে এ দেশে বেঁচে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। আর আলোচ্য কবিতায় দেশকে ভালোবাসে এ দেশে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগের কথা বলা হয়েছে। মূলত আজাদের জনম জনম বেঁচে থাকার আকাক্সক্ষা ও কবির মৃত্যু কামনার মধ্যে বৈসাদৃশ্য সৃষ্টি হয়েছে।
ঘ “উদ্দীপকের সঙ্গে ‘জন্মভূমি’ কবিতার বৈসাদৃশ্য থাকলেও তা একই উৎস মূল থেকে উৎসারিত” উক্তিটি যথার্থ।
‘জন্মভূমি’ কবিতায় কবি তার জন্মভূমিকে মা বলে সম্বোধন করেছেন। কবি এদেশের প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ। কবি তার দেশকে এতই ভালোবাসেন যে তিনি তার প্রিয় জন্মভূমির উজ্জ্বল আলোতে শেষবারের মতো নয়ন রেখে নয়ন মুদতে চান। এতে কবির মাতৃভূমির প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে।
উদ্দীপকের আজাদও ‘জন্মভূমি’ কবিতার কবির মতো দেশকে ভালোবেসেছে। বহুদিন পর বিদেশ থেকে এসে আজাদ গাঁয়ের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়। গাঁয়ের মেঠো পথ আজাদের মনকে শীতল করে। রাতের শিশির চাঁদের আলোয় হেসে উঠলে তার চোখ জুড়িয়ে যায়। তাই আজাদ এমন একটি সুন্দর দেশে চিরদিন বেঁচে থাকতে চায়।
উদ্দীপক ও আলোচ্য কবিতার মাঝে কিছুটা দ্বন্দ্ব দেখা যায়। কবি যেখানে জন্মভূমির মাটিতে মৃত্যুবরণ করার সাধ ব্যক্ত করেছেন সেখানে আজাদ তার প্রিয় মাতৃভূমিতে চিরদিন বেঁচে থাকার আশা ব্যক্ত করেছেন। আপাতদৃষ্টিতে উভয়ের ইচ্ছার মাঝে দ্বন্দ্ব দেখা গেলেও ভাবগত ও উদ্দেশ্যগত দিক থেকে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কারণ উভয়ই দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে এই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন। তাই আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় উদ্দীপকের সঙ্গে ‘জন্মভূমি কবিতার সাদৃশ্য থাকলেও তা একই মূল উৎসমূল থেকে উৎসারিত।” এ উক্তিটি যথার্থ।
প্রশ্ন- ২ স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা
আমার দেশের মাঠের মাটিতে কৃষাণ দুপুর বেলা,
ক্লান্তি নাশিতে কণ্ঠে যে তার সুর লয়ে করে খেলা,
মুক্ত আকাশ মুক্তমনে সেই গান চলে ভেসে
জন্মেছি মাগো তোমার কোলেতে মরি যেন এই দেশে।
ক. ‘জন্মভূমি’ কবিতায় কবি জন্মভূমিকে কী বলে সম্বোধন করেছেন? ১
খ. কবির জনম সার্থক মনে করেন কেন? ২
গ. উদ্দীপকের প্রথম দুই চরণ ‘জন্মভূমি’ কবিতার কোন দিকটিকে প্রকাশ করেছে- ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. ‘উদ্দীপকের শেষ চরণ যেন সত্যিকারের দেশপ্রেমিকের মনোভাবকেই ধারণ করেছে।’ উক্তিটি ‘জন্মভূমি’ কবিতার আলোকে মূল্যায়ন কর। ৪
খ. কবির জনম সার্থক মনে করেন কেন? ২
গ. উদ্দীপকের প্রথম দুই চরণ ‘জন্মভূমি’ কবিতার কোন দিকটিকে প্রকাশ করেছে- ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. ‘উদ্দীপকের শেষ চরণ যেন সত্যিকারের দেশপ্রেমিকের মনোভাবকেই ধারণ করেছে।’ উক্তিটি ‘জন্মভূমি’ কবিতার আলোকে মূল্যায়ন কর। ৪
উত্তর
ক ‘জন্মভূমি’ কবিতায় কবি জন্মভূমিকে ‘মা গো’ বলে সম্বোধন করেছেন।
খ এদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন বলে কবি নিজেকে সার্থক মনে করেন।
এদেশের শীতল হাওয়া কবির শরীর শীতল করে। জন্মভূমির বনের ফুল, সূর্যের আলো, চাঁদের হাসি সব কিছুই কবিকে আবেগাপ্লুত করে। যা মূলত দেশের প্রতি তার ভালোবাসারই প্রকাশ। তাই এমন একটি সুন্দর দেশে জন্মগ্রহণ করে কবি নিজেকে সার্থক মনে করেন।
গ উদ্দীপকের প্রথম দুই চরণ ‘জন্মভূমি’ কবিতায় প্রকাশিত জন্মভূমির অকৃত্রিম সৌন্দর্য প্রকাশ করেছে।
‘জন্মভূমি’ কবিতায় কবি জন্মভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা দিয়েছেন। উদ্দীপকের প্রথম দুই চরণেও কবি জন্মভূমির অপরূপ সৌন্দর্যের কথাই বলেছেন। কবি এমন একটি সুন্দর দেশে জন্মগ্রহণ করে নিজেকে সার্থক মনে করেন। এদেশের শীতল ছায়া কবির অঙ্গকে শীতল করে। এদেশের বিচিত্র সৌন্দর্যের অফুরন্ত উৎস হচ্ছে বাগানের ফুল, চাঁদের জ্যোৎস্না, সূর্যের আলো- এসব কবিকে মুগ্ধ করে। কবি বাংলার আকাশে উজ্জ্বল চাঁদের আলো দেখে মুগ্ধ। বাংলার রূপ কবিকে বিমোহিত করেছে।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, এদেশে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠে কৃষকরা সারাদিন কাজ করে। তারা পরিশ্রম করে মাঠের মাটিতে সোনার ফসল ফলায়। সঙ্গে সঙ্গে পরিশ্রম লাঘব করার জন্য তারা গান গায়। এটা ফসলের মাঠের সৌন্দর্যের একটা অংশ। উদ্দীপকের এ অংশের সঙ্গে ‘জন্মভূমি’ কবিতায় বর্ণিত সৌন্দর্যের মিল রয়েছে।
ঘ ‘উদ্দীপকের শেষ চরণ যেন সত্যিকারের দেশপ্রেমিকের মনোভাবকেই ধারণ করেছে’ উক্তিটি যথার্থ।
‘জন্মভূমি’ কবিতায় কবি তার দেশকে মায়ের মতো ভালোবেসেছেন। কবি এদেশের রূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন। এ বাংলার স্নিগ্ধ বাতাস কবির অঙ্গ শীতল করেছে। বাংলার প্রকৃতির উজ্জ্বল আলোতে কবির চক্ষু শীতল হয়। জন্মের পরে প্রথম চোখ মেলেই কবি তার দেশের সৌন্দর্য দেখেছেন। দেশকে কবি এতই ভালোবাসেন যে, মৃত্যুর মুহূর্তেও তিনি দেশের রূপসুধা পান করতে করতে মরতে চান।
উদ্দীপকের শেষ দুই চরণে কবি এভাবে দেশকে ভালোবাসার কথাই বলেছেন। একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিকের ঐকান্তিক মনের আকুতি ফুটে উঠেছে এ দুই চরণে। কবি স্বদেশের রূপে মুগ্ধ ও বিমোহিত। এদেশের মাঠে সোনালি ফসল কাটার সময় কৃষকের কণ্ঠ বেয়ে যে সুর বেরিয়ে আসে তা কবিকে আকুল করে। এদেশের মুক্ত আকাশ কবিকে উতলা করে। তাই কবির শেষ ইচ্ছাÑ এমন একটা সুন্দর দেশে যেন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারেন।
একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক তার দেশের মাটিতেই মরতে চান। ‘জন্মভূমি’ কবিতার কবি এবং উদ্দীপকের শেষ চরণেও কবি সত্যিকারের দেশপ্রেমিকের মতো দেশের মাটিতে মরার আশা ব্যক্ত করেছেন। তাই বলা যায়, প্রশ্নোল্লিখিত মন্তব্যটি যথার্থ।
Photo source by Google